1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলার ক্রিকেটার ছাড়াই এবার কেকেআর

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ আগস্ট ২০২০

এবার আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে (কেকেআর) নেই কোনো বাঙালি৷ যে দলের হয়ে বাঙালিরা গলা ফাটাবে, সেখানে থাকছেন না বাংলার কোনো ক্রিকেটার৷ দক্ষতা বা তাগিদের অভাব না বঞ্চনা, কেন ঘরের ছেলেরা বাইরে থেকে যাচ্ছেন?

https://p.dw.com/p/3ha7H
কেকেআর-এর সমর্থকছবি: DW/P. Samanta

এবার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের আসর বসছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে৷ আগামী মাসে শুরু হতে চলা এই প্রতিযোগিতার জন্য কলকাতার যে দল তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলার কোনো ক্রিকেটার নেই৷ নেই বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার৷ অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কলকাতার নামে যে দল, তাতে শহরের কোনো প্রতিনিধিত্ব কেন থাকবে না? যদিও আইপিএলের সঙ্গে স্থানীয় আবেগ মিশিয়ে ফেলতে রাজি নন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেকেআর একটি ফ্র্যানচাইজি৷ অর্থাৎ বেসরকারি কোম্পানি৷ নামে কলকাতা থাকলেও এর সঙ্গে রাজ্যের ক্রিকেটারদের দলের নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই৷’’ একই মত বাংলার ক্রিকেটের প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত থাকা বিশ্বরূপ দে-র৷ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি)-র প্রাক্তন যুগ্ম সচিব বিশ্বরূপ বলেন, ‘‘এটা কোথাও বলা নেই যে আইপিএলের দলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের খেলাতে হবে৷ এখানে রাজ্যের কোনো গণ্ডি নেই৷ ঋদ্ধিমান সাহা দক্ষ ক্রিকেটার, তিনি দেশের যে কোনো দলে খেলতে পারেন৷ আদতে এই ফরম্যাট আবেগের থেকে বেশি বাণিজ্য ও খেলার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে৷’’

নামে কলকাতা থাকলেও এর সঙ্গে রাজ্যের ক্রিকেটারদের দলে নেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই: দীপ দাশগুপ্ত

ক্রীড়া জগতের বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বায়নের ফলে খেলাধুলোয় যে পেশাদারিত্ব এসেছে, সেখানে দক্ষতাই শেষ কথা৷ তাহলে সেখানেই কি ঘাটতি বাঙালিদের? বিশ্বরূপের মন্তব্য, ‘‘বাংলার ক্রিকেটারদের প্রতিভায় ঘাটতি নেই৷ তাঁরা যথেষ্ট দক্ষ৷ কিন্তু তাঁদের খিদে কম৷ একটু সাফল্য পেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট হয়ে যান৷ কিন্তু অন্য রাজ্যের ক্রিকেটাররা সফল হলেও আরো পরিশ্রম করেন৷’’ দীপ দাশগুপ্তের বক্তব্য, ‘‘এখানকার ক্রিকেট যদি খুব খারাপ জায়গায় থাকত, তাহলে শেষ রনজি ট্রফির ফাইনালে বাংলা খেলত না৷ কেকেআর কেন বাংলার ক্রিকেটারদের নেয়নি, সেটা একেবারেই তাদের ব্যাপার৷’’ বাংলায় প্রতিভার ঘাটতি থাকলে ঋদ্ধিমান ছাড়াও মহম্মদ সামি, শ্রীবৎস গোস্বামী, শাহবাজ আহমেদরা অন্য রাজ্যের দলে সুযোগ পেতেন কি, এই প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন কেকেআর তারকা অশোক দিন্দার মত, ‘‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর কলকাতার দলে বাংলার ক্রিকেটারদের সংখ্যা কমতে থাকে৷ ভালো খেললেও কেকেআর এখানকার ক্রিকেটারদের নিতে চায় না৷ পিচ, আবহাওয়া, সমর্থন— ঘরের ছেলে খেলালে কোনো দল অনেক সুবিধা পায়৷’’

বাংলার ক্রিকেটারদের খিদে কম, একটু সাফল্য পেলেই তাঁরা সন্তুষ্ট হয়ে যান: বিশ্বরূপ দে

ফুটবলের ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে এমন ছবি দেখা যেতে পারে৷ আগামী ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে নামবে নবরূপের মোহনবাগান৷ পেশাদারি দল এটিকে মোহনবাগানে অবশ্য বাঙালি ফুটবলাররা এখনো রয়েছেন৷ কিন্তু বেসরকারি সংস্থার মালিকানাধীন হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কেকেআরের ধাঁচ চলে আসছে এখানেও৷ একই পথে চলেছে কলকাতার আরেক প্রধান ইস্টবেঙ্গল৷ অর্থাৎ আগামীতে বাঙালি ফুটবলার ছাড়াই দেশের এই দুই নামজাদা দল মাঠে নামতেই পারে৷ তবে শুধু একে বঞ্চনা বলতে রাজি নন অতীতের প্রখ্যাত ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বঞ্চনা একটা আছেই৷ বাঙালি ফুটবলারদের দিকে ক্লাবের রিক্রুটাররা সেভাবে তাকান না বিভিন্ন সুবিধার জন্য৷ তবে এটাও বলতে হবে, দক্ষ বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা কমে এসেছে৷’’ কেন বাংলা থেকে  ভালো ফুটবলার উঠে আসছে না? ভারতীয় দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক রজত ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘আমাদের বড় ক্লাবগুলি কোটি টাকা খরচ করে ফুটবলার আনছে ট্রফি পাওয়ার লক্ষ্যে৷ প্রতি বছর এই কোটি কোটি টাকা যদি বাংলার ফুটবলের জন্য ব্যয় করা হত, তাহলে আমরা এখানে দশটা ভালো ফুটবলার তৈরি করতে পারতাম৷ এক্ষেত্রে ক্লাব ও সরকার উভয়কেই একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে৷’’

তবে ক্রিকেটের মতো ফুটবলকেও রাজ্যের গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে চান না ইস্টবেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক ডা: শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের গর্ব পঞ্চপাণ্ডবের কেউ বাঙালি ছিলেন না৷ আমাদের লক্ষ্য থাকে দেশের সেরা পারফর্মারদের ক্লাবে এনে খেলানো৷ বিশ্বায়নের পর পেশাদারিত্ব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে৷ শুধু প্রতিভা থাকলে চলবে না, পারফর্ম করার টেকনিকও জানতে হবে৷’’ বাংলার নতুন প্রতিভা তুলে এনে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেবে কে, এই প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসিত থেকে গিয়েছে যখন বাংলা-বর্জিত কলকাতা নাইট রাইডার্স আর কয়েকদিনের মধ্যে ২২ গজে নামতে যাচ্ছে৷