1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌বাই বাই ৫৫–বি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৬ জুলাই ২০১৮

বাড়ি বদলে গেলে, ঠাঁই নাড়া হতে গেলে লোকে দুঃখিত হয়৷ কিন্তু সেটাকেই আনন্দের উপলক্ষ বানিয়ে নিলেন কলকাতার এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মীরা৷

https://p.dw.com/p/31WEv
Mitarbeiter von Bates advertising
ছবি: Privat

কলকাতার অন্যতম মুখ্য বিজ্ঞাপন সংস্থা ‘‌বেট্‌স'‌ তাদের পাঁচ দশকের পুরনো ঠিকানা বদলে চলে যাচ্ছে শহরেরই এক নতুন এলাকায়৷ বহু স্মৃতি আর আবেগ জড়িয়ে থাকা সেই পুরনো আস্তানা থেকে বিদায় নিয়ে দুঃখিত হওয়ার বদলে উদযাপনের এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংস্থার কর্মীরা৷ ডিজিটাল মাধ্যমে কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছিলো প্রচারটা, যার শিরোনাম ছিল— বাই বাই ৫৫–বি৷ সংস্থার বিভিন্ন কর্মীর আলাদা এবং দলবদ্ধ ছবি দিয়ে নিয়মিত পোস্ট করা হচ্ছিলো সোশাল মিডিয়ায়৷ ‘‌৫৫–বি'‌ মানে সংস্থার পাঁচ দশকের পুরনো ঠিকানা ৫৫–বি মির্জা গালিব স্ট্রিট৷ নিউ মার্কেটের পিছন দিয়ে সোজা পার্ক স্ট্রিটে এসে পড়া যে রাস্তার নাম একসময় ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট৷ কলকাতার অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়া হিসেবে যে রাস্তার প্রসিদ্ধি৷ একই সঙ্গে বেশ কিছু ঐতিহাসিক দপ্তর ছিল এই রাস্তার ওপর, যার একটি ওই ৫৫ বি–তে বেট্‌স-এর দপ্তর৷ বেট্‌সের আগের নাম ছিল ক্ল্যারিয়ন অ্যাডভার্টাইজিং৷ বাংলা এবং সর্বভারতীয় বিজ্ঞাপন জগতের একাধিক দিকপাল কোনো-না-কোনো সময় যুক্ত ছিলেন ক্ল্যারিয়নের সঙ্গে৷ সত্যজিৎ রায় স্বয়ং ছিলেন এই সংস্থার পরিচালনগোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য৷

‘‌কিছু প্রকাশ্য, আর কিছু পাবলিকলি না বলাই ভাল’‌

এই ক্ল্যারিয়নেই ইংরেজি ভাষার ‘‌কপি রাইটার', অর্থাৎ বিজ্ঞাপনী বয়ান লিখিয়ে হিসেবে‌ কাজ করতেন সত্যজিতের ‘‌সীমাবদ্ধ'‌ ছবির নায়ক বরুণ চন্দ৷ এই দপ্তরেই কি পরিচালক সত্যজিৎ দেখেছিলেন এবং পছন্দ করেছিলেন তাঁর ছবির নতুন নায়ককে?‌ না, সেরকম ঠিক ঘটেনি৷ ডয়চে ভেলে-কে জানালেন বরুণ চন্দ৷ তবে ক্ল্যারিয়নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর অনেক পেশাগত সাফল্যের স্মৃতি৷ যদিও তিনি লিখতেন ইংরেজিতে, কিন্তু একবার আনন্দবাজার এবং দেশ পত্রিকার বাংলা বিজ্ঞাপনের বয়ান লেখার সুবাদে একাধিক সর্বভারতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন৷ ‘দেশ'-এর জন্য তৈরি সেই বিজ্ঞাপনটিও তাঁর এখনও মনে আছে৷ হাতে আঁকা একটি জানলার ছবি, যা বাইরে মুক্ত আকাশে পাখি উড়ে যাচ্ছে৷ আর পুরস্কৃত বয়ানটি ছিল, ‘‘মনের জানলা খুলে দেয় দেশ৷''

এছাড়াও ৫৫ বি মির্জা গালিব স্ট্রিটে চাকরি করতে যাওয়ার সুবাদে বহু বর্ণময় এবং আনন্দের অভিজ্ঞতা আছে বরুণ চন্দ'র, যার সব তিনি জনসমক্ষে জানাতে চান না!‌ যেমন বলা হতো, ক্ল্যারিয়নের একটা শাখা অফিস আছে পার্ক স্ট্রিটে৷ সেই রাস্তায় সারি দিয়ে একের পর এক বিখ্যাত পানশালা৷ এবার ওই অস্থায়ী শাখা অফিস কোথায় খোলা হতে পারতো, সেটা হয়ত অনেকেই আন্দাজ করতে পারবেন৷ হাসতে হাসতে বললেন বরুণবাবু৷ জানালেন, মাঝে মাঝে সেই অফিসে প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সুন্দরবাবুও আসতেন৷ ‘‌সুন্দরবাবু'‌ বলতে আরেক অভিনেতা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, যার ডাকনাম ছিল ‘‌সুন্দর'‌৷ ঘটনাচক্রে তিনিও পেশাগতভাবে বিজ্ঞাপনের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন এবং বরুণ চন্দ'র মতো তিনিও সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার নায়ক ছিলেন৷

‌‘‌আমরা আড্ডা দেব, সেলিব্রেট করব, একটু কাঁদব, হাসব.‌.‌.‌’

২০ জুলাই এই সব পুরনো গল্পও উঠে আসবে ৫৫–বি মির্জা গালিব স্ট্রিটের এক ঘরোয়া আড্ডায়৷ বলছিলেন শর্মিষ্ঠা দেব, যিনি সেই ক্ল্যারিয়ন অ্যাডভার্টাইজিংয়ের নবতম সংস্করণ ‘‌বেট্‌স চি অ্যান্ড পার্টনার্স'‌–এর কলকাতা শাখার প্রধান৷ কার মাথায় এসেছিল বিদায়ের মুহূর্তকে এমন অভিনব কায়দায় স্মরণীয় করে রাখার ভাবনাটা?‌ শর্মিষ্ঠা জানালেন, কোনও একজন নয়, সব ভালো ভাবনার মতো এটাই অনেকে মিলে ভেবেছেন এবং সবাই মিলে সেটাকে কার্যকর করছেন৷ অনেকেই চাইছিলেন যে, একবার শেষবারের মতো পুরনো ঠিকানার পুরনো অফিসে আসবেন৷ যাঁরা কখনও ক্ল্যারিয়ন বা বেট্‌সে কাজ করেননি, তাঁরাও কৌতুহলী হয়েছিলেন অফিসটা দেখতে৷ আর এখন যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা তো চাইছিলেনই ফেয়ারওয়েলটা যেন স্মরণীয় হয়৷ বাংলা বিজ্ঞাপন জগতে ৫৫–বি মির্জা গালিব স্ট্রিট-এর যে আইকনিক পরিচয়, সেটাকে আরও একবার তুলে ধরতে চাইছিলেন৷ তাই শেষবারের মতো এই পুরনো ঠিকানায় একজোট হবেন ওঁরা, একটু আড্ডা দিতে, সেলিব্রেট করতে, একটু কাঁদতে, হাসতে৷