1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বাঙালির বিয়ের নিমন্ত্রণেও ইংরেজির আধিক্য’

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১

বাহান্ন’র একুশে ফেব্রুয়ারি রংপুরও ছিল উত্তাল৷ মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে সেখানে আন্দোলনে অংশ নেয় ছাত্ররা৷ সেদিন ঢাকায় মিছিলে গুলি চালিয়েছিল পুলিশ৷ এই খবর রংপুরে পৌঁছালে ছাত্র-জনতা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন৷

https://p.dw.com/p/10Hjq
কবিগুরুর লেখা (ফাইল ছবি)ছবি: Hasibur Rahman

সেসময়কার সেই আন্দোলনের এক কর্মী মোহাম্মদ আফজাল৷ তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন তিনি৷ এই ভাষা সৈনিক ডয়চে ভেলেকে আন্দোলনের সময়কার স্মৃতি বর্ণনা করেন এভাবে, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ছিল এবং ছাত্রদের একটা বিশাল মিছিল বের হয়েছিল৷ তাতে আমিও ছিলাম৷ যখন মিছিল হয়েছিল তখন আমরা জানতাম না ঢাকায় মিছিলে গুলিবর্ষণ হয়েছে৷

তিনি বলেন, সেদিন সন্ধ্যার মধ্যেই এই খবর রংপুরে চলে আসে৷ পরেরদিন প্রতিবাদে একটা বিরাট বিক্ষোভ মিছিল হয় এবং রংপুরে একটি সভাও হয়৷ সেই মিছিলে ছাত্ররা ছাড়াও বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ যোগ দেয়৷

রংপুরে তীব্র আন্দোলন

১৯৫২ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি রংপুরে ভাষা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে৷ শুরু হয় পুলিশের আটক অভিযান৷ মোহাম্মদ আফজাল তখন আটক হননি৷ আটককৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে পরবর্তীতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন তিনি৷ আফজাল বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবিতে আমরা মিছিল নিয়ে নিয়মিত রংপুর কারাগার পর্যন্ত যেতাম৷ সেখানে মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দিতাম এবং ফিরে আসতাম৷

শহীদ মিনার

Kaptai Lake in Bangladesh Flash-Galerie
ছবি: DW

রংপুরে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বহন করছে একটি শহীদ মিনার৷ বাহান্ন নয়, ১৯৫৬ সালে সেই শহীদ মিনার তৈরি করেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা৷ একাত্তরে শহীদ মিনারটি ভেঙে দেয় পাকিস্তানি সেনারা৷ পরবর্তীতে ৮০ সালে মোহাম্মদ আফজালের নেতৃত্বেই তৈরি হয় শহীদ মিনার৷ যা এখনো আছে৷ তিনি বলেন, আমি তখন রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলাম৷ পৌরসভার অর্থে কমিশনারদের সহায়তায় এই শহীদ মিনার তৈরি করি৷ এটাই রংপুরবাসীর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রধান জায়গা৷ এখানেই এখন বড় সভাসমাবেশ হয়৷

ইংরেজি নিমন্ত্রণপত্র

বর্তমানে বাংলা ভাষায় অনেক পরিবর্তন দেখছেন মোহাম্মদ আফজাল৷ এই ভাষা আন্দোলনকারী পরিবর্তনকে সমর্থন করেন৷ তবে, হতাশ হন যখন বাঙালির বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রেও ইংরেজি ভাষার দেখা পান৷ তাঁর কথায়, বাংলা ভাষায় কথা বলার, লেখার এবং সবকিছু করার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে৷ কিন্তু উচ্চবিত্তদের মধ্যে বাংলা ভাষার ব্যবহারের ঘাটতি আছে, বরং সন্তানদের ইংরেজি মিডিয়ামের পড়ানোর দিকেই তাদের আগ্রহ বেশি৷ ইদানিং আবার বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রেও ইংরেজি ভাষা চালু হয়েছে৷ এটা খুবই খারাপ প্রবণতা৷

সবক্ষেত্রে বাংলা চাই

মোহাম্মদ আফজাল মনে করেন, বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি কর্মকাণ্ডে বাংলা ভাষার প্রচলন করা উচিত৷ স্বাধীন বাংলাদেশে যেটা শুরু করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান৷ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অফিস আদালতে বাংলা চালুর নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরবর্তী সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে এটার প্রয়োগ বন্ধ করে দেয়৷ এরপর এখন পর্যন্ত সর্বত্র বাংলা ভাষা চালু হয়নি৷

বর্ষীয়ান এই ভাষা সৈনিক বর্তমান প্রধান বিচারপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন৷ কেননা, তিনি আদালতে বাংলায় বিচার প্রক্রিয়া চালু করেছেন৷ এধরনের উদ্যোগে অন্যদের অংশগ্রহণও চান মোহাম্মদ আফজাল৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী