1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বার্লিনে সহকর্মীদের সঙ্গে তিনটি দিন

১৪ অক্টোবর ২০০৯

এশিয়া প্যাসিফিক উইক বা এশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় সপ্তাহের প্রথম তিনটি দিনে ডয়চে ভেলের উপস্থিতি সম্পূর্ণ আয়োজনটিকেই দিয়েছিল অন্য এক মাত্রা৷ কিন্তু, তার চেয়েও বোধহয় ভিন্ন ছিল আমাদের কাজ করার ধরণ, পারস্পরিক আন্তরিকতা৷

https://p.dw.com/p/K4qZ
টাউন হলে ডয়চে ভেলের ‘‘ইন্ফো স্ট্যান্ড''ছবি: Hao Gui / DW

বার্লিনের রোটেস রাটহাউস বা গাঢ় লাল রঙের টাউন হলের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকলেই যেন খুলে যেত অন্য একটা জগৎ৷ নীচের তলায় দরজার ডানদিকে ছিল ছোট্ট একটা রিসেপশন৷ সাধারণত সেখান থেকেই ঐ তিনদিনের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত অফিস ঘরটির চাবি নিতে হতো আমাদের৷ তারপর লাল গালিচায় মোড়া মস্ত মস্ত সিঁড়ি ভেঙ্গে বারোক স্টাইলের প্রাসাদোপম বিল্ডিং-টার ওপর তলায় ওঠা৷

উঠেই হাতের বাঁদিকে প্রথমে ডয়চে ভেলের স্ট্যান্ড৷ আর তারপর সেই ‘‘মেইকশিফ্ট'' স্টুডিও, যেখান থেকে গত ৭ থেকে ৯-ই অক্টোবর বিশেষ অনুষ্ঠান করলাম আমরা৷ এশিয়া প্যাসিফিক সপ্তাহের মূল অনুষ্ঠানগুলি, বিশেষত অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক আলোচনা সভাগুলি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল আমাদের ঐ স্টুডিও-র পাশের বিশাল হলঘরে৷ তাই অনুষ্ঠান চলাকালীন শ'য়ে শ'য়ে মানুষের সমবেত কোলাহল আপনারাও নিশ্চয়ই শুনেছেন৷ তাই না ?

Reporterduo Debarati Guha und Sanjiv Burman
বার্লিনের ‘‘মেইকশিফ্ট'' স্টুডিও-তে সঞ্জীব বর্মনের সঙ্গেছবি: Hao Gui / DW

সে যাই হোক৷ সরাসরি বা লাইভ অনুষ্ঠানের জন্য সেখানে ছিল একটা গোল টেবিল৷ পাঁচটা মাইক্রোফোন, দুটো কম্পিউটার, একটা ল্যাপটপ, দুজন প্রকৌশলী আর অনুষ্ঠান চালনার জন্য অতি আবশ্যক কিছু যন্ত্রপাতি – ব্যাস্, এই ছিল ঐ স্টুডিও-তে৷ এছাড়া ছিল একটা বড় ফ্ল্যাট-স্ক্রিনের টেলিভিশন৷ সকাল-সন্ধ্যা তাতে চলছিল ডয়চে ভেলে টিভি৷ আর বাঁদিকের জায়গাটা ছিল অনেকটা ‘‘ইন্ফো স্ট্যান্ড''-এর মতো৷ সেখানে রাখা ছিল ডয়চে ভেলে সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য৷ রেডিও এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সূচী, এমনকি ইন্টারনেট সংক্রান্ত নানা তথ্য৷ অতিথিদের সেই তথ্য প্রদানের জন্য দুজন প্রকৌশলী ছাড়াও, স্ট্যান্ডে ছিলেন ডয়চে ভেলের আরো দুজন কর্মী৷

কিন্তু, এতো শুধু গেল সাময়িক সেই ‘‘মেইকশিফ্ট'' স্টুডিও-র কথা৷ এতো মানুষের মধ্যে থেকে কি আর কাজ করা যায় ? তাই কাজের প্রস্তুতির জন্য আমাদের হলঘর ছেড়ে এগিয়ে যেতে হতো আরো খানিকটা৷ সামনে পড়তো একটা অটোম্যাটিক কাঠের দরজা৷ সবুজ রঙের একটা বোতাম টিপলেই যেটা খুলে যেত একদম চিচিং ফাঁকের মতো৷ তারপর লম্বা করিডোর পেরোলেই ১৩৫ নম্বর ঘর৷ আমাদের তিন দিনের অফিসপাড়া৷

DW Studio im Berliner Rathaus
টাউন হলের স্টুডিও-তে কার্যরত প্রকৌশলীরাছবি: Hao Gui / DW

ঘরে ছিল ইন্টারনেট ব্যবহারযোগ্য দু-দুটো কম্পিউটার, তিনটে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন, টেলিফোন আর চাঁই করা সাদা কাগজ৷ এছাড়া, আমরা যারা বন থেকে গিয়েছিলাম, অর্থাৎ চীনা বিভাগের ম্যাও ও লি, ইন্দোনেশিয়ার জিপোরা ও আয়ু, এশিয়া ইংলিশের থোমাস, দিশা ও অ্যান, ঊর্দুর আদনান ও গওহর, হিন্দির আভা ও আনওয়ার এবং বাংলা বিভাগ থেকে সঞ্জীব ও আমি – আমাদের প্রত্যেকের কাছেই ছিল একটা করে ল্যাপটপ আর রেকর্ডিং মেশিন৷

তবে এই ১৩ জন সহকর্মী ছাড়াও, আমাদের সঙ্গে ছিল দুজন প্রশিক্ষণার্থী ভেরিনা ও জুলিয়া এবং এশিয়া বিভাগের প্রধান সিবিলে গোল্টের সহকারী গুই হাও৷ কিন্তু এতো কিছুর পরেও, রীতিমতো কাজে ঝাঁপ দিতে আমাদের বেশ খানিকটা সময় লেগেছিল৷ বিশেষ করে ঊর্দুর সহকর্মীদের৷ এক কথায়, মাথায় হাত দিয়েই বসে পড়েছিল তারা৷ কারণ কম্পিউটারে গুরুত্বপূর্ণ সফ্টওয়েরগুলি ইন্সটল করা হলেও, ঊর্দু ফন্টে দেখা দিয়েছিল সমস্যা৷ লেখাই আর হয় না৷

Reporterduo Ishaq Adnan und Gowhar Geelani
মাইক্রোফোনের সামনে ঊর্দু বিভাগের আদনান ও গওহরছবি: Hao Gui / DW

তবে তাতে কি? আমাদের যে সঙ্গেই ছিল ‘‘মুশকিল আসান'' – মিস্টার সঞ্জীব বর্মন৷ তাঁর ঘন্টা খানেকের প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান করা গেল৷ তবে শুধু সঞ্জীবই নয়, দেখা গেল প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে এ কটা দিন, সবাই সবাইকে সাহায্য করছে৷ বার্লিনে বনের মতো হাতে অতো সময় ছিল না৷ আলোচনাসভায় অংশ নেওয়া, সাক্ষাৎকার নেওয়া, ঝটপট এডিট করা, রেকর্ড করা, আর তারপর অনুষ্ঠান করা তো আছেই !

স্বাভাবিকভাবেই, এ ছুটোছুটির মধ্যে একটু সাহায্যের দরকার হতো সবারই৷ সকলেই তাই নিজ অনুষ্ঠানের পরে অন্যকে সাহায্যের জন্য ছুটে যেত৷ অথচ, এ দৃশ্য কিন্তু আমাদের বনের অফিসে সচরাচর দেখা যায় না৷ সেখানে সহকর্মীদের নিজের নিজের বিভাগের কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়৷ বার্লিনে দেখা গেল, একটা সময় ঘরের এক কোণে নিজেদের উদ্যোগেই আমরা চাঁদা তুলে চা-বিস্কুট-ঠান্ডা খাবারের ব্যবস্থা করে নিয়েছিলাম৷ আনন্দের সঙ্গেই এই ব্যবস্থায় সায় দিয়েছিল সবাই৷

Das Mehrpersonenbüro im Berliner Rathaus Asien Pazifik Wochen
এটাই ছিল আমাদের তিন দিনের সেই অফিসপাড়াছবি: Hao Gui / DW

শুধু তাই নয়, কাজের শেষে ক্লান্ত আমরা প্রায় রোজই খেতাম এক সঙ্গে৷ সকালের জলখাবার থেকে শুরু করে দিন শেষের খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত৷ কখনও আবার দুপুরের খাবারটা বাদ যেত অনেকের৷ এছাড়া, এক সাথে টাউন হল পর্যন্ত যেতাম আমরা – প্রায় প্রতিদিনই৷ পথে যেতে যেতে বার্লিনের মানুষ, শহরের নানা এলাকা উঁকি দিত চোখের সামনে৷ আর তার মাঝে ঝলমলে রোদ ঠেলে এগিয়ে যেতে যেতে আমাদের মধ্যে আলোচনা হতো নানা বিষয় নিয়ে৷ রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি, এমনকি সাধারণ গাল-গপ্প কিছুই বাদ পড়তো না তাতে৷ কিন্তু দুঃখের বিষয়, কোনদিনই পথের অথবা রাতের খাবার টেবিলের সেই আড্ডা শেষ হতো না৷ এবারে বন শহরে ফিরে এসে আমাদের দৈনন্দিন কাজের জীবনে, সেই আলোচনা কী আদৌ শেষ হবে ?

প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম