1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিবাহিত হিন্দু নারীদের ভোট দেয়া কঠিন হবে?

২৩ মার্চ ২০১৮

জাতীয় পরিচয় পত্রে বিবাহিত নারীরা স্বামীর পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না৷ শিক্ষা সনদে যে নাম, বিয়ের পরে সেই নামই থাকবে৷ তবে যাঁদের শিক্ষা সনদ নেই, তাঁদের ব্যাপারে আলাদা ব্যবস্থা৷ এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা৷

https://p.dw.com/p/2urZu
ছবি: AFP/Getty Images

গত সোমবার (১৯ মার্চ) নির্বাচন কমিশন (ইসি)-র সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, বিয়ের পর নারীরা চাইলেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে তাঁদের নামের সঙ্গে স্বামীর নামের অংশ বা পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না৷ শিক্ষা সনদ অনুযায়ী যে নাম, তাই বহাল থাকবে৷ তবে বিশেষ প্রয়োজনে কেউ চাইলে এবং যাঁদের শিক্ষা সনদ নেই, তাঁরা নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করবেন৷ আর কমিশন তা যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবে৷ শিক্ষা সনদ যাঁদের নেই তাঁদের বাবা-মা যে নাম রেখেছেন, সেটিই গ্রহণ করা হবে৷

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, মিতা সরকার নামের একজন নারী তাঁর নামের পদবি পরিবর্তনের আবেদন করেন ইসিতে৷ তাঁর স্বামীর নাম রাজীব সিংহ রায়৷ মিতা নামের সঙ্গে স্বামীর গোত্র পদবি সিংহ রায় নিতে নাম পরিবর্তন করে মিতা সিংহ রায় করতে চান৷ জাতীয় পরিচয়পত্রে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মিতা সরকার স্নাতক পাস৷ তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ শিক্ষা সনদের পক্ষে মতামত দেয়৷

তাতে বলা হয়, ‘‘হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা বিয়ের পর স্বামীর পদবি ধারণ করেন৷ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীদের নামের সংশোধনী চেয়ে অনেক আবেদন আসে৷ তাঁরা তাদের সন্তানের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে বা জন্ম নিবন্ধনে বাবা-মায়ের নাম পদবিসহ উল্লেখ করেন৷ এমন পরিস্থিতিতে মায়ের শিক্ষাসনদে বাবার/স্বামীর পদবি না থাকা সত্ত্বেও স্বামী বা বাবার পদবি দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা হবে কিনা, এ বিষয়ে একটি সার্বজনীন সিদ্ধান্ত প্রয়োজন৷ শিক্ষা সনদে স্বামীর পদবি না থাকায় যদি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন না হয়, তাহলে সন্তানদের শিক্ষা সনদ অনেক সময় অকার্যকর হয়ে যায়৷ জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়েও সমস্যা তৈরি হয়৷ আবার শিক্ষা সনদ থাকলে নাম বা অন্যান্য ক্ষেত্রে শিক্ষা সনদের সঙ্গে মিল না করে সংশোধন হবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন৷’’

ওই মতামতের ভিত্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ‘‘কমপক্ষে এসএসসি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ থাকলে ওই সনদ অনুযায়ীই কেবল এনআইডি সংশোধন করা যাবে৷ তাছাড়া যাঁদের সনদ নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র নিয়ে দরখাস্ত করলে বিবেচনা করবে কমিশন৷’’ আর এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইসি শিক্ষাসনদ অনুযায়ী মিতার নাম সংশোধনের নির্দেশনা দেয়৷

ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলাল উদ্দীন আহমদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘সনদে যে নাম, সে নামে পরিচয়পত্র করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ যাঁদের সনদ নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে মা-বাবা যে নাম রেখেছেন, সেটি হবে৷ কেউ স্বামীর নাম যুক্ত করতে চাইলে ইসিতে দরখাস্ত করতে হবে৷ প্রতিটি আবেদন আলাদাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইসি সিদ্ধান্ত দেবে৷’’

শতকরা ৯০ ভাগ বিবাহিত হিন্দু নারী ভোট দিতে পারবেন না: রানা দাশগুপ্ত

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ইসি'র এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন তিন কারণে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী মেয়েরা বিয়ের আগে পিতার গোত্র এবং বিয়ের পরে স্বামীর গোত্র নামের সঙ্গে যুক্ত করে৷ এটা ধর্মীয় নিয়ম৷ এর ব্যতিক্রম করা হলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে৷ হিন্দু নারী কুমারী না বিবাহিত তা-ও নির্ধারণ হয় নামের শেষে গোত্র দেখে৷ বিয়ের পরও কোনো হিন্দু নারী যদি পিতার গোত্র ব্যবহার করে, তাহলে তাকে বিধবা ভাবা হতে পারে৷ বিবাহিত যে হিন্দু নারীরা এরইমধ্যে স্বামীর গোত্র ধারণ করে এনআইডি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং পাসপোর্ট করেছে, তারা ব্যাপক সংকটে পড়বে৷ আর এই কারণে অনেক নারী স্বামীর গোত্র বাদ দিয়ে শিক্ষাসনদ অনুযায়ী এনআইডি করে ভোট দেয়ার চেয়ে ভোট না দেয়ায় স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের মাত্র সাত মাস আগে ইসি'র এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার মতো সক্ষমতা নেই৷ আর যদি তা কার্যকর করতে যায় তাহলে আমার মনে হয় শতকরা ৯০ ভাগ বিবাহিত হিন্দু নারী ভোট দিতে পারবেন না৷’’

বিষয়টি বাধ্যবাধকতার হতে পারে না: এলিনা খান

অন্যদিকে নারী নেত্রী এবং জাতীয় মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী এ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিষয়টি বাধ্যবাধকতার হতে পারে না৷ কোনো নারী বিয়ের পর তাঁর স্বামীর পদবী ব্যবহার করতেও পারেন৷ আবার না-ও করতে পারেন৷ তবে ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা পার্সপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের জন্য শিক্ষাসনদের নামই অনুসরণ করা উচিত বলে আমি মনে করি৷ কারণ, নামের ক্ষেত্রে প্রামাণ্য কিছু তো থাকতে হবে৷ শিক্ষা সনদের নামকেই আমি সঠিক বলে মনে করি৷ তবে শিক্ষা সনদের নামও তো পরিবর্তন করা যায়৷ ভুল সংশোধন করা যায়৷ তাই যৌক্তিক সংশোধন অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্মের কথা আলাদা৷ কিন্তু মুসলমানদের তো ডিভোর্স ব্যবস্থা আছে৷ তাহলে যতবার ডিভোর্স হবে, একজন নারী ততবার তাঁর এনআইডিতে নাম পরিবর্তন করবে? আর মুসলমানদের মধ্যে  পদবি ব্যবহারের বিষযটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার নয়৷’’

তবে এলিনা খান বলেন, ‘‘ইসি যেটাকে বাধ্যতামূলক করতে চায়, সেটাকে আমি ঐচ্ছিক করার পক্ষে৷’’