1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিষ দিয়ে বাঁচানো হবে দক্ষিণ আফ্রিকার গন্ডার

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১

দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রাণী গন্ডার৷ কিন্তু এই প্রাণীর জীবন এখন বিপন্ন চোরাকারবারীদের হাতে৷ পশু চিকিৎসকরা তাই আবিষ্কার করেছেন নতুন এক বিষ৷ কাউকে মারতে নয়, বরং গন্ডার ও তার শিংকে বাঁচাতেই এই বিষ ব্যবহার করা হবে৷

https://p.dw.com/p/12gy5
এভাবেই চোরাকারবারীদের শিকার হয় গন্ডাররাছবি: lion and rhino park
কুসংস্কার

গন্ডারের শিং যেমন মজবুত তেমনি বড়৷ প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচ্যের অনেক দেশে এই গন্ডারের শিং নিয়ে কুসংস্কার রয়েছে৷ তারা এই শিং ব্যবহার করে থাকে নানা ধরণের রোগ সারানোর পথ্য হিসেবে৷ কিন্তু এই শিং তো আর এশিয়াতে পাওয়া যায় না৷ তাই দক্ষিণ আফ্রিকার গন্ডার শিকারিরা চোরাপথে সুদূর আফ্রিকা থেকে শিং সরবরাহ করে থাকে৷ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মত দেশে একটি গন্ডারের শিং এক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত মূল্যে বিক্রি হয়৷ তাই চোরাকারবারীদের কাছে এই গন্ডারের শিং অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা৷

Nashorn Rhinozeros Wüste
গন্ডারদের বাঁচাতে এবার ‘বিষে বিষক্ষয়’ছবি: Fotolia/tarei

নির্মম হত্যাকাণ্ড

তাদের কারণে এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার গন্ডার৷  তার চেয়ে নির্মম হচ্ছে, যেভাবে এইসব গন্ডারের শিং শিকার করা হয় সেটা৷ অবৈধ শিকারিরা একটি গন্ডারকে ধরে নির্মমভাবে তার শিংটি কেটে ছেড়ে দেয়৷ আহত সেই গন্ডার রক্তক্ষরণে ধুকতে ধুকতে একসময় মারা যায়৷ প্রতি বছর শ'য়ে শ'য়ে গন্ডার এইভাবে প্রাণ হারাচ্ছে অবৈধ শিকারীদের হাতে৷ গত বছর ৩৩৩টি গন্ডার মারা পড়ে চোরা শিকারীদের হাতে৷ এরপর কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নিলেও খুব একটা লাভ হয়নি৷ চলতি বছর ইতিমধ্যেই ২৮০টি গন্ডার মারা পড়েছে৷ ওয়াল্ডলাইফ ট্রাস্ট'এর কর্মকর্তা টান কোয়েটজে এই ব্যাপারে বলেন, ‘‘যে বিষয়টি এখন সবচেয়ে প্রয়োজন, সেটি হলো চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম সহ প্রাচ্যের যেসব দেশ এই গন্ডারের শিং ব্যবহার করে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা এই চোরাচালানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়৷''

গন্ডার শিকারের সময় চোরা শিকারীদের সঙ্গে অনেক সময় বনরক্ষীদের গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে৷ দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কে এই বছর এমন এক ঘটনায় ১৫ জন চোরা শিকারী নিহত হয় যাদের বেশিরভাগই এসেছিলো প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিক থেকে৷ আবার অনেক সময় চোরা শিকারীদের ধাওয়া করার সময় নিজেদের গুলিতেও বনরক্ষীদের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে৷

Flash-Galerie bedrohte Tierarten
গন্ডারদের জন্য রয়েছে অভয়ারণ্যছবি: AP

নতুন বিষ

চোরা শিকারীদের তৎপরতা এবং গন্ডারকে রক্ষায় তাই ভিন্ন পথ ধরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা৷ সেখানকার পশু চিকিৎসকরা আবিষ্কার করেছেন এক ধরণের বিষ৷ এই বিষ তারা বিভিন্ন বনের গন্ডারের শিংয়ে লাগিয়ে দিচ্ছেন৷ এক ধরণের কীটনাশক এবং রংয়ের উপাদান ব্যবহার করে এই বিষ উদ্ভাবন করা হয়েছে৷ কেউ যদি গন্ডারের শিংকে পাউডার করেও চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এক্সরে মেশিনে ঠিক তা ধরা পড়বে৷ শুধু তাই নয়, যারা এই শিংয়ের গুড়া ব্যবহার করবে তাদেরও মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাবের মত নানা ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে৷ এই বিষের আবিষ্কারক পশু চিকিৎসক চার্লস ফান নিকের্ক বলেন, ‘‘যদি এই শিংকে অন্যভাবেও কেউ পাচারের চেষ্টা করে তাহলেও তা মেশিনে ধরা পড়বে৷ এবং কেউ যদি এটা ব্যবহার করে তাহলে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হবে৷ গন্ডারের শিং ব্যবহারকারীদের জানা উচিত, যে এটি মানুষের ব্যবহারের জন্য নয়৷''

বিতর্ক

গন্ডারকে বাঁচাতে এই ধরণের বিষ তৈরি এবং মানুষের ওপর তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ তবে পরিবেশবিদরা মনে করেন, এই প্রায় বিপন্ন হতে যাওয়া প্রাণীটিকে বাঁচাতে এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না৷ তার ফলে অন্তত এই প্রাণীটির জীবন বাঁচবে৷ যেমনটি বললেন জোহানেসবার্গের কাছে রাইনো লায়ন পার্কের কর্মকর্তা এড হের্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারছি এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু অন্যদিকে আমাদেরকেও প্রোঅ্যাকটিভ হতে হবে৷ প্রাণীটিকে মারার পর সেখানে গিয়ে হাজির হয়ে কোন লাভ নেই৷ তাই যে কোনভাবে হোক, অন্তত চোরা শিকারিদের হাত থেকে প্রাণীটিকে বাঁচাতে হবে৷''

পশু চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে এই নতুন উদ্ভাবিত বিষ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছেন৷ তাতে সফলও হয়েছেন৷ এখন দেখা যাক, নতুন এই বিষ কত গন্ডারের জীবন রক্ষা করতে পারে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম

সম্পাদনা: জাহিদুল হক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য