1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৃদ্ধাশ্রমের সেবিকার কথা

শ্টেফেন হোফমান/আরবি২৯ ডিসেম্বর ২০১২

প্রবীণ নিবাসের সেবিকাদের কাজ করতে হয় অত্যন্ত চাপের মুখে৷ বিশ্রামের সময় কম পান তাঁরা৷ বেতনও আহামরি কিছু নয়৷ তবু মানুষের মুখে হাসি ফুটলে তাঁরা খুশি হন৷ শোনা যাক এই রকমই এক দরদি নারীর কথা৷

https://p.dw.com/p/17Azo
Einer pflegebedürftigen älteren Dame wird am Dienstag (17.04.2012) in Weingarten (Kreis Ravensburg) in einem Altenheim das Essen von einer Pflegekraft gegeben. Foto: Tobias Kleinschmidt dpa/lsw
ছবি: picture-alliance/dpa

লাইপজিগ শহরের প্রবীণ নিবাস ‘আম সিলবার সে'-তে সেবিকা হিসাবে কাজ করেন নাদিন ক্লোসে৷ প্রতি শিফটে ১১ জন বাসিন্দার দেখাশোনা করতে হয় তাঁর৷ বিছানায় শোয়ানো, ধোয়ামোছা, খাওয়ানো – এসব কিছুই করতে হয় তাঁকে৷ কোনো সহজ কাজ নয়, তবু আনন্দের সাথে করেন তিনি৷

বৃদ্ধাশ্রমের সেবিকা নাদিন ক্লোসে জানান, ‘‘মাঝে মাঝে অবশ্যই ক্লান্ত হয়ে পড়ি৷ সপ্তাহ শেষে যখন ছুটি আসে, তখন খুশি হই৷ তবে অন্য কিছু করার ইচ্ছা নেই আমার৷ এই কাজে শারীরিক পরিশ্রম হলেও প্রতিদানে পাওয়া যায় অনেক কিছু৷''

ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া

নাদিন ক্লোসেকে ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয় ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে৷ যে সব বয়োবৃদ্ধ মানুষের দেখাশোনা করেন তিনি, তাঁদের অনেকেই ডিমেনেশিয়ায় ভুগছেন৷ এক একজনের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করা যাবে, তা নির্ধারণ করে দেয় বিমা সংস্থাগুলি৷ যেমন একটি রুটিতে মাখন লাগাতে তিন মিনিটের বেশি সময় নষ্ট করা চলবে না৷ ধোয়ামোছার জন্য ২৫ মিনিট ও কাপড় পরানোর জন্য ১০ মিনিট ধরা হয়েছে৷ কারো সঙ্গে একটুখানি সুখ-দুঃখের কথা বলার জন্য খুব কম সময়ই হাতে থাকে ৷

নাদিন জানান, ‘‘রোগীদের সঙ্গে এক দণ্ড কথা বলার জন্য একটু ফাঁক খুঁজে নিতে চেষ্টা করি৷ এক্ষেত্রে বিশ্রামের সময়টা মার খেয়ে যায়৷ দোষটা আসলে কার? এই প্রশ্ন জাগলে বলা যায়, নার্সিং-এর ক্ষেত্রে বিমা ব্যবস্থায় গলদ রয়ে গেছে৷ ডিমেনশিয়ার বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথা ঘামানো হয়নি৷ এই রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা ভীষণভাবে বেড়ে গেছে এখন৷ অসুখটা একেক জন রোগীর ক্ষেত্রে একেকভাবে প্রকাশ পায়৷ তাদের যত্ন-আত্তিও করতে হয় ব্যক্তিগত চাহিদা বুঝে৷ এজন্য আমাকে প্রতিদিন রোগীদের অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়৷ এই বিষয়টিকে আমল দেয়া হয় না৷''

Abendesssen im Altenheim Sali, Dugi otok, Kroatien; September 2012; Copyright: DW/Ivana Zrilić
ছবি: DW

ব্যয়সংকোচ নীতি

বেশ কয়েক বছর ধরে জার্মানির স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যয়সংকোচ নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে৷ এখানকার মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমেই, সেই সাথে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যাও৷ এই বিষয়টি নিয়ে তেমন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে না৷ অথচ এই সব রোগীর জন্য প্রচুর সময় ও নৈকট্য প্রয়োজন৷ নার্সদের পক্ষে একা এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়৷ যদিও তাঁদের অনেকে উদ্দীপনা নিয়েই কাজটা করেন৷

বৃদ্ধ নিবাসের কর্মী ৩৫ বছর বয়স্ক নাদিন শুধু যে সেবিকা তাই নয়, বেশ কিছু দাপ্তরিক কাজকর্মও তাঁকে করতে হয়৷ প্রতিটা কাজেরই খুঁটিনাটি বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে রাখতে হয় তাঁকে৷ এমনটি চায় স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলিও৷ এইসব কাজ বিবেচনা করেই সেবাখাতে অর্থ ধার্য করা হয়৷

দাপ্তরিক কাজের বাড়াবাড়ি

‘দ্য ওয়ার্কার্স সামারিটান ফেডারেশন'-এর মুখপাত্র জানান, ‘‘সেবা বহির্ভূত দাপ্তরিক কাজের পরিমাণ তিন গুণ হয়ে গেছে এখন, কিন্তু আমাদের কর্মী সংখ্যা বাড়েনি৷ এটা সত্যি দুঃখজনক যে, সেবা শুশ্রূষার চেয়ে লেখালিখির ওপরই যেন জোর দেয়া হচ্ছে৷''

জনকল্যাণমূলক সংস্থাগুলির দাবি, নার্সদের আগের মতোই রোগীদের দেখাশোনার দিকেই মনযোগ দিতে দেওয়া হোক৷ সেই সাথে তাঁদের বেতনও বৃদ্ধি করা হোক৷ নাদিন ক্লোসে সব মিলিয়ে মাসে ১৭০০ ইউরো বেতন পান৷ কেটে ছেঁটে বেশ কম অর্থই হাতে আসে৷

পাওয়া যায় অনেক কিছু

তবু অখুশি নন মানবদরদি এই নারী৷ তাই তো তিনি বলছিলেন, ‘‘প্রবীণ নিবাসের কোনো বাসিন্দা যখন উজ্জ্বল চোখে সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ জানান, তখন এক সুন্দর অনুভূতি জাগে ৷ মনে হয় অনেক কিছুই তো পেয়েছি৷ আমি এমন মানুষ নই, যে বলবে আমি কোনো দিনই সেবাশ্রমে থাকতে যাব না৷ আমার আশেপাশের মানুষজনের মধ্যেও এই ধারণটা পৌঁছে দিতে চাই, যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে থাকার কথা চিন্তাই করতে পারেন না৷ তখন আমি তাঁদের বলি, এত খারাপ বলার কী আছে, তোমরা আগে অবস্থাটা এখানে এসেই দেখ না৷''

লাইপজিগের বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে৷ কেননা নাদিন ক্লোসের অবসর নিতে এখনও অনেক দেরি আছে৷ তাই ভবিষ্যতেও তাঁর দরদি হাতের ছোঁয়া পাওয়ার আশা করতে পারেন তাঁরা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য