1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বোর্ড জনমত তৈরির চেষ্টা করেছে’

আলী সেকান্দার ঢাকা
২৬ মার্চ ২০২১

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্প্রতি মাঠের খেলাকে ছাপিয়ে গেছে বাইরের কিছু ঘটনা৷ ঘটনাগুলোকে আলোচনায় তুলে এনেছেন দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান৷

https://p.dw.com/p/3rF4j
ফারুক আহমেদ
ছবি: Getty Images/C. Prentis/Allsport

ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এর সার্বিক বিশ্লেষণ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ৷  

ডয়চে ভেলে: সম্প্রতি সাকিবের বক্তব্য ঘিরে ক্রিকেটে ইস্যু তৈরি হয়েছে৷ তার চিঠি পড়া না পড়া এবং আরো কিছু কথা বলেছেন সাকিব৷ সেটা নিয়ে বিসিবিও চটেছে৷ বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ফারুক আহমেদ: এখানে ইস্যুটাকে আমি দুইভাবে দেখতে চাই৷ প্রথমত; সাকিব চিঠি দিয়েছে আইপিএল খেলতে চায়, একই সময়ে টেস্ট সিরিজটাও পড়ে গেছে৷ এখানে সাকিব কিন্তু বলেনি, কখনোই টেস্ট খেলতে চায় না৷ বলেছে, শ্রীলঙ্কা সফরের ওই সময়ে ছুটি চায়, ওই দুটি টেস্ট খেলতে চায় না হয়তো৷ আমার কাছে মনে হয়েছে প্রথমেই ইস্যুটাকে পেশাদারিত্বের সঙ্গে হ্যান্ডেল করেনি বোর্ড৷ আমার কাছে মনে হয়েছে, বোর্ডের শীর্ষ কর্তারা তাকে অনুমোদন দিয়ে খুবই অখুশি ছিল৷ সংবাদ সম্মেলনে অনেক বড় করে বলা হয়েছে, সাকিব ছুটি চেয়েছে, টেস্ট খেলতে চায় না৷ এই জিনিসটা আমার কাছে পেশাদার মনে হয়নি৷ কেননা, আমি সর্বোচ্চ অথরিটি হিসেবে হয় অনুমোদন দেবো, নয়তো তেবো না৷ যদি দেই এবং কোনো ক্ষোভও থাকে, তাহলে নিজেদের মধ্যেই প্রশমিত করতে হবে৷ কেননা আমি অথরিটি হয়ে অনুমোদন দেওয়ার পর জনমত তৈরির চেষ্টা করলে তা পেশাদরিত্বের মধ্যে পড়ে না৷ ওখানে একটা ভুল হয়ে গেছে৷ তখন সাকিব চুপ ছিল, কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি৷ পরে আবার সে একটু প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷ পরিচালকরা যে বলেছেন, টেস্ট খেলতে চায় না, ওটাই সাকিব পরিস্কার করতে চেয়েছে, ‘‘আমি টেস্ট খেলতে চাই না বলিনি৷ আমি ওই সময়টায় ছুটি চেয়েছি৷ কী কারণে চেয়েছি সেটাও লিখেছি, ওখানে আইপিএল খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেবো৷ আর টাকারও একটা ব্যাপার৷'' এই দুটো ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে আর একটু পেশাদার হলে ভালো হতো৷ ছাড়পত্র না দিলে কিন্তু এত কথা হতো না৷ ছাড়পত্র চেয়েছে পায়নি, শেষ হয়ে যেতো৷ সাকিব কী করতো সেটা পরের ব্যাপার৷ পরে আলোচনা করা যেতো৷ অনুমোদন দেওয়ার পর মিডিয়ায় অনেক টকশো হয়েছে, ওটা আমার কাছে ভালো লাগেনি৷

‘অভিভাবক হয়ে এত আবেগপ্রবণ হলে তো চলবে না’

সাকিব যেটা বলেছেন, সভাপতি এবং খালেদ মাহমুদ সুজন ছাড়া কেউ কাজ করেন না৷ এটা বলা সমিচীন হয়েছে?

খেলোয়াড়দের কোড অব কন্ডাক্টেই আছে একজন ক্রিকেটার কী বলতে বা করতে পারে৷ আমি বলবো, বোর্ড এক্ষেত্রেও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনি৷ চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটাররা অগেও অনেক কথা বলেছে বোর্ডের বিরুদ্ধে, নির্বাচকদের বিরুদ্ধে৷ তখনও কিন্তু তারা এটা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করেনি৷ একবার মুশফিকের একটা ইস্যু ছিল, সেখানে ভালোভাবে হ্যান্ডেল করা হয়নি৷ একজন চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার কী বলতে পারে সেটা তার যেমন জানা আছে, তেমনি বোর্ডেরও৷ বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ অভিভাবক ক্রিকেট বোর্ড৷ পলিসি লেভেলে আছেন বোর্ড সভাপতি ও পরিচালাকরা৷ তাদের অধীনে বোর্ডের কর্মকর্তা, কর্মচারি ও খেলোয়াড়রা৷ তবে খেলোয়াড়রা বোর্ডের ‘কী পার্ট বা মূল৷ এক্ষেত্রে কোড অব কন্ডাকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ বোর্ড আগে থেকে এটাকে সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে পারেনি দেখে আজ এই অবস্থায় এসেছে৷ সাকিবকে তো জানতে হবে সে কতটুকু বলতে পারে৷ চুক্তির ভেতরে থেকে তার কি এই অথরিটি আছে কোনো পরিচালকের বিরুদ্ধে কথা বলার? না, নেই৷

সাকিবতো এ মুহূর্তে চুক্তিতে নেই৷ নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই চুক্তির বাইরে৷ নতুন কন্টাক্ট এখনও পায়নি৷ সে সুযোগটাই কি সে নিয়েছে?

সাকিব খুবই মেধাবী একজন মানুষ৷ সে হয়তো মনে করেছে, আমি যেহেতু চুক্তিতে নেই, আমি কিছু কথা বলতেই পারি৷ এরপর বোর্ড ওকে চুক্তিতে নেবে কি নেবে না সেটা বোর্ডের ব্যাপার৷ যেহেতু ও চুক্তিতে নেই তাই বলতেই পারে৷ যখন একজন চুক্তিতে থাকবে না, তখন সে বলতেই পারে৷

জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের একটা ন্যূনতম নীতিমালা থাকে, সেখান থেকেও কি বলা যায়?

সে চুক্তিতে নেই৷ তাহলে বলতে পারে৷ চুক্তিতে না থাকলে কোড অব কন্ডাক্টে পড়বে না৷ যারা চাকরি করে, তারা এটা বলতে পারবে না৷ সে তো চুক্তিতেই নেই৷

সাকিব দুজনের প্রশংসা করেছেন৷ আবার দুজনের বিরুদ্ধেও বলেছেন৷ যাদের গায়ে লেগেছে,তারা আবার বোর্ড সভাপতির সঙ্গে সভা করে ব্রিফ করেছেন৷ ওটা না করলেও পারতো কিনা?

এটাই তো আমার কথা৷ এখানে সব ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে৷ কখনো এরকম হওয়া উচিত নয়৷ সাকিব যখন কথাটা বলেছে তখন উচিত ছিল সিইওকে বিষয়টি দেখা৷ দুই জনের প্রশংসা করেছে তারা, মিডিয়ার সামনে আসেনি৷ যে দুজনের প্রশংসা করেনি, তারা এসেছে৷ জিনিসটা অন্যরকম হয়ে গেল৷ আমার মনে হয় এখানেও বোর্ডের উচিত ছিল একটা সমন্বিত বক্তব্যে আসা৷ আমার কাছে যেটা দৃষ্টিকটু লেগেছে, আবার কিন্তু ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে৷ বলা হলো, ‘‘ও যেহেতু টেস্ট খেলতে চায়, তাহলে ছাড়পত্র নিয়ে চিন্তা করবো৷’’ সাকিব কিন্তু একবারও বলেনি ওই সময়ে সে টেস্ট খেলতে চাচ্ছে৷ ও বলেছে, চিঠিতে কী লিখেছে সেটা৷ আমি চিঠিতে লিখেছি, ‘‘আমি ওই সময়ে ছুটি চাই৷ বলিনি টেস্ট খেলতে চাই না৷’’ তখন বোর্ড ধরে নিয়েছে, সাকিব টেস্ট খেলতে চায় না৷ ওটা নিয়ে অনেক  কথা হয়েছে৷ জনমত তৈরি করার চেষ্টা করেছে বোর্ড৷ অভিমান থেকে বলেছে, ‘‘যে অনুমোদন চাইবে তাকেই দিয়ে দেবো৷ যার ইচ্ছে খেলবে, যার ইচ্ছে খেলবে না৷’’ অভিভাবক হয়ে এত আবেগপ্রবণ হলে তো চলবে না৷ শক্ত হাতে জিনিসগুলো হ্যান্ডেল করতে হবে বোর্ডকে৷ মিডিয়ার সামনে বোর্ডেও মুখোপাত্র আসেনি ঠিক আছে৷ কিন্তু যারাই এসেছে তাদেরও ঠিকভাবে উপস্থাপন করা উচিত ছিল৷ ও তো বলেনি ও শ্রীলঙ্কা যেতে চায়৷ যদি না বলে থাকে তাহলে এই প্রশ্নটা কেন আসছে, অনাপত্তিপত্র নিয়ে আমরা ভাববো- এটা পেশাদরিত্বের কোনো কথা হলো না৷ আমার মনে হয়, একই অর্গানাইজেশনে কিছু মতদ্বৈততা থাকতে পারে৷ সবাই সবার জন্য ভালো হবে না৷ এগুলো ‘ক্লোজ ডোর’ শেষ করে ফেললে ভালো হয় বলে আমি মনে করি৷ এগুলো যত বাইরে আসবে, তত আমাদের দলের জন্য খারাপ৷ একটা দল সিরিজ খেলতে গেছে৷ দেশে ফিরে আবার শ্রীলঙ্কায় যাবে৷ অনেক খেলা আছে৷ যতই কথা হবে ততই তিক্ততার সম্পর্ক হবে৷ এতে করে কেউই লাভবান হবে না৷

ক্রিকেটারদের হ্যান্ডেল করার জায়গাগুলোতে সেনসিটিভ পার্সন দেওয়া উচিত?

অবশ্যই পেশাদারিত্বের ভেতর থেকে করা উচিত, যে কথা আমি আগেও বলেছি৷ জিনিসগুলো বাইরে না এনে ভেতরেই সমাধান করলে ভালো৷

সাকিবের পর মাশরাফিও বোর্ডের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে৷ তিনি অভিযোগ করেছেন, তার মত একজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়ার আগে কিছু বলা হয়নি৷ বিসিবির পেশাদারিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মাশরাফি৷

মাশরাফি নিঃসন্দেহে জিনসগুলো খুব কাছ থেকে দেখেছে৷ টি-টোয়েন্টি থেকে হঠাৎ করে তার অবসরের ঘটনায় আমরা একটু অবাকই হয়েছিলাম৷ ওয়ানডে খেলবে কি খেলবে না বোঝা যাচ্ছিল না৷ জিনিসগুলো ওর মুখ থেকে শুনলাম৷ বিষয়গুলো অবাক করার মতোই৷ মাশরাফীর মতো ক্রিকেটার যে এত বছর খেলেছে তার সঙ্গে সব ব্যাপারে আলাপ করা উচিত৷ তার সঙ্গে আলাপ করার পর সে যদি পদক্ষেপ না নেয় তাহলে তুমি পদক্ষেপ নিতে পারো৷ ও তো বলছে কোনো আলাপই হয়নি৷ সেদিক থেকে একটু শকিং৷