ব্রাসেলসের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে চলেছে লন্ডন?
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩অন্যান্য অনেক দেশের মতো করোনা সংকট ও ইউক্রেন যুদ্ধের মতো ঘটনা ব্রিটেনেরও অর্থনীতি ও জনজীবনের উপর প্রভাব রেখেছে৷ কিন্তু অ্যামেরিকা ও ইউরোপ সেই ধাক্কা অনেকটাই সামলে উঠে সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধির মুখ দেখছে৷ এমনকি কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া এখনো প্রবৃদ্ধির পথে চলেছে৷ শুধু ব্রিটেনই মন্দার কবলে পড়েছে, যার জন্য ব্রেক্সিটকে দায়ী করা হচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের পর সেই রাষ্ট্রজোটের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য নাটকীয় মাত্রায় কমে যাওয়ায় ব্রিটেনের আজ এমন দূরাবস্থা৷
ব্রেক্সিট চুক্তির আওতায় উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নিয়ে ইইউ-র সঙ্গে বিরোধও ব্রিটেনের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে৷ ‘দ্য টেলিগ্রাফ' সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী সেই বিরোধ মেটাতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দুই পক্ষ নতুন এক বোঝাপড়ার ঘোষণা করতে চলেছে৷ নতুন সমাধানসূত্রের আওতায় যে সব পণ্য যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশে প্রবেশ করবে, শুল্ক বিভাগকে সেগুলি আলাদা করে পরীক্ষা করতে হবে না৷ ‘রেড লেন' ও ‘গ্রিন লেন' ব্যবস্থার মাধ্যমে সেগুলি দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে বলে ‘দ্য টেলিগ্রাফ' দাবি করছে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর অবশ্য এখনো সেই খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় নি৷
উল্লেখ্য, ইইউ-র একক বাজারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০২১ সালে নর্দান আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল কার্যকর করা হয়েছিল৷ এর আওতায় ব্রেক্সিটের পরেও ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশকে কার্যত ইইউ-র একক বাজারে রেখে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে যুক্তরাজ্যের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেই প্রদেশের মধ্যে এক শুল্ক সীমা সৃষ্টি হয়েছে৷ বরিস জনসনের সরকার সেই চুক্তি স্বাক্ষর করলেও চুক্তির সব শর্ত কার্যকর করতে বার বার অস্বীকার করেছে৷ ফলে ব্রাসেলস ও লন্ডনের মধ্যে মনোমালিন্য দুই পক্ষেপ সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলেছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এমন বিরোধের কালো ছায়া উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজনীতি জগতেও উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে৷ সেই প্রদেশে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা করতে ‘গুড ফ্রাইডে' চুক্তির আওতায় ক্ষমতা বণ্টনের এক কাঠামো রয়েছে৷ কিন্তু ব্রেক্সিট সংক্রান্ত বিরোধের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ডে আঞ্চলিক নির্বাচনের এক বছর পরেও সরকার গঠন করা সম্ভব হয় নি৷ ২০২৩ সালের ১৯শে জানুয়ারির সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পর যুক্তরাজ্যের সরকার ২০২৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছে৷ সর্বশেষ নির্বাচনে ক্যাথলিক ‘শিন ফেন' দলের জয়ের পর প্রোটেস্টান্ট ডিইউপি দল ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল'-এর বিরোধিতা করে সরকার ত্যাগ করেছিল৷ ‘গুড ফ্রাইডে' চুক্তির ২৫ বছর পূর্তির আগেই সেই জট ছাড়ানো সম্ভব হবে বলে যুক্তরাজ্যের সরকার আশা করছে৷ তবে ইইউ-র সঙ্গে নতুন বোঝাপড়া পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)