1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানীর ছত্রাকের রহস্যময় জগত উন্মোচন

৩০ এপ্রিল ২০২১

ছত্রাক সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের জ্ঞান বেশ সীমিত৷ কারণ বেশিরভাগ ছত্রাকই চোখে দেখা যায় না৷ এক ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ছত্রাকের বিস্ময়কর জগতের রহস্য উন্মোচন করে অনেক নতুন তথ্য তুলে ধরছেন৷

https://p.dw.com/p/3smYp
Symbolbild I Magic Mushrooms
ছবি: David Herraez Calzada/Zoonar/picture alliance

মার্লিন শেলড্রেক মাশরুমের খোঁজে বের হন৷ সেটা তার কাজের অংশ৷ লন্ডনের এই জীববিজ্ঞানী মাইকোলজি অর্থাৎ মাশরুম সংক্রান্ত বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ৷ কারণ খালি চোখে যা দেখা যায়, সে তুলনায় অনেক বেশি ছত্রাক চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে৷ এমনই একটি নমুনা তুলে ধরে শেলড্রেক বলেন, ‘‘এটিকে টিন্ডার ফাংগাস বা হর্স-শু ফাংগাস বলা হয়৷ এই ছত্রাকের অসাধারণ ইতিহাস রয়েছে৷ মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে নানাভাবে এটি ব্যবহার করছে৷''

এই মাশরুম ঔষধি হিসেবেও কাজে লাগানো হয়৷ যেমন এই মাশরুম ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালী করে মৌমাছির ঝাঁকের মৃত্যু এড়াতে সহায়তা করতে পারে৷ মার্লিন শেলড্রেক মনে করেন, ‘‘আসলে প্রাণী ও উদ্ভিদের মতো ছত্রাক জগতের বৈচিত্র্যও কম নয়৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে বেশিরভাগ ছত্রাক কিন্তু মাশরুম উৎপাদন করে না৷ কিছু ছত্রাক প্রলম্বিত হয়ে যে মাশরুম সৃষ্টি করে, সেটা আসলে ফলের মতো৷’’

সত্যি ছত্রাক সব জায়গায় পাওয়া যায় – মাটিতে, আকাশে, এমনকি আমাদের শরীরের মধ্যেও৷ ছত্রাক ছাড়া অনেক জীবের অস্তিত্বই থাকতো না৷ সত্যি বলতে কি ছত্রাক ছাড়া এই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বই সম্ভব হতো না৷ কিন্তু ছত্রাক কীভাবে বাঁচে? শেলড্রেক জানালেন, ‘‘বেশিরভাগ ছত্রাক মাইসিলিয়াম হিসেবে জীবনের বেশি অংশ কাটায়৷ চোঙার মতো কোষের শাখাপ্রশাখার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছত্রাক খোরাক সংগ্রহ করে৷’’

একমাত্র মাইক্রোস্কোপ দিয়েই বেশিরভাগ মাইসিলিয়াম দেখা যায়৷ এই ছত্রাক ধুলিকণার উপর গজায়৷ আবার বিশাল আকারও ধারণ করতে পারে৷ অ্যামেরিকার ওরিগন রাজ্যে দুই হাজার বছরের বেশি পুরানো মাইসিল নেটওয়ার্ক প্রায় নয় বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে৷ বিশ্বের অন্যতম বিশাল জীব হিসেবে সেটি পরিচিত৷

ছত্রাকের যত রহস্য

তেমন চর্চার বিষয় না হলেও ছত্রাক বিস্ময়কর এক জীব৷ ‘ছত্রাক নিয়ে লেখা নিজের বইয়ে মার্লিন শেলড্রেক এই জীবকে পৃথিবীর গোপন শাসক বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ কারণ ব্যাখ্যা করে মার্লিন শেলড্রেক বলেন, ‘‘আমি শুধু মাশরুম এবং ছত্রাক থেকে মাশরুম সৃষ্টি নিয়ে কথা বলতে চাই নি৷ যে ছত্রাক মাশরুম সৃষ্টি করে না, এমন জীব সহজে চোখে পড়ে না, অথচ সেটি জীবনের বিবর্তনের চাবিকাঠি৷ ছত্রাকের নেটওয়ার্ক নিয়ে আমি অনেক ভাবনাচিন্তা করেছি৷ আমরা সরাসরি সচেতন না হলেও ছত্রাক আমাদের চারিপাশের জগতের অনেকটা জুড়েই রয়েছে৷’’

ছত্রাক যে সত্যি সব জায়গায় গজিয়ে উঠতে পারে, মার্লিন শেলড্রেক এক পরীক্ষার মাধ্যমে তা প্রমাণ করছেন৷ তিনি মাইসিলিয়ামের প্রলেপ দেওয়া একটি বইয়ের উপর অয়েস্টার মাশরুম বেড়ে উঠতে দিয়েছেন৷ ইলেকট্রনের মাধ্যমে তিনি সেই মাশরুম গজানোর শব্দও ধারণ করেছেন৷ তার ভাই সেই শব্দের ভিত্তিতে ‘এন্ট্যাংগলড লাইফ' নামের গান সৃষ্টি করেছেন৷

ছত্রাকের জটিল জগত আরও ভালোভাবে বুঝতে ও অন্যদের বোঝাতে মার্লিন শেলড্রেক নানা পদ্ধতি কাজে লাগান৷ তার মতে, সংগীত আসলে শিল্প ও বিজ্ঞানের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটায় এবং তার মাথায় নিত্যনতুন আইডিয়ার জন্ম দেয়৷ শেলড্রেক বলেন, ‘‘ছত্রাকের জীবন কল্পনা করা সত্যি কঠিন৷ যে পরিবেশ তাদের সুযোগগুলিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেটি আমাদের তুলনায় একেবারে ভিন্ন৷ তাই নিজেকে ছত্রাকের জায়গায় কল্পনা করতে আমাকে নানা ধরনের রূপক ও ভাবনার আশ্রয় নিতে হয়েছে৷ অবশ্যই কখনো তা জানতে পারবো না৷ কিন্তু সেই চেষ্টা করার সার্থকতা আছে বৈকি৷ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও আত্মকেন্দ্রিকতা ছেড়ে নিজেদের অন্য জীবের জায়গায় কল্পনা করা উচিত৷’’

তার বই ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেছে এবং একাধিক পুরস্কার পেয়েছে৷ মার্লিন শেলড্রেক গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে ছত্রাকের বিস্ময়কর জগত উন্মোচন করছেন৷

ডিয়ানা ওসিনস্কি/এসবি