1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত সীমান্তে লিপুলেখ পাসে সেনা বাড়াল চীন

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
৩ আগস্ট ২০২০

লাদাখের পর এ বার লিপুলেখ পাসে নতুন করে ভারত-চীন উত্তেজনা শুরু হলো। ওই অঞ্চলে সেনা বাড়িছে চীন। ভারতও সেনা মোতায়েন করেছে।

https://p.dw.com/p/3gJ14
ছবি: DW/S. Ghosh

চীন ভারত সম্পর্ক আরও জটিল জায়গায় পৌঁছল। লাদাখ থেকে এ বার উত্তারখণ্ড সীমান্তে পৌঁছল উত্তাপ। বস্তুত, এই অঞ্চলে আগেই নেপালের সঙ্গে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ভারতের। এ বার তাতে সামিল হলো চীনও।

ভারতীয় উপমহাদেশে লিপুলেখ পাস অত্যন্ত স্ট্র্যাটেজিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর একদিকে নেপাল, এক দিকে চীন এবং এক দিকে ভারত। এই পাস দিয়েই চীনের মানস সরোবরে যাত্রা করেন হাজার হাজার পূণ্যার্থী। গত সপ্তাহে সেই লিপুলেখ পাসের খুব কাছেই প্রায় এক হাজার সৈন্য বৃদ্ধি করেছে চীন। পাসের একেবারে ধার ঘেঁষে সেই সৈন্য মজুত করা হয়েছে বলে ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছে। সময় নষ্ট না করে ভারতও ওই সীমান্তে সৈন্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে। ফলে লাদাখে চলতি ভারত-চীন সংঘাত নতুন মোড় নিল বলে মনে করছেন অনেকেই। বলা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার সীমান্তের প্রতিটি অঞ্চলেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে চীন। লিপুলেখ পাসের ঘটনা তারই প্রমাণ।

লিপুলেখ পাস নিয়ে সমস্যা শুরু হয়েছে অবশ্য আরও আগে। কিছু দিন আগে আচমকাই লিপুলেখ, কালাপানি অঞ্চল নিজেদের ম্যাপে ঢুকিয়ে নেয় নেপাল। নেপাল সংসদে সেই নতুন মানচিত্রের বিল পাশও করিয়ে নেওয়া হয়। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ওই অঞ্চলটি বরাবরই নেপালের। ভারত জোর করে তা নিজেদের বলে দাবি করে। নেপালের এই কাজের পিছনেও একটি ঘটনা রয়েছে। ভারত উত্তরাখণ্ডে একটি নতুন রাস্তা তৈরি করেছে। যা লিপুলেখ পাস পর্যন্ত বিস্তৃত। ভারতের দাবি, মানস সরোবরের যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্যই ওই রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নেপাল দাবি করে, রাস্তাটি নেপালের ভিতর দিয়ে তৈরি করেছে ভারত। তার পরেই লিপুলেখ এবং কালাপানি নেপালের মানচিত্রে যুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে ওলি একের পর এক ভারতবিরোধী মন্তব্য করতে শুরু করেন। ভারতীয় নিউজ চ্যানেলও নেপালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

ওলির এই কাজ নিয়ে নেপালের রাজনীতিও উত্তাল হয়ে উঠেছে। তাঁর দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ভিতরেই স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়ে গিয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড প্রকাশ্যে ওলির সমালোচনা করেছেন। তাঁর ইস্তফা দাবি করেছেন এবং ভারতের সঙ্গে নেপাল সরকারের সুসম্পর্ক বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ওলি সে কথা মানতে চাননি। কার্যত দলের বিরুদ্ধে গিয়েই একের পর এক পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকরই বক্তব্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি এবং সরকার ওলিকে এই শক্তি দিচ্ছে। তাদের মদতেই দলের বিরুদ্ধে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন ওলি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি চীন এবং নেপালের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নত করার প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। ওলি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নতুন ম্যাপ তাঁরা জাতি সংঘ, গুগল এবং বারতের কাছে পাঠাবে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘ দিন ধরে নেপাল এবং ভুটানকে 'ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করেছে ভারত। চীনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতে নেপাল এবং ভুটান ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুইটি স্ট্র্যেটেজিক পয়েন্ট। লাদাখযে কারণে, দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক খুবই নিবিঢ়। দুইটি দেশকেই বহু সুযোগ সুবিধা দেয় ভারত। ভুটানে ভারতের সেনা বাহিনীও মজুত আছে।

এই পরিস্থিতিকে ভারতকে চাপে ফেলতে গেলে নেপাল এবং ভুটানকে প্রয়োজন চীনের। কূটনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করছেন এই কারণেই নেপালের ওলি সরকারকে মদত দিচ্ছে চীন। এবং সেই সুযোগেই লিপুলেখ পাসের কাছে নেপালের সহযোগিতায় সেনা মোতায়েন করতে পেরেছে তারা। উত্তর-পূর্বে অরুণাচল সীমান্তেও চীনের সেনা তৎপরতা বেড়েছে বলে ভারতীয় সেনা বাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে।

ফলে ভারত-চীন সংঘাত এখন আর কেবল লাদাখে সীমাবদ্ধ বলা যাবে না। প্রায় প্রতিটি ফ্রন্টেই উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। সেনা সূত্র জানাচ্ছে, সাম্প্রতিক গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, পাকিস্তানের সঙ্গেও কূটনৈতিক আলোচনা শুরু হয়েছে চীনের। ভারত-পাক সীমান্তে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকেরই ধারণা।

বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ বলছে, বছরের শেষ পর্যন্ত এ ভাবেই উত্তেজনা ক্রমশ ছড়াতে থাকবে। শীতে বড়সড় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। যদিও সকলে এই মতের সঙ্গে সহমত নন।

লাদাখে ভারত-চীন সেনা স্তরের বৈঠক অবশ্য এখনও জারি আছে। রোববারেও একটি বৈঠক হয়েছে। সূত্র জানাচ্ছে, সেই বৈঠকেও লাদাখের প্যাংগং লেকের চার থেকে আট ফিঙ্গার পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সমাধান সূত্র এখনও মেলেনি।

সমাধানসূত্র মেলার সম্ভাবনাও দেখছেন না বহু বিশেষজ্ঞ। তাঁদের বক্তব্য, এটাও একরকম সময় কেনার স্ট্র্যাটেজি। একদিকে আলোচনা অন্য দিকে উত্তেজনা-- এই স্ট্র্যাটেজিতেই এগোতে চাইছে চীন।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো