1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতীয় না বাংলাদেশি, বিতর্কে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৫ জুন ২০১৯

‘বেদের মেয়ে জোসনা’ অঞ্জু ঘোষের নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক৷ তিনি বিজেপিতে যোগদানের পর বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ বিরোধীদের অভিযোগ, অভিনেত্রী বাংলাদেশের নাগরিক৷ অভিযোগ খারিজ করে নথি তুলে ধরেছে বিজেপি৷

https://p.dw.com/p/3KVlF
Bangladesch Schauspielerin Anju Ghosh wird BJP Mitglied
ছবি: DW/P. Samanta

১৯৮৯ সালে একটি বাংলা ছবি সাড়া জাগিয়েছিল৷ ছবির নাম ‘বেদের মেয়ে জোসনা’৷ তাঁর অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ কার্যত স্মৃতির অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন৷ তিনি রাজনীতির পথে চলা শুরু করতেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন৷ সম্প্রতি তিনি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-তে যোগ দিয়েছেন৷ কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে তাঁর হাতে পতাকা তুলে দেন বিজেপির প্রদেশ সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ অভিনেত্রীকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন৷ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ভালো ফল করার পর এই দলে যোগদানের ঢল নেমেছে৷ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা যোগ দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদীর দলে৷ সেই ধারাতেই অঞ্জুর যোগদান৷

অঞ্জু পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত৷ যদিও তিনি দীর্ঘদিন সল্টলেকে থাকেন৷ তিনি বিজেপিতে যোগদানের পরই সমালোচনা শুরু করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস৷ তাদের বক্তব্য, ভিনদেশের নাগরিককে দলে নিয়েছে বিজেপি৷ অঞ্জু ঘোষ বাংলাদেশের নাগরিক৷ তিনি সেই দেশের ছবিতে অভিনয় করেন, সেখানকার চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত৷ এমন ভিনদেশিকে দলে নেওয়া দেশবিরোধী কাজ৷ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে একই অস্ত্রে তৃণমূলকে নিশানা করেছিল বিজেপি৷ তৃণমূলের প্রচারে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র তারকা ফিরদৌস ও গাজি আব্দুন নুরকে৷ সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ বাংলাদেশি অভিনেতাদের প্রচারের বিরুদ্ধে সরব হয়, নালিশ জানায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ৷ অন্য দেশের নাগরিক ভারতে এসে রাজনৈতিক প্রচারে অংশ নিতে পারেন না৷ এই দেশের রাজনৈতিক কার্যকলাপে তাঁরাই অংশ নিতে পারেন, যাঁরা এখানকার নাগরিক৷ তড়িঘড়ি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দুই অভিনেতাকে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দেয়৷

অঞ্জু ঘোষের বিজেপিতে যোগদানে বিতর্কের কিছু নেই: রামকৃষ্ণ পাল

সেই ঘটনায় ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস৷ সেই অস্ত্রই তারা ব্যবহার করেছে বিজেপির বিরুদ্ধে৷ উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত একটি দলের কাছে বিষয়টি বেশ অস্বস্তিকর৷ তাই বিজেপি দ্রুত পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দেয়৷ জয়প্রকাশ মজুমদার অঞ্জু ঘোষের জন্মের শংসাপত্র, প্যান কার্ডের মতো নথি তুলে ধরে দাবি করেন, অভিনেত্রী ভারতীয়৷ তাঁর পিতা সুধন্য ঘোষ বাংলাদেশের মানুষ হলেও মা বীণাপাণি ঘোষ কলকাতায় থাকেন৷ অঞ্জু নিজে সল্টলেকে রয়েছেন বহু দিন৷ এ ছাড়া যাঁর জন্মের শংসাপত্র, প্যান কার্ডের মতো সরকারি নথি রয়েছে, তাঁকে কী ভাবে বিদেশি বলা যায়? অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷

বিজেপির ব্যাখ্যায় বিতর্ক থামছে না৷ কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের শংসাপত্র অনুযায়ী, শহরের একটি নার্সিংহোমে ১৯৬৬ সালে জন্ম অভিনেত্রীর৷ অথচ তাঁর প্যান কার্ডে জন্মের সাল ১৯৬৭৷ জন্মের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে করা হয়েছে ২০০৩ সালে৷ তৃণমূলের প্রশ্ন, জন্মের তারিখে গরমিল রয়েছে কেন? কেনই বা জন্মের এত বছর পর কলকাতা পুরসভা থেকে শংসাপত্র নেওয়া হয়েছে৷ এর অর্থ, অভিনেত্রী বাংলাদেশেই কাটিয়েছেন, সেখানেই তাঁর যাবতীয় কাজকর্ম৷ (উইকিপিডিয়ায় অঞ্জু ঘোষের জন্মস্থান বাংলাদেশই আছে৷) বিরোধীদের বক্তব্য, জাতীয় নাগরিকপঞ্জির মাধ্যমে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার ডাক দিয়েছে৷ বাংলাদেশিদের নিশানা করেই এই প্রচার বিজেপি চালিয়েছে লোকসভা নির্বাচনে৷ সেই দল বাংলাদেশের নাগরিককে কী ভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করছে?

বিজেপি অবশ্য এর মধ্যে বিতর্কের কিছু দেখছে না৷ দলের নেতা রামকৃষ্ণ পাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বার্থ সার্টিফিকেট আর প্যান কার্ডে জন্মের তারিখ আলাদা বলে তিনি ভারতীয় নন, এই যুক্তি হাস্যকর৷ আমাদের আশপাশে এমন বহু মানুষ আছে, যাদের বিভিন্ন সরকারি পরিচয়পত্রে আলাদা আলাদা জন্মতারিখ লেখা আছে৷’’ তাঁর মতে, ফিরদৌসদের সঙ্গে অঞ্জুর তুলনা করা অবান্তর৷ রামকৃষ্ণের বক্তব্য, ‘‘ওঁরা বিখ্যাত বাংলাদেশি তারকা৷ সবার এটা জানা৷ অঞ্জু ঘোষ দীর্ঘদিন ভারতে থাকেন, এটা কি তৃণমূল জানে না?’’