1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে এক প্রতিবন্ধী দম্পতির কঠিন জীবন

৫ জুলাই ২০১৮

ইউরোপ-অ্যামেরিকায় প্রতিবন্ধী হিসেবে রাষ্ট্র ও সমাজের অনেক সহায়তা পাওয়া যায়৷ ভারতের মতো দেশে সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগেই তাঁদের সব কাজ করতে হয়৷ দিল্লির এক দম্পতি প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অসাধ্যসাধন করছেন৷

https://p.dw.com/p/30uHk
Indien Polio Patientin
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images

আনন্দের মুহূর্ত, কখনো হতাশা, তবে ভালোবাসাও কম নয়৷ রান্নাঘর এমনভাবে সাজানো, যাতে হুইলচেয়ারে বসেও সবকিছু নাগালের মধ্যে থাকে৷ অচলা মাগোর বয়স ৩০৷ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি পক্ষপাতগ্রস্ত হিসেবে জীবন কাটাচ্ছেন৷ স্বামী দীপক ও তাঁর জন্য ভারতে এমন জীবনযাত্রা মোটেই সহজ নয়৷

দিল্লি শহরে একতলায় ছোট্ট ফ্ল্যাটটি তাঁরা প্রতিবন্ধীদের উপযোগী করে সাজিয়ে তুলেছেন৷ কোনো সাহায্য ছাড়াই তাঁরা সবকিছু নিজেরাই সামলে নেন৷ অচলা বলেন, ‘‘রাষ্ট্র কোনোরকম সাহায্য করে না৷ এমনকি বাসায় কাজের লোকও নেই৷ সেই চেষ্টাও করিনি৷ এমন আবেদন করে কোনো লাভ হতো না৷''

সেই ৮ বছর বয়স থেকেই অচলা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রয়েছেন৷ সে সময়ে পিঠে এক অপারেশনের প্রয়োজন হয়েছিল৷ কিন্তু ডাক্তার ভুল করে একটি স্নায়ু কেটে দেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অচলা বলেন, ‘‘খুবই কঠিন সময় গেছে৷ সব সময়ে মনে হতো, বাকি সবাই কীভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে আর আমাকে শুধু কষ্ট পেতে হচ্ছে? মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে হতো৷ ডায়রি লিখতাম৷ এমনকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছি৷ নিজেকে বার বার প্রশ্ন করেছি, আমি কেন, আমার সঙ্গে কেন এমন হলো?''

অচলা ও দীপক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন৷ দীপক জন্ম থেকেই পক্ষপাতগ্রস্ত৷ পরিবারে প্রতিবন্ধী থাকলে ভারতে রাষ্ট্রীয় সহায়তার কোনো ব্যবস্থা নেই৷ অচলা ও দীপক স্কুল শেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন৷ দীপক মাগো বলেন, ‘‘সে ছিল কঠিন সংগ্রাম৷ আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান৷ বাবার উপার্জন ছিল কম৷ চার ভাইবোন৷ সবসময়ে টাকাপয়সার অভাব থাকতো৷''

ফেসবুকে দু'জনের আলাপ হয়েছিল৷ বছরখানেক আগে তাঁরা বিয়ে করেন৷ ভারতে এখনো অনেক ক্ষেত্রে বাবামারাই ছেলেমেয়েদের বিবাহ স্থির করেন৷ প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সেটা কার্যত অসম্ভব৷ কারণ পরিবার বা বন্ধুবান্ধব এ কাজে সাহায্য করেন না৷ প্রতিবন্ধকতা সমাজে কলঙ্ক হিসেবে বিবেচিত হয়৷

অচলা এমন এক গাড়ি কিনতে পেরেছেন, যা শুধু হাত দিয়ে চালানো যায়৷ গত বছর তিনি এক দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন৷ তার বেশ কিছুদিন পরেও তিনি গাড়িতে হাত দেবার সাহস পান নি৷ তবে তিনি দমে যাবার পাত্র নন৷ এখন তিনি আবার গাড়ি চালিয়ে অফিস যান৷ অচলা মাগো বলেন, ‘‘চাকুরি পাওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ৷ আমি সরকারি চাকুরি করি, সেটা কোনোমতে সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু আমার স্বামী বেসরকারি খাতে কাজ করেন৷ প্রতিবন্ধী হিসেবে সেখানে কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব৷ কতবার ইন্টারভিউ দিয়েও ফল হয়নি৷ কোম্পানিগুলি সোজাসুজি বলে দেয়, যে তারা প্রতিবন্ধীদের গ্রহণ করতে চায় না৷''

সন্ধ্যায় অচলা এক পার্টিতে অতিথি হিসেবে গেছেন৷ সেখানে অবিবাহিত প্রতিবন্ধীদের দেখাসাক্ষাৎ হয়৷ অচলাই এখানে হাতে গোনা বিবাহিতদের একজন৷ তবে তিনি নিজের মতো মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ভালোবাসেন৷ মনের সুখে কারাওকি সুরের তালে গান গাইতে পছন্দ করেন তিনি৷ অচলা বলেন, ‘‘এখানে বেশিরভাগ মানুষই স্বাভাবিক জীবনসঙ্গী পাবার স্বপ্ন দেখেন৷ বিশেষ করে তরুণরা সেটাই চান৷ পরিবারের প্রত্যাশা হলো, প্রতিবন্ধী নয়, এমন স্ত্রী ঘরে আসবে৷''

পার্টির শেষে বেশিরভাগ মানুষ তাঁদের নিঃসঙ্গ জীবনে ফিরে যাচ্ছেন৷ অচলার স্বামী ঘরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন৷ ভারতে অনেক প্রতিবন্ধীর তেমন সৌভাগ্য হয় না৷

পেটার গেয়ারহার্ট/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান