1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে মন্দিরে প্রবেশেও লিঙ্গ-বৈষম্য

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৩ জানুয়ারি ২০১৮

কেরালার সবরীমালায় আয়াপ্পা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলো৷ বলা হলো, মহিলারা যে বয়স পর্যন্ত ঋতুবতী থাকেন, সেই বয়স পর্যন্ত তাঁরা অপবিত্র৷ তাই ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ৷

https://p.dw.com/p/2qlF2
ছবি: Reuters/Olivia Harris

এমনটাই বিধান মন্দির কর্তৃপক্ষের৷ অর্থাৎ মন্দিরে প্রবেশেও সেই লিঙ্গ-বৈষম্য৷ ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালার সবরীমালায় পাহাড়ের ওপর স্থাপিত বিখ্যাত আয়াপ্পা মন্দিরে প্রবেশের জন্য মহিলা ভক্তদের দেখাতে হবে বয়সের প্রমাণপত্র৷ যে বয়সে একটি মেয়ে ঋতুবতী হয় এবং যে বয়স পর্যন্ত সেটা থাকে জৈবিক নিয়মে, সেই বয়স পর্যন্ত তাঁদের অশুচি, অপবিত্র বলে গণ্য করা হয়৷ সেকারণেই মন্দিরে তাঁদের প্রবেশ নিষেধ৷ সেই হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ ৫০ বছরের পর সাধারণতঃ ঋতু নিবৃত্তি হয়ে থাকে৷ মন্দিরের পরিচালন কর্তৃপক্ষ ত্রিবাঙ্কুর দেবাস্থানম বোর্ড এই নিষেধাজ্ঞা জারী করে বলেছে, বিশেষ বিশেষ তিথিতে আয়াপ্পা মন্দির দর্শনে আসে হাজার হাজার মহিলা৷ তখন তাঁরা এই নিষেধাজ্ঞা মানে না৷ যেমন, তিন মাসব্যাপী বাত্সরিক তীর্থ যাত্রা শুরু হয় তিন পর্যায়ে৷ এ বছর তা শেষ হবে আগামী ১৪ই জানুয়ারি মকরভিলাক্কু (মকর সংক্রান্তি) উত্সবে৷ ঋতুকালীন বয়সসীমার কোনো মেয়ে বা মহিলার সবরীমালার আয়াপ্পা মন্দিরে পূজা দেওয়া নিষিদ্ধ৷ কারণ, মন্দিরের বিগ্রহ আয়াপ্পাকে অবিবাহিত ব্রম্মচারী বলে মানা হয়৷

মন্দির কর্তৃপক্ষের প্রধান পদ্মকুমার বলেছেন, বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে দেখাতে হবে আধারকার্ডসহ বার্থ সার্টিফিকেট৷ সবরীমালা পাহাড়ের ওপর মন্দির দর্শনের আগে পাহাড়ের নীচেই বয়সের প্রমাণপত্র পরীক্ষা করা হয়৷ কারণ, দেখা গেছে, ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি অনেক মহিলা মন্দিরে ঢুকে পড়েন৷ অনেক সময় বয়স নিয়ে মন্দির কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে বচসা, ঝগড়াঝাটি হয়৷ মেয়েদের সঙ্গে পুরুষ অভিভাবকরা যে বয়সটা বলেন, মন্দির কর্তৃপক্ষের তা বিশ্বাস হয় না৷ শুরু হয় বচসা৷ সম্প্রতি বয়স নিয়ে তর্কাতর্কির পর শেষ পর্যন্ত বয়সের প্রমাণপত্রে দেখা যায়, মেয়েটির বয়স ১১ বছর, অর্থাৎ নির্ধারিত বয়স সীমার চেয়ে এক বছর বেশি৷ মেয়েটিকে যেতে দেওয়া হয়নি৷ সবরীমালা মন্দির বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদ্মকুমার আরো জানান, চলতি মহাতিথিতে, যেটা শুরু হয় গত বছরের নভেম্বর মাসে, ১০ থেকে ৫০ বছর বয়স সীমার ২৬০ জন মহিলাকে মন্দিরে যেতে দেওয়া হয়নি৷ তবে এদের অনেকের হয়ত সবরীমালা মন্দিরের নিয়মবিধি জানা ছিল না৷ মহিলাদের মধ্যে বেশি আসেন, কেরালা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটক থেকে৷

ধর্মবিশ্বাস আর আচরণে এই বিপ্রতীপ অবস্থান মুসলিম সমাজেও আছে৷ মুম্বাইয়ের বিখ্যাত পীর হাজি আলি দরগার মাজারে মুসলিম মহিলাদের ঢোকা বারণ৷ ধর্মস্থানেও এই লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় মুসলিম মহিলা জাকিয়া সোমান এবং নূরজাহান নিয়াজ৷ এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুম্বাই হাইকোর্টে মামলা করেন৷ বলেন, ‘‘এটা ভারতের নাগরিক হিসেবে তাঁদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার লংঘন৷ সেকেলে পুরুষতান্ত্রিকতা কখনোই পুরুষ মহিলাদের সম-অধিকার কেড়ে নিতে পারে না৷'' মুম্বাই হাইকোর্ট মহিলাদের পক্ষে রায় দেন৷ হাজি আলি ট্রাস্ট সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে সুপ্রিম কোর্টও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন৷ পাঁচ বছর পর মুসলিম মহিলারা হাজি দরগায় প্রবেশের অধিকার অর্জন করেন৷ 

এই লিঙ্গ-বৈষম্য ও পুরুষতান্ত্রিকতা  মহারাষ্ট্রের শনি মন্দিরেও আছে৷ ঐ শনিদেবের মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ৷ পুরুষ পুরোহিতদের বিধান শনি মন্দিরে নারী প্রবেশ করলে অমঙ্গল হয়৷ মুম্বাই হাইকোর্টের রায় হিন্দু মন্দিরের ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য হচ্ছে না কেন সেটাই প্রশ্ন৷

ঋতুকালীন কয়েকটা দিনে মহিলারা নিজেরাই মন্দিরে প্রবেশ করেন না বা পুজা ইত্যাদি দেন না৷ আসলে ঋতুস্রাবকে সমাজে অপবিত্রের ঘেরাটোপে বেঁধে রাখা হয়েছে বহুকাল ধরেই৷ শুধু ধর্মস্থানে প্রবেশ নিষিদ্ধ নয়, কোনো পারিবারিক শুভকাজেও তাঁদের অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ৷ রান্নাবান্না খাওয়াতেও এই অন্ধ বিশ্বাস আজও কাজ করে৷ প্রান্তিক এলাকায় এমনও দেখা গেছে, পিরিয়ডকালে তাঁদের রাখা হয়েছে গোয়াল ঘরে বা অস্বাস্থ্যকর জায়গায়৷ ফলে নানা রকম সংক্রমণের শিকার হয়ে পড়েন তাঁরা৷ কিছুদিন আগে নেপালে একটি কিশোরীকে উঠানের কোণায় একটা ঘরে রাখা হয়৷ সেখানে রাতে সাপের কামড়ে সে মারা যায়৷