1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষায় কি অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৮ জানুয়ারি ২০১৭

ভারত সম্প্রতি অগ্নি-৪ এবং অগ্নি-৫ সিরিজের আন্তঃমহাদেশীয় পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপনাস্ত্রের চুড়ান্ত পরীক্ষায় সফল হয়েছে৷ চীন পরোক্ষে হুমকি দিয়ে বলেছে, ক্ষেপনাস্ত্র শক্তিতে পাকিস্তানকেও ভারতের সমকক্ষ করে তোলা হবে৷

https://p.dw.com/p/2VOvt
Indien Raketentest Agni V April 19
ছবি: Reuters

 

সম্প্রতি পরমাণু অস্ত্র বহনক্ষম দূর পাল্লার অগ্নি-৫ এবং অগ্নি-৪ ক্ষেপনাস্ত্রের চুড়ান্ত পর্যায়ের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপন করেছে ভারত৷ সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ৫০০০ এবং ৩০০০ কিলোমিটার পাল্লার এই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপনে চীন স্বভাবতই অখুশি, কারণ, চীন চাইছে, গোটা এশিয়ায় তার সামরিক এবং অর্থনৈতিক শক্তির একাধিপত্য কায়েম করতে৷ সেখানে কোনো দেশকে তা চ্যালেঞ্জ করার শক্তি অর্জন করতে দেওয়া হবে না৷ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ভারত মহাসাগরে চীনের পরমাণু ডুবোজাহাজের আনাগোনা বেড়েছে৷ উপগ্রহ ছবিতে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে চীনের পরমাণু সাবমেরিনকে নোঙ্গর করতে দেখা গেছে৷ ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্তাব্যাক্তিদের দৃঢ় বিশ্বাস, এশিয়া অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি সম্প্রসারিত করতে বেইজিংয়ের এটা পরিকল্পিত ছক৷ ভারত মহাসাগরে চীনের অ্যাটাক সাবমেরিনের উপস্থিতির লক্ষ্য, উদীয়মান শক্তি ভারতকে কোণঠাসা করা এবং ভারতের সুরক্ষা ব্যবস্থার স্ট্র্যাটিজিক্যালি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিকে খর্ব করা৷ এমনটাই মনে করে ভারতীয় নৌবাহিনী৷ তবে বলা হয়েছে, জলপথে চীনের নৌশক্তির গতিবিধির দিকে কড়া নজর রেখে চলেছে দিল্লি৷

অথচ ভারতের দূরপাল্লার পরমাণু অস্ত্র বহনক্ষম অগ্নি মিসাইল পরীক্ষা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে বেইজিং বলেছে, এর ফলে এশিয়া অঞ্চলে শক্তির স্ট্র্যাটিজিক ভারসাম্য এবং সুস্থিতি ক্ষুন্ন হবে৷ তাই পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানকেও ভারতের সমকক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে চীন৷ যদিও দূরপাল্লার এই ক্ষেপনাস্ত্র চীনের যে কোনো অঞ্চলে আঘাত হানতে সক্ষম৷ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মহল তাই মনে করছেন, অগ্নি-৪ এবং অগ্নি-৫-এর সফল উৎক্ষেপণে বেইজিং স্পষ্টতই যে চাপের মুখে, সেটা মুখে স্বীকার না করে চীন বলেছে ভারতকে সে তার প্রতিযোগী মনে করেনা৷ তাই ভারতকে চাপে রাখতে পাকিস্তানকে মিসাইল বানাতে সাহায্য করবে৷ চীনের সরকারি সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে যে, অগ্নি-৪ এবং অগ্নি-৫-এর মতো দূরপাল্লার মিসাইল ভারত যদি আরও তৈরি করে যায়, তাহোলে চীনও চুপ করে বসে থাকবে না৷ কূটনৈতিক পথে যেসব কথা সরাসরি বলা যায় না বা বলার বাধ্যবাধকতা আছে, সেসব ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদকীয়তে মত প্রকাশ করে থাকে বেইজিং৷ দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিতে সেই পথেই গেছে বেইজিং৷ পরোক্ষে দিল্লিকে পাল্টা হুমকি দিতে পাকিস্তানকে পরমাণু ক্ষেপনাস্ত্র বানাতে সাহায্য করার কথা বলেছে৷

 পাশাপাশি জাতিসংঘের উদ্দেশে চীন বলেছে, নিরাপত্তা পরিষদ যদি ভারতকে পরমাণু ক্ষেপনাস্ত্র বানানোর পথ থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয় তাহলে পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে না৷ ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মত, চীনের হাতেও তো আছে ১৩০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র৷ দ্বিতীয়ত, ভারত মিসাইল কন্ট্রোল রেজিমের আওতায় পড়ে না৷ আসলে  চীন চায় গোটা এশিয়ায় তার অপ্রতিরোধ্য সামরিক ক্ষমতা কায়েম করতে৷ অন্য দেশকে সমকক্ষ দেখতে চায় না৷ ভারত-চীন সীমান্তে বড় রকমের সংঘর্য না হলেও ভারতের বাণিজ্যিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে অন্যভাবে ভারতকে উত্যক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বেইজিং লাগাতার৷ ভারত-চীন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে ছোটখাটো বিবাদ লেগেই আছে৷

হালে বুদ্ধগয়ায় এক বৌদ্ধ ধর্মানুষ্ঠানে তিব্বতিদের ভারতে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, যেহেতু সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা দলাই লামার৷ শুধু তাই নয়, ভারতের প্রতিবেশি দেশগুলিকেও হাতে আনতে চেষ্টার কসুর করছে না৷ নেপাল, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উদার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দিল্লির প্রভাব নিষ্ক্রিয় করতে৷ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক অক্ষশক্তির সমীকরণে যুক্ত হোয়েছে এক নতুন মাত্রা৷ সামিল হয়েছে রাশিয়া৷ সেক্ষেত্রে ভারত তাকিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রে নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ভারত তথা এশিয়া নীতির দিকে৷ যুক্তরাষ্টের কৌশলগত সামরিক ক্ষমতা কোনদিকে মোড় নেবে? এদিকে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা গ্রাহ্য না করে পরমাণু মিসাইল পরীক্ষা শুরু করার কথা ঘোষণা করেছে৷

অগ্নি-৪ এবং অগ্নি-৫ পরমাণু অস্ত্র বহনক্ষম মিসাইল উৎক্ষেপন করা হয় ওড়িষার উপকূলবর্তী আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে৷ অগ্নি-৪ এবং অগ্নি-৫ ১৫০০ কিলোমিটার পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারবে৷ ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ডক্টর আবদুল কালাম রাষ্ট্রপতি হবার আগে ভারতের র ( ডিআরডিও) প্রাণপুরুষ ছিলেন৷ সফল উৎক্ষেপণের পর ডিআরডিওর এক বিবৃতিতে বলা হয়, এতে দেশের নিজস্ব মিসাইল টেকনোলজিতে আত্মনির্ভরতা বাড়বে এবং বহির্শক্তিগুলিকে নিরস্ত রাখবে৷ দূরপাল্লার পরমাণু মিসাইল গ্রুপে ভারত পাঁচটি দেশের পাশে স্থান করে নিল৷ পাঁচটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও চীন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান