1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের জেলে বাদল ফরাজি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ জুলাই ২০১৮

অপরাধ না করেও ভারতের আদালতে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে৷ তবে তাঁকে কারাগারেই রাখা হয়েছে৷ তাঁর স্বজনদেরও বিমান বন্দরে দেখা করতে দেয়া হয়নি৷

https://p.dw.com/p/310Ba
Bangladesch Familie Badal Farazi
ছবি: DW/H.U. Rashid

দিল্লি থেকে বাদল ফরাজিকে শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বাংলাদেশ পুলিশের একটি দল জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমানযোগে ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে আসে৷ সেখান থেকে সরাসরি কেরানিগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কারাসূত্র জানায়, তাঁকে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে ফেরত আনা হয়েছে৷ তাই সাধারণ নিয়মে তাঁকে বাংলাদেশের কারাগারেই বাকি শাস্তি ভোগ করতে হবে৷ তাই তাঁকে কারাগারে রাখা হয়েছে৷'' বাদল ফরাজি ভারতের কারাগারেএরইমধ্যে ১০ বছর জেল খেটেছেন৷

২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল পুলিশ৷ তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্কতা জারি করা হয় তখন৷ কিন্তু শুধু দু'জনের নামের মিল থাকায়  ২০০৮ সালে জুলাই মাসে ভারতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে আটক করে বিএসএফ৷ পরে ওই খুনের মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদল ফরাজিকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷ দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে৷ বাদল ফরাজির স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে৷

বিনা দোষে এই সাজা মেনে না নিয়ে বাদল ফরাজি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন৷ কিন্তু সুপ্রিমকোর্টও বাদল ফরাজির আবেদন খারিজ করে দেয়৷ ফলে গত ১০ বছর ধরে তিনি  দিল্লির তিহার জেলে বন্দি ছিলেন৷ ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাদল ফরাজির এই দণ্ডের বিরুদ্ধে এবং মুক্তির জন্য সোচ্চার ছিল৷ অবশেষে বাংলাদেশে সরকার উদ্যোগ নিয়ে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে ফিরিয়ে আনলো৷

বাগেরহাটের মংলা বন্দরের কাছে ১৭ নম্বর ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজি ও শেফালি বেগমের ছেলে বাদল ফরাজি৷ তখন টিএ ফারুক স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখার৷ আর সেই ইচ্ছা পুণের জন্যই ভারতে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়৷  ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল ইমিগ্রেশন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে  প্রবেশের পরই বাদল ফরাজিকে আটক করে বিএসএফ৷ হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের বোঝাতেই পারেননি যে, খুনের অভিযোগ যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন৷

Aklima Begum - MP3-Stereo

শুক্রবার বিকেলে ঢাকার  শাহজালাল বিমানবন্দরে বাদল ফরাজির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন তাঁর মা-বোন এবং পরিবারের সদস্যরা৷ কথা ছিল বিমানবন্দরে বাদলের সঙ্গে তাঁদের দেখা হবে৷ কিন্তু সে আশা পুরণ হয়নি৷ বাদলের বড় বোন আকলিমা বেগম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের পুলিশ আগেই জানিয়েছিল, বিমানবন্দরে দেখা করার সুযোগ দেবে৷ কিন্তু দেয়নি৷ ভিআইপি গেট দিয়ে না বের করে আরেক গেট দিয়ে তাকে কারাগারে নিয়ে যায়৷ আমার মা বাদলের দেখা না পেয়ে কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ আমরা গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকা এসেছিলাম  বাদলের সঙ্গে দেখা করতে৷''

তিনি জানান, ‘‘শনিবার আমরা কারাকর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো বাদলের সঙ্গে দেখা করার জন্য৷ আমাদের জানানো হয়েছে, কারাগারের নিয়ম মেনে শনিবারই আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারব৷''

বাদল ফরাজিরা পাঁচ ভাই-বোন৷ বাবা বেঁচে নাই৷ তাঁর বড় বোন আকলিমা আক্তারই এখন সংসার দেখেন৷ আকলিমা বলেন, ‘‘বাদল যখন ভারতে যায়, তখন সে ক্লাস এইটের ছাত্র৷ সে তো বিনা দোষে ভারতের কারাগারে ১০ বছর জেল খেটেছে৷ তার জীবন থেকে ১০টি বছর হারিয়ে গেছে৷ সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, এবার যেন তাকে মুক্তি দেয়া হয়৷ তাকে যেন আর জেল খাটতে না হয়৷''

Monjil Morshed - MP3-Stereo

বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাদলকে  ভারত থেকে আনা হয়েছে বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে৷ ভারতে আদালতে যে দণ্ডপ্রাপ্ত, সেই দণ্ড থেকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতও তাকে রেহাই দেয়নি৷ তাই সাধারণ নিয়ম হলো দণ্ডের বাকি মেয়াদ সে বাংলাদের কারাগারে ভোগ করবে৷ তবে যেহেতু সে বাংলাদেশের নাগরিক তাই এখন চাইলে সে বাংলাদেশি আইনের আশ্রয় নিতে পারে৷ বাংলাদেশের আইনে তার রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে৷ আর রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করলে তিনি কারাদণ্ডের বাকি মেয়াদ থেকে রেহাই পেয়ে মুক্তি পেতে পারেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য