1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘তিন তালাকের' শেষ চায় ভারত

আরাফাতুল ইসলাম/এসি১৯ জুন ২০১৬

তিনবার তালাক, তালাক, তালাক বলে মুহূর্তে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার অধিকার আছে ভারতের মুসলিম পুরুষদের৷ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন ভারতের মুসলিম মহিলারা৷

https://p.dw.com/p/1J8d0
ভারতে মুসলিম নারী ভোটার
ছবি: Reuters

ভারতে তিন তালাক হাতে লিখেও দেওয়া যায়, এমনকি চিঠি বা মেসেজ পাঠিয়েও তালাক দেওয়া যায়৷ অথচ দুই প্রতিবেশি দেশ - মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে, এছাড়া অপরাপর মুসলিম দেশে এভাবে তালাক দেওয়া নিষিদ্ধ৷

ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা সাড়ে পনেরো কোটি৷ দেশের মুসলিম মহিলারা এবার তিন তালাকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন৷ দু'জন তালাক প্রাপ্ত মুসলিম মহিলা বিষয়টিকে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট অবধি নিয়ে গেছেন৷ তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না, বলে ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন (বিএমএমএ)-এর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা নুরজেহান সাফিয়া নিয়াজ-এর অভিমত৷ ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকারে তিনি তিন তালাক বর্জনের অভিযান সম্পর্কে বলেন৷

ডিডাব্লিউ: ভারতে এখনও তিন তালাক দেওয়া সম্ভব,যদিও তা নারীদের বুনিয়াদি মানবাধিকারের বিরোধী৷ ভারত কেন তা নিষিদ্ধ করেনি?

নুরজেহান সাফিয়া নিয়াজ: ভারতে মুসলিম পারিবারিক আইন এখনও লিপিবদ্ধ করা হয়নি৷ দেশের সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তাদের নিজস্ব পারিবারিক আইন আছে৷ কিন্তু হিন্দুদের পারিবারিক আইন লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, মুসলিমদের ক্ষেত্রে যা করা হয়নি৷ মুসলিমদের ক্ষেত্রে শুধু দু'টি ছোট আইন আছে৷ প্রথমটি প্রণয়ন করা হয় ১৯৩৯ সালে; দ্বিতীয়টি ১৯৮৬ সালে, যা'তে তালাক দেবার কারণ ও তালাকের পর খোরপোশ ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু বিবাহের ন্যূনতম বয়স, তালাকের পদ্ধতি, তালাকের পর সন্তানের অভিভাবকত্ব বা বহুবিবাহ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি৷

কোনো আইন না থাকার ফলে, মুসলিম সম্প্রদায় শরিয়া আইন সম্পর্কে তাদের নিজস্ব ধ্যানধারণা অনুসরণ করে থাকে৷ ভারতে যেভাবে শরিয়া আইন প্রয়োগ করা হয়, তা কোরানের বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত৷ কোরানে যে তালাক-ই-আহসান-এর কথা বলা হয়েছে, তা'তে বিবাহবিচ্ছেদের আগে স্বামী-স্ত্রীর নির্দিষ্টকালের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ কিন্তু ভারতের মুসলিম সমাজ তা মেনে চলে না৷

ভারতে প্রতিবছর কতোজন মুসলিম মহিলাকে এভাবে তালাক দেওয়া হয়?

আমাদের কাছে কোনো বিশদ পরিসংখ্যান নেই৷ তবে আমরা সারা দেশে প্রায় ৫,০০০ মহিলাকে নিয়ে একটি জরিপ করে দেখেছি যে, মুসলিমদের মধ্যে যতো বিবাহবিচ্ছেদ হয়, তার ৭৮ শতাংশই একতরফা৷ মুসলিম স্বামীরা চাইলেই এ ধরনের ডিভোর্স পান৷

মহিলারা কি তিন তালাক দিতে পারেন?

না, মহিলাদের এই তিন তালাক পদ্ধতি ব্যবহার করার অধিকার নেই৷ কোনো মুসলিম মহিলা বিবাহবিচ্ছেদ চাইলে, তাঁকে কাজি বা আদালত বা কোনো এনজিও-র কাছে যেতে হবে; তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন দাখিল করতে হবে৷ মুসলিম পুরুষদের সেসব করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না, মৌখিকভাবে বললেই ডিভোর্স হয়ে যায়৷

Questioning clichés in India

এই প্রথা বন্ধের জন্য আপনাদের সংগঠন কী কর্মসূচি নিয়েছে?

আমরা মুসলিম পারিবারিক আইন ‘কোডিফাই' করার, অর্থাৎ আইন হিসেবে লিপিবদ্ধ করার জন্য আন্দোলন করছি৷ সেই পারিবারিক আইন হবে একাধারে কোরান ও নারীপুরুষের সমানাধিকারের উপর ভিত্তি করে৷... আমাদের সর্বাধুনিক অভিযানের অঙ্গ হিসেবে আমরা সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলছি৷ জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতি আমাদের আবেদন হল, তারা যেন ব্যাপারটাকে তলিয়ে দেখেন ও নিষিদ্ধ করার ডাক দেন৷

মুসলিম সমাজের প্রতিক্রিয়া কী?

আমরা প্রচুর সমর্থন পেয়েছি, বিশেষ করে মহিলাদের কাছ থেকে৷ এমনকি একদল মুসলিম পুরুষ সম্প্রতি প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছেন যে, তালাকের এই পদ্ধতি তুলে দেওয়া উচিৎ৷ কাজেই ধীরে ধীরে মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ মুখ খুলছেন ও এই প্রথার অন্ত ঘটানোর দাবি করছেন৷... এই প্রথার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায় আছে, কিন্তু তা আইন নয়৷ কাজেই আমাদের ধারণা, রায় যথেষ্ট নয়; তিন তালাক নিষিদ্ধ করে আইন করা আবশ্যক৷

নুরজেহান সাফিয়া নিয়াজ ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন সংগঠনের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা৷ সংগঠনটি মুসলিম নারীদের অধিকার রক্ষা ও অর্জনের জন্য সচেষ্ট৷

আপনি কি তিল তালাক বর্জনকে সমর্থন করেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান