1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভুল টেস্ট করে ভারতে করোনার সংখ্যা চাপা হচ্ছে!

২৫ নভেম্বর ২০২০

ভারতে করোনার তথ্য চাপা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুল টেস্ট করে রিপোর্ট নেগেটিভ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

https://p.dw.com/p/3lnAr
করোনা ল্যাব
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Anand

ভারতে করোনা সংক্রমণ প্রায় এক কোটিতে গিয়ে পৌঁছেছে। এখনো দিনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তারই মধ্যে, বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করছেন, বড় অংশের ভারতীয়ের ঠিক মতো করোনা পরীক্ষাই হয়নি। পরীক্ষা হলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতো।

মূলত দুইটি প্রক্রিয়ায় ভারতে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে। আর সেখানেই রয়ে গিয়েছে সর্ষের মধ্যে ভূত। পিসিআর এবং অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে ভারতে করোনা শনাক্ত করা হচ্ছে। প্রথম যখন করোনার পরীক্ষা শুরু হয়েছিল, তখন দেশ জুড়ে শুধুমাত্র পিসিআর টেস্টই হতো। চিকিৎসকদের বক্তব্য, পিসিআর টেস্টে করোনা সংক্রমণের তথ্য নির্ভুল আসে। প্রথম দিকে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই পিসিআর টেস্ট করা হতো। কিন্তু যত দিন গিয়েছে, সংক্রমণ যত বেড়েছে, ততই বিভিন্ন রাজ্য করোনার সংখ্যা কমানোর জন্য অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে শুরু করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যার রিপোর্ট নির্ভুল নয়। তথ্য বলছে, তুল্যমূল্য বিচারে পিসিআর টেস্টে অ্যান্টিজেন টেস্টের চেয়ে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি করোনা ধরা পড়ে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, শুধুমাত্র দিল্লিতে পিসিআর টেস্টে করোনা ধরা পড়েছে ১৪ শতাংশ। সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনা ধরা পড়েছে চার শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারতে পিসিআর টেস্ট কমতে কমতে ষাট শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের। এই পাঁচ কোটি মানুষের অধিকাংশের অ্যান্টিজেন টেস্টে করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, তাঁদের করোনা পসিটিভ ছিল।

কেন এই ঘটনা ঘটছে? কেন অ্যান্টিজেন টেস্ট নির্ভুল নয়, এ তথ্য জেনেও রাজ্যগুলি সেই টেস্ট করাচ্ছে? চিকিৎসক দেবাংশু হালদারের বক্তব্য, ''অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে করোনা সংক্রমণের তথ্য চাপার চেষ্টা করছে কোনো কোনো রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার। তারা দেখানোর চেষ্টা করছে, করোনা সংক্রমণ গোষ্ঠীতে সে ভাবে ছড়ায়নি। নির্ভুল পিসিআর টেস্ট করলে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি হতো।''

করোনার একেবারে গোড়ার দিকে ভারতে টেস্টই হচ্ছিল কম। টেস্ট না করিয়ে কোনো কোনো রাজ্য দেখানোর চেষ্টা করছিল সেখানে করোনার প্রকোপ তত বেশি নয়। পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে এক সময় এই অভিযোগ উঠেছিল। বিহারের বিরুদ্ধেও একই কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, টেস্ট বাড়াতেই ওই রাজ্য গুলিতে করোনার প্রকোপ লাফিয়ে বেড়েছে। গুজরাত, দিল্লির মতো জায়গায় রাজ্য সরকারগুলি দেখানোর চেষ্টা করছিল, সেখানে যথেষ্ট টেস্ট হচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ কম দেখানোর জন্য সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছিল বলে চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের অভিযোগ।

সম্প্রতি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এনডিটিভি একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। সরকারি তথ্য ব্যবহার করে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে অন্তত ৩৫ লাখ আক্রান্ত মানুষের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছে তাঁদের সংক্রমণ হয়েছিল। এই ব্যক্তিদের করোনার চিকিৎসা হলেও করোনা রোগীর তালিকায় তাঁরা স্থান পাননি। অর্থাৎ, সরকার এই রোগীদের করোনার তালিকায় রেখে সংখ্যা বাড়াতে চায়নি।

চিকিৎসক সাত্যকি হালদারের বক্তব্য, এটাও এক ধরনের স্ক্যাম। রাজ্য সরকার তো বটেই, কেন্দ্রীয় সরকারও বিভিন্ন সময় এ ভাবেই করোনা সংক্রমণের তথ্য চাপার চেষ্টা করেছে। লকডাউন যে ফলপ্রসূ হয়নি। তা যে ভুল সময় করা হয়েছিল, এই বিষয়গুলি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। অর্থনীতির কারণে এখন সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। এবং সে কারণেই সংক্রমণের তথ্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

এ দিকে মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে কী ভাবে করোনার সংক্রমণ কমানো যায় এবং ভ্যাকসিন এলে তা কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেখানে মোদীর কাছে অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্র করোনা মোকাবিলার জন্য রাজ্যগুলিকে যথেষ্ট সাহায্য করছে না। যে পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রের কাছে চাওয়া হয়েছিল, সে পরিমাণ টাকা কেন্দ্র রাজ্যকে দেয়নি। বৈঠকে যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এনডিটিভি)