1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভোটের বাজারে মোদীর ‘‌ডিজিটাল ইন্ডিয়া'‌!‌

রাজীব চক্রবর্তী নয়াদিল্লি
২২ নভেম্বর ২০১৮

শুধু সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে প্রচার নয়, ভোটারদের হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনকে কাজে লাগাচ্ছে শাসক, বিরোধী সব পক্ষ৷ ফোন কল, হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের সাহায্যে ভোটভিক্ষা করছে রাজনৈতিক দলগুলি৷

https://p.dw.com/p/38iAR
Indien 72. Unabhängigkeitstag
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh

মোদীর ‘‌ডিজিটাল ইন্ডিয়া'‌র হাত ধরে প্রচারে এগিয়ে শাসক দল৷

দেশের ৫টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে৷ প্রথম রাজ্য হিসেবে ছত্তিশগড়ে দুটি পর্বে ভোটগ্রহন সমাপ্ত হয়েছে মঙ্গলবার৷ এবার ভোটগ্রহণ হবে আরো চার রাজ্যে৷ আগামী ২০১৯-‌এর লোকসভা নির্বাচনকে যদি ফাইনাল ধরা হয়, তাহলে এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন সেমিফাইনাল, যা ভারতের দু টি প্রধান জাতীয় দল, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং কংগ্রেসের কাছে দিল্লির মসনদ দখলের আগাম আঁচ নেয়ার জন্য উপযুক্ত৷ এখন প্রশ্ন, কী হতে পারে ফলাফল?‌ উত্তর মিলবে ১১ ডিসেম্বর, ভোটের ফলাফলে৷ তবে এ হাওয়া বইছে সরকারের বিরুদ্ধে৷

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রবীন সাংবাদিক শরদ গুপ্তা জানিয়েছেন, ‘‌‘‌ছত্তিশগড়ের বেশিরভাগ নির্বাচনে জয়-‌পরাজয়ে ভোটের ব্যবধান অত্যন্ত কম থাকে৷ বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতীর বসপা কোনও ফ্যাক্টর নয়৷ গত নির্বাচনে ৪৫টি আসনে বসপার থেকে নোটা (‌কাউকেই ভোট নয়)‌ বেশি ভোট পেয়েছিল৷ ফলে লড়াই সেই বিজেপি বনাম কংগ্রেসের মধ্যে৷ সমীক্ষায় যতটুকু উঠে এসেছে, এবার কংগ্রেসের দিক হাওয়া বইছে৷'‌'‌

তবে শরদ মনে করেন উপঢৌকন দিয়ে ভোটারদের প্রলুব্ধ করার ঘটনা এদেশে নতুন নয়৷ শুরু করেছিলেন তামিলনাড়ুর আন্না ডিমক৷ তিনি সেলাই মেশিন ও প্রেসার কুকার থেকে বহু রকম জিনিস দিয়েছিলেন৷ উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিং যাদব ও অখিলেশ যাদবরা ল্যাপটপ, মোবাইল দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন৷ দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিয়াল উপঢৌকন না দিলেও ভোটারদের মোবাইলে অডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন৷ কিন্তু এঁরা কেউই ভোটারদের কাছে জানতে চাননি যে, তাঁরা কাকে ভোট দিতে চলেছেন৷ এই ধরনের ঘটনা সুস্থ গণতন্ত্রের অঙ্গ হতে পারে না৷''‌

ছত্তিশগড়ে পরপর তিনবার, অর্থাৎ ১৫ বছর ধরে বিজেপি'‌র রমণ সিংয়ের সরকারের শাসন চলেছে৷ স্বভাবতই প্রতিষ্ঠান‌বিরোধী হাওয়া বেষ উষ্ণ সেখানে৷ তার ওপর এবার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা অজিত যোগী ও বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী জোটবদ্ধ হয়েছেন৷ নতুন এক পক্ষ তৈরি করেছেন তাঁরা৷ রাজ্যে এবার ত্রিমুখী লড়াই ছিল৷ স্বভাবতই নিশ্চিন্তে নেই কোনো পক্ষ৷

অতীতে অ্যামেরিকার নির্বাচনি শ্লোগান ‘‌প্রত্যেকের খাবার প্লেটে চিকেন' কিংবা ভারতে ‘‌সবার জন্য ভাত'‌ এই শ্লোগানগুলি এখন আর চলে না৷ ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী রমণ সিং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘‘‌প্রতি ঘরে স্মার্টফোন'‌ দেবেন তিনি৷ গত জুলাই মাসে ‘‌সঞ্চার ক্রান্তি যোজনা'‌ বা স্কাই-‌এর সূচনা করেছেন রমণ৷ তখন কে-‌ইবা জানত যে, চতুর্থবার ক্ষমতায় ফিরতে এই স্মার্টফোনের সাহায্য নেবেন তিনি৷ ছত্তিশগড়ে নেটওয়ার্ক দেওয়ার বরাত পেয়েছে রিলায়েন্স জিও কোম্পানি৷ বিপুল সংখ্যক মোবাইল ফোন কিনছে সরকার৷ এর ফলে একদিকে সরকারি অর্থে বেসরকারি কোম্পানি ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রথমবার মোবাইল ব্যবহারকারীদের যাবতীয় তথ্য অনায়াসে চলে আসছে নেটওয়ার্ক প্রদানকারী কোম্পানির কাছে৷

রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের নানা জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই সরকারি বা আধা সরকারি কর্মীদের বিনামূল্যে বেশ কিছু মোবাইল ফোন বিতরণ করেছে রাজ্য সরকার৷

এ পর্যন্ত প্রায় ২৯ লক্ষ মানুষ সরাকারি ফোন পেয়েছেন৷ তাঁদের প্রত্যেককে ভোটের ঠিক আগে সরকারি স্মার্টফোনে ফোন করে জানতে চাওয়া হয়েছে, সরকারি প্রকল্পে তাঁরা খুশি কিনা৷ আরো জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁরা কাকে ভোট দিতে চান৷‌ এই ফোন কল করার জন্য ভাড়া করা হয়েছে কয়েকটি দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে৷ সেইসব ভোটারের জবাবের ধরণ অনুযায়ী রিপোর্ট সাজিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে বিজেপি নেতাদের হাতে৷ এতকিছুর পর কংগ্রেস অথবা অ-‌বিজেপি প্রার্থীদের ভোট দিতে চাওয়া ভোটারদের ‘‌ম্যানেজ'‌ করতে ময়দানে নেমেছেন বিজেপি নেতারা৷

অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির পক্ষ থেকে ছত্তিশগড়ের পর্যবেক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন কংগ্রেস নেতা শুভঙ্কর সরকার৷ তাঁর মতে,‘‌‘‌ডিজিটাল ইন্ডিয়ার নামে মোদী সরকার সারা ভারতকে আরো পিছিয়ে দিয়েছেন৷ ছত্তিশগড়ে যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তা অন্য যে কোনো রাজ্যের ইর্ষার কারণ হতে পারে৷ এমন এক রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী রমণ সিং৷'‌'‌ ‌উপঢৌকনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘‌‌দীর্ঘ ১৫ বছর শাসন করেও দারিদ্র্য দূর করতে পারেনি বিজেপি৷ তাই ভোট কেনার এই প্রয়াস৷ কোথাও রেডিও, কোথাও সাইকেল, কোথাওবা মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে৷'‌'‌ তবে তা সত্ত্বেও বিজেপি এবার হালে পানি পাবে না বলে মনে করেন এই কংগ্রেস নেতা৷

প্রথম দিকে এ নিয়ে নির্বাচন নিয়ন্ত্রনকারী স্বতন্ত্র সংস্থা নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানালেও শেষের দিকে একই পথ অবলম্বন করেছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস৷ ছত্তিশগড় ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও মিজোরামের মতো রাজ্যগুলিতেও এই সূত্র প্রয়োগ করছে বিজেপি৷ দেখাদেখি এই ডিজিটাল প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কংগ্রেসও৷ মোবাইল গ্রাহকদের কাছে পৌঁছেছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর স্বয়ংক্রিয় ফোনকল৷ এমনটা ভারতে আগে কখনো ঘটেনি৷ তবে দিল্লি নির্বাচনের সময় আম আদমি পার্টির তরফে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ‘‌ভয়েস কল' পেয়েছেন বহু মানুষ৷

ছত্তিশগড়ের জঙ্গলঘেরা গ্রামগুলিতে মোট ২ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের জন্য নতুন মোবাইল টাওয়ার তৈরি হচ্ছে৷ ৫০ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী ও নারীকে সরকারি ‘‌রমণ মোবাইল'‌ দেওয়ার কাজ চলছে৷ এই মোবাইলগুলিতে দুটি অ্যাপ বাধ্যতামূলক৷ একটি মুখ্যমন্ত্রী রমণ সিং, দ্বিতীয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ মোবাইল চালু করলেই এই দুটি অ্যাপ কার্যকর করতে হবে৷ তাতে ফোনে সঞ্চিত সমস্ত নাম্বার‌সহ যাবতীয় তথ্য চলে যাবে সরকারের কাছে৷ তথ্য পেয়ে যাচ্ছে বিজেপি৷

প্রশ্ন উঠেছে, ১৫ বছর রাজ্যের শাসনভার সামলানোর পর এবার এমন পন্থা কেন অবলম্বন করতে হচ্ছে বিজেপি‌কে?‌ উত্তর অনেক হতে পারে৷ তবে, এবার লড়াই কঠিন৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জের সামনে ঠেলে দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী করুণা শুক্লা৷ তিনি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাইজি৷ করুণা পণ করেছেন, রমণ সিংকে পরাজিত করবেন৷

এবার ছত্তিশগড়ে দুই দফার ভোটের হার ৭৪ দশমিক ১৭ শতাংশ৷ ২০১৩ সালের নির্বাচনে ছিল ৭৭ দশমিক ৮ শতাংশ৷ অর্থাৎ, ভোটের হার ৩ শতাংশ কমেছে৷ সাধারণ হিসেবে যা রাজনৈতিক পালাবদলের পক্ষে সহায়ক নয় বলে মনে করা হয়৷ তবে এর গভীরে আরো কিছু হিসেব-‌নিকেশ রয়েছে৷

আগামী ১১ ডিসেম্বর আরো চার রাজ্যের সঙ্গে ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা৷‌ আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে গোটা ভারত৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য