1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভ্যাকসিন পাসপোর্ট কি বৈষম্য তৈরি করবে?

৩ মার্চ ২০২১

ভ্যাকসিন পাসপোর্ট নিয়ে উঠছে অনেক প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে বৈষম্য তৈরি হবে। লিখছেন রবার্ট মাজ।

https://p.dw.com/p/3q83D
ছবি: Robin Utrecht/picture alliance

করোনার টিকা নিলেই একটি সার্টিফিকেট দিতে চায় ইউরোপীয় কমিশন। এই সার্টিফিকেটকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল গ্রিন পাস বা ভ্যাকসিন পাসপোর্ট। ১ মার্চ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন টুইট করে বলেছেন, ‘‘ডিজিটাল গ্রিন পাস ইউরোপীয়দের জীবনকে সহজ করবে। গ্রিন পাস থাকলে ইউরোপের ভিতর ও বাইরে বেড়াতে যাওয়া সহজ হবে।’’ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘চলতি মাসের শেষে এই পরিকল্পনা চালু হবে।’’

গ্রিস, সাইপ্রাসের মতো দেশগুলির অর্থনীতি অনেকটাই পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল। তারাই এই সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য ইইউ-র উপর চাপ দিচ্ছে। এই সার্টিফিকেট দেয়া শুরু হলে, তাদের পর্যটন ব্যবসা আবার ফুলে ফেঁপে উঠবে।

অনুমান করা হচ্ছে. এই নতুন ব্যবস্থা চালু করতে অন্ততপক্ষে মাস তিনেক সময় লাগবে। প্রযুক্তিগত ও বাস্তবের পরিস্থিতি অনুসারে ব্যবস্থা নিতে এই সময়টুকু দরকার। আর এখানেই সমস্যার শুরু।

অক্সফোর্ডের সেন্টার ফর ডেমোগ্রাফিক সায়েন্সের ডিরেক্টর মেলিন্দা মিলস মনে করেন, ‘‘এই ডিজিটাল গ্রিন পাস বা ভ্যাকসিন পাসপোর্ট তখনই দেয়া যাবে, যখন অনেককে ভ্যাকসিন দেয়া হয়ে গিয়েছে এবং অনেকের ভ্যাকসিন দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ইউরোপের পরিকল্পনা ছিল, গরমের আগে ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার।’’ এখনো পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে মাত্র ছয় শতাংশ মানুষকে।

ইইউ-র এই সার্টিফিকেটে শুধু টিকা দেয়ার কথা থাকবে না। কমিশনের মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান উইগার্ড বলেছেন, নাগরিকদের মধ্যে আমরা কোনো বিভেদ করতে চাই না। তাই অন্য তথ্যও রাখতে হবে। করোনা পরীক্ষার ফল। করোনা হলে কবে তিনি সেরে উঠেছেন, সেই সব তথ্যও থাকবে।

নৈতিক ও গোপনীয়তার প্রশ্ন

এখানেই উঠে যাচ্ছে নৈতিক ও গোপনীয়তার প্রশ্ন। মিলস বলেছেন, যে নৈতিক প্রশ্ন প্রথমে দেখা দেবে, তা হলো, এই সার্টিফিকেট থেকে কাদের বাদ দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসার কারণে অনেকে করোনার টিকা নিতে পারবেন না। যেমন, যাদের বেশি মাত্রায় অ্যালার্জি আছে, যারা গর্ভবতী এবং কিছু দেশে জাতিগত সংখ্যালঘুরা টিকা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত। তার মানে এই সব গোষ্ঠীগুলি পাসপোর্ট পাবে না।

রয়্যাল সোসাইটির একটি গোষ্ঠী একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে এবং তা জার্নালে প্রকাশিতও হয়েছে। মিল সেই রচয়িতাদের একজন। তারা দেখিয়েছেন, এই ধরনের একটি ব্যবস্থা তৈরির আগে কোন জিনিসগুলির উপর জোর দিতে হবে।

অন্য লেখকদের মধ্যে আছেন অক্সফোর্ডের প্রাণিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস ডাই। তিনি জানিয়েছেন, রিপোর্টে নৈতিক, গোপনীয়তা ও টেকনিক্যাল বিষয়গুলির কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা বলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।

তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশাল প্রগতির প্রয়োজন। আমরা এখনো এই ভ্যাকসিন পাসপোর্ট ব্যবহারের উপযুক্ত জায়গায় নেই। আমরা এখনো তথ্য সংগ্রহ করছি যে, এই টিকা করোনা থামাতে কতটা সক্ষম হবে। এর ফলে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে, তা কতদিনের জন্য থাকবে।’’

মিলস মনে করেন, ইইউ-কে আগে আইনগত ও নৈতিক মাপদণ্ডগুলি ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। প্রথমেই দেখতে হবে, সার্টিফিকেট থেকে কাদের বাদ দেয়া হবে। চিকিৎসাগত কারণে অনেকে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না। গর্ভবতীরাও নয়। যাদের অ্যালার্জি আছে, তারাও টিকা নিতে পারবেন না। কিছু জাতিগত সংখ্যালঘুও নেবে না। তার মানে, এদের সার্টিফিকেট দেয়া যাবে না।

মিলসের প্রশ্ন, এটা কি শুধু বেড়াতে গেলেই লাগবে, না কি চিকিৎসার জন্য, চাকরি পেতে, ফুটবল ম্যাচ দেখতে, বাইরে খেতে গিয়েও পাসপোর্ট লাগবে?

তাছাড়া এর মধ্যে কিছু স্পর্শকাতর আইনি সমস্যাও আছে। ভ্যাকসিন পাসপোর্টে কিছু স্পর্শকাতর ব্যক্তিগত তথ্য থাকবে। তাই এই সব বিষয়ে যেন কোনো অস্পষ্টতা না থাকে। একটি মাপদণ্ড তৈরি করা হয়।

ইউরোপীয়ান কোর্ট অফ হিউম্যান রাইটস(ইসিএইচআর) মতে, কোনো ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার বজায় রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য গোপন রাখাটাও তার মধ্যে পড়ে।

বৈষম্যের প্রশ্ন

বলা হচ্ছে, টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক নয়, ইচ্ছে হলে কেউ তা নিতে পারে, ইচ্ছে না হলে, নয়। তা হলে যারা চিকিৎসাগত কারণে টিকা নিতে পারছেন না, তাদের ক্ষেত্রে কী বলা হবে?

ইসিএইচআর সবসময়ই মনে করে, আইনের চোখে সকলে সমান এবং কোনো বৈষম্য করা হবে না। প্রশ্নটা হলো, ভ্যাকসিন পাসপোর্ট কি এই নীতি বজায় রাখতে পারবে? জার্মান এথিক্স কাউন্সিল মনে করে, এই পাস বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।

মিলস বলেছেন, যারা ভ্যাকসিন নেননি, তারা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বেন। সরকারের দায়িত্ব, দেশের নাগরিক, কর্মী, ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করা। ফলে যারা টিকা নেবেন না বা চিকিৎসার কারণে নিতে পারবেন না, তারা কি বৈষম্যের শিকার হবেন না?

রবার্ট মাজ/জিএইচ