1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভ্রমর ছাড়া ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়ে যাবে'

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

‘ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে' – গানের সেই কথা আজ বিরল ঘটনা হয়ে পড়েছে৷ ইউরোপে পরাগ বহন করা পোকার সংখ্যা কমে চলায় গবেষকরা পালটা পদক্ষেপ নিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/35QwR
Indien Erdbeer-Anbau in Bihar
ছবি: Bihar Agriculture University

ইউরোপে ভ্রমরের মতো পরাগ বহন করা পোকা হারিয়ে যাচ্ছে৷ এর কারণ কী এবং এই প্রবণতা কীভাবে বন্ধ করা সম্ভব?

এর একাধিক কারণ রয়েছে৷ পোকারা তাদের আবাস হারাচ্ছে, প্যাথোজেন বা জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে, বহিরাগত প্রজাতির পোকা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে৷ সেইসঙ্গে দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তো রয়েছেই৷ তার পরিণাম সত্যি নাটকীয়৷ অথচ পলিনেটার বা পরাগবহনকারীরা যে কোনো ইকোসিস্টেম সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার চাবিকাঠি৷

পলিনেশন জীববিজ্ঞানী সিমন পটস মনে করেন, ‘‘এই স্ট্রবেরি অত্যন্ত ভালোভাবে পরাগায়িত হয়েছে৷ এর রং, আকার ভালো, বেশ ভারসাম্য রয়েছে৷ খারাপভাবে পরাগিত স্ট্রবেরির সঙ্গে এর তুলনা করতে পারি৷ সেটির আকার কিছুটা ছোট, কিছুটা বিকৃত, মোটেই তেমন আকর্ষণীয় নয়৷ হয়তো শর্করার পরিমাণও কম৷ অর্থাৎ কৃষিকাজে পলিনেটরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ ইউরোপে তাদের সংখ্যা কমে গেলে আমাদের উচ্চ মানের খাদ্য উৎপাদনে সমস্যা হবে৷''

এক ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের আওতায় গবেষকরা সমস্যার মাত্রা খতিয়ে দেখে তার সমাধান খুঁজছেন৷ তাঁদের মতে, খেতের ফসলের পাশের সরু জমিতে ফুল লাগিয়ে পলিনেটরদের আকর্ষণ করা একটি পথ হতে পারে, যাতে তারা নতুন ক্ষেত্র দখল করতে পারে৷ কৃষি পরিবেশবিদ ভিক্টোরিয়া উইকেন্স বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, আমরা যদি এখানে ফুলে সমৃদ্ধ প্রজাতি আনতে পারি, তখন জমির পুরো সদ্ব্যবহার করতে পারবো৷ ফুলের নির্দিষ্ট মিশ্রণের মাধ্যমে ভ্রমর ও হোভারফ্লাই মাছির মতো পলিনেটরদের আকর্ষণ করতে পারবো৷ তারা এখানে এসে বংশবৃদ্ধি করে ফসলের মধ্যে প্রবেশ করবে বলে আমরা ধরে নিয়েছিলাম৷''মাঠ পর্যায়ে ও গবেষণাগারে পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টায় দেখা গেল, যে এই পদক্ষেপ সত্যি কার্যকর হতে পারে৷ কৃষি পরিবেশবিদ জেনিফার উইকেন্স বলেন, ‘‘প্রাথমিক ফল অনুযায়ী খেতের চারিপাশে ফুলের বাগান পলিনেটরদের সংখ্যা প্রায় ৫০০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তবে শুধু সংখ্যার বিচারে নয়, বৈচিত্র্যেরও অসাধারণ উন্নতি হয়েছে৷ বিরল প্রজাতির পলিনেটর খেতে প্রবেশ করছে৷ বিষয়টি সত্যি রোমাঞ্চকর, কারণ আমরা পলিনেটরদের সুরক্ষিত আবাস থেকে ফসলের খেতে আনতে পারছি৷''

জীববিজ্ঞানী হিসেবে ডানকান কস্টন একটি সুপারমার্কেটের কিছু পণ্যের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে দু'টি ঝুড়ি রয়েছে৷ একটিতে এমন কৃষিপণ্য রয়েছে, যার পরাগবাহী পোকার প্রয়োজন নেই৷ অন্যটির পণ্যের কোনো এক ধরনের পলিনেশনের প্রয়োজন৷ যেমন কমলালেবু, সিডার, নাশপাতি, কিছু সাবান, কিছু কফি, কিছু বাদাম৷ কফি বা চকোলেট ছাড়া, অথবা চকোলেট মাখানো রুটি ছাড়া সকালের প্রাতরাশ একঘেয়ে হয়ে পড়তে পারে৷'' পলিনেশন বিশেষজ্ঞরা সচেতনতা বাড়াতে প্রায়ই স্কুল ও সুপারমার্কেটে প্রচার চালিয়ে থাকেন৷ এবার তাঁরা ব্রিটেনের রিডিং শহর বেছে নিয়েছেন৷ নানা রকম উদাহরণ তুলে ধরে তাঁরা মানুষকে প্রকৃতিতে পলিনেটরদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দৈনন্দিন জীবনে তার প্রভাব সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেন৷ ডানকান কস্টন বলেন, ‘‘এই মিজ ফ্লাই প্রজাতি কোকো গাছে পলিনেশন ঘটায়৷ অর্থাৎ এই প্রজাতি না থাকলে চকোলেট তৈরি হবে না৷ কিছু প্রজাতির মাছি কফি গাছে পলিনেশন ঘটায়৷ তুলার ক্ষেত্রেও পলিনেশনের প্রয়োজন পড়ে৷ অর্থাৎ পলিনেটর ছাড়া এই সব পণ্যের উৎপাদন অনেক কমে যাবে, নাটকীয় মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে৷'' পলিনেটরদের সংখ্যা এখনো বাড়ানো সম্ভব, তবে হাতে বেশি সময় নেই৷ তাই নতুন কার্যকর সমাধানসূত্রের খোঁজ চলছে৷