1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মতুয়ারা ক্ষুব্ধ, অমিত শাহের যাওয়া বাতিল

১৫ ডিসেম্বর ২০২০

বাংলাদেশ থেকে আসা মতুয়া শরণার্থীরা এখন বিজেপি-র উপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ। তাই মতুয়াদের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করলেন অমিত শাহ।

https://p.dw.com/p/3mjXb
অমিত শাহ আবার পশ্চিমবঙ্গে যাবেন ১৯ ডিসেম্বর।ছবি: Payel Samanta/DW

কিছুদিন আগেই বিজেপি সাংসদ ও মতুয়া নেতা শান্তনু ঠাকুর প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও মতুয়াদের এখনো নাগরিকত্ব দেয়া হলো না কেন? কেন বিজেপি কথার খেলাপ করল? মোদী-শাহের রাজত্বে সচরাচর প্রকাশ্যে কোনো সাংসদ দলের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করেন না। শান্তনুর কথায় বোঝা গেছিল, তাঁর উপর চাপ কতটা মারাত্মক এবং একইসঙ্গে বিজেপি-র বিরুদ্ধে মতুয়াদের ক্ষোভ কতটা প্রবল।

সেই ক্ষোভের আঁচ পেয়েই আপাতত মতুয়াদের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন অমিত শাহ, দাবি বিজেপি সূত্রের। আগে বলা হয়েছিল, বনগাঁয় সভা করতে যাওয়ার আগে তিনি মতুয়াদের কাছে যাবেন। আগামী ১৯ ডিসেম্বর তিনি পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন। তাঁর সফরের যে বিবরণ এখন দলীয় স্তরে দেয়া হয়েছে, তাতে মতুয়াদের কাছে যাওয়ার বিষয়টি নেই। রাজ্য বিজেপি নেতা সৌরভ শিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''অমিত শাহ এখন প্রত্যেক মাসেই পশ্চিমবঙ্গ সফর আসবেন। তাই কোনো কারণে এ বার তিনি মতুয়াদের কাছে যেতে পারছেন না। পরে যাবেন।''  সৌরভের দাবি. ''শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের কথা হয়েছে। ভুল বোঝাবুঝি মিটে গেছে।'' সেই বৈঠকের পর কৈলাশ জানিয়েছেন, জানুয়ারি থেকেই মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেয়া শুরু হবে।

আসলে মতুয়াদের ক্ষোভ এই নাগরিকত্ব নিয়েই। ২০০৩ সালে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন না। মতুয়ারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। তাঁরা প্রধাণত নিম্নবর্গীয় মানুষ। তাঁদের নাগরিকত্বের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল কেউই তাঁদের নাগরিকত্ব সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। এই অবস্থায় বিজেপি-র প্রতিশ্রুতি ছিল, নতুন নাগরিকত্ব আইন অনুসারে মতুয়াদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতিও এতদিনে কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশে হরিচাঁদ ঠাকুর নিম্নবর্গের যে ধর্মীয় আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর তাকে গতি দিয়েছিলেন। গুরুচাঁদ ঠাকুরের ছেলে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। 

এখন সেই মতুয়াদের ভোট পাওয়ার জন্য রীতিমতো রাজনৈতিক লড়াই চলে। আগে এই ভোট গিয়েছিল তৃণমূলে। মমতাবালা ঠাকুর সাংসদ হয়েছিলেন। গত লোকসভায় জিতেছেন বিজেপি-র শান্তনু ঠাকুর। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারানো জমি ফিরে পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তিনি গত ১০ নভেম্বর গোপালনগরে গিয়ে জনসভা করে বলেছেন, মতুয়া উন্নয়ন পর্ষদের দাবি মানা হয়ে গেছে। পর্ষদকে ১০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। মতুয়ারা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথিতে ছুটি চেয়েছিলেন। সেটাও মেনে নিয়েছেন মমতা। পাঠ্যপুস্তকে হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের জীবনী ও বাণী পড়ানোর সিদ্ধান্তও পাকা। শান্তনু ঠাকুরও এই সব সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ফলে এই অবস্থায় অমিত শাহ যদি মতুয়াদের কাছে যেতেন, তা হলে তাঁকে নাগরিকত্ব দেয়ার ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে হতো। না হলে বিজেপি-র পক্ষে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো। অমিত শাহের পক্ষে এখনই সেরকম কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া বোধহয় সম্ভব নয়। তাই তিনি এ যাত্রায় মতুয়াদের কাছে যাচ্ছেন না।  কিন্তু দলীয় সূত্র জানাচ্ছে, মতুয়াদের ক্ষোভ দূর করতে না পারলে বিধানসভা নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে। সুবিধা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ, প্রায় ৭০টি কেন্দ্রে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা মতুয়াদের আছে।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, আনন্দবাজার)