1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার প্রকল্পে মোদীর বরাদ্দ এক হাজার টাকা!

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বরাবরই কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগে সরব পশ্চিমবঙ্গ৷ মূল কারণ, কেন্দ্র-রাজ্যের রাজনৈতিক বিরোধ এবং দুই সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন৷ এবার বঞ্চনার সেই ছবি আরও স্পষ্ট করে তুলেছে মোদী সরকার৷

https://p.dw.com/p/3XQ6g
ফাইল ছবিছবি: UNI

সদ্য বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ৷ তাতে আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ নেই৷ পৃথক রেল বাজেট বন্ধ করে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ এখন প্রকাশ পেয়েছে রেলের ‘পিঙ্ক বুক'৷ যাতে রেলের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান ও যাবতীয় হিসেব থাকে৷ কিন্তু, রেলে বরাদ্দের খতিয়ান দেখে পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা৷ আশ্চর্যজনকভাবে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেসব রেল প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলির জন্য মাত্র এক হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার! এমনকী, মমতার স্বপ্নের রেল কারখানা গুলির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা৷ এছাড়া বহু প্রকল্পের উল্লেখও নেই বাজেট-পত্রে৷ স্বাভাবিক ভাবেই ওই সমস্ত প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে৷

এই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের অভিযোগ, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক ট্রেন বেসরকারি সংস্থার হাতে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মোদী সরকার৷ এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে সাধারণ মানুষের মনে হয়, রেল মন্ত্রকের আর কী প্রয়োজন৷ এবার বাজেটে বাংলার সমস্ত রেল প্রকল্পগুলির গলা টিপে ধরেছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো একটি প্রকল্পও যাতে সম্পূর্ণ না হয়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছে মোদী সরকার৷’’

রেলমন্ত্রী থাকার সময় নতুন রেলপথ তৈরি এবং ডাবলিংয়ের মতো একগুচ্ছ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মমতা৷ কোচ ফ্যাক্টরি গড়ার ঘোষণাও ছিল৷ এবারের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গের দীঘা-জলেশ্বর, কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুরের মতো রেল প্রকল্পে এবার মাত্র এক হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে৷ ভাগীরথী নদীর উপর রেলসেতু সহ আজিমগঞ্জ-মুর্শিদাবাদ (জিয়াগঞ্জ) এবং হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জ নতুন লাইন, ঘুঁটিয়ারি শরিফ-ক্যানিং ডবল লাইন, নিউ আলিপুর-আক্রা ও বজবজ-পূজালি ডবল লাইনের জন্যেও বরাদ্দ হয়েছে এক হাজার টাকা৷

এই তালিকায় রয়েছে বালুরঘাট-হিলি নতুন রেললাইনও৷ বর্ধমান-কাটোয়া, আলুয়াবাড়ি রোড-শিলিগুড়ি রেলপথের গেজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বরাদ্দ হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা৷ তারকেশ্বর, জয়রামবাটি, বিষ্ণুপুর, আরামবাগ-ইরফালা, ইরফালা-ঘাটাল, আরামবাগ-চাঁপাডাঙা, বিষ্ণুপুর-উপারসোল এবং ময়নাপুর-কামারপুকুর ভায়া বিরসা রেললাইন তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে এক হাজার টাকা৷ একইসঙ্গে মমতার ঘোষিত কাঁচরাপাড়া রেল কোচ ফ্যাক্টরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকা৷ কাঁচরাপাড়া রেল ওয়ার্কশপের জন্য বরাদ্দ হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা৷ দুটি ক্ষেত্রেই বরাদ্দ গতবারের থেকে কম৷ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে এবার বরাদ্দ মাত্র ৯০৫ কোটি টাকা৷ যা অত্যন্ত কম বলে মনে করছেন বিশেশজ্ঞরা৷

তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বাংলার জন্য যে সমস্ত প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, শিলান্যাস করেছিলেন, সেগুলিকে আটকে দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করেছে মোদি সরকার৷’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘মূলত রাজনৈতিক শত্রুতার কারণেই বাংলার প্রতি বঞ্চনা  করা হচ্ছে৷ অধিকাংশ মেট্রো প্রকল্প থমকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷’’

অন্যদিকে, রেল মন্ত্রণালয়ের তরফে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল, শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেন চলাচলের ব্যবধান কমাতে চায় সরকার৷ এই জন্য নিরাপত্তা-প্রযুক্তি ঢেলে সাজানোর কথা বলেছিলেন রেলকর্তারা৷ এক্ষেত্রে মন্ত্রক যুক্তি দিয়েছিল, কম সময়ে বেশি সংখ্যক ট্রেন চালালে দু'টি ট্রেনের মধ্যে দূরত্ব কমবে৷ কিন্তু, এরফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে৷ তাই ‘অ্যান্টি কলিশন’ প্রযুক্তি কার্যকর করতে হবে৷ অনেক আগেই পূর্ব রেলের ১৫৬৩ কিলোমিটার লাইনে ‘ট্রেন কলিশন অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম’ (টিসিএএস) প্রযুক্তি চালু করার প্রাথমিক সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সমীক্ষা নিয়ে আশাবাদী ছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গ৷ এখন সে আশায় জল ঢেলেছে মোদী সরকার৷ এবারের বাজেটে মোট ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র এক লক্ষ টাকা! বিপুল অঙ্কের প্রকল্পে যা অত্যন্ত নগন্য৷ রেল মন্ত্রক অবশ্য বলছে, ভাঁড়ার শূন্য৷ তাই টাকা না-থাকায় নতুন প্রকল্পের পরিবর্তে জোর দেওয়া হয়েছে পুরনো প্রকল্পে৷

২০১৭ সালের ছবিঘরটি দেখুন...