1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাকাশে জীবনযাত্রা রোমাঞ্চকর হলেও অস্বস্তি কম নয়

১৩ জুন ২০২২

মহাকাশচারীদের ভেসে বেড়াতে দেখলে কার না মহাকাশে যাবার ইচ্ছা হয়! মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে কিন্তু শরীরের উপর নানা প্রভাব দেখা যায়, যা সামলে ওঠা মোটেই সহজ নয়৷ এক মহাকাশচারীর মুখেই সেই অভিজ্ঞতার বয়ান শোনা যাক৷

https://p.dw.com/p/4Cbk4
মহাকাশচারী মাটিয়াস মাউরার
মহাকাশচারী মাটিয়াস মাউরারছবি: DW

মহাকাশচারী হিসেবে মাটিয়াস মাউরার ইচ্ছা হলেই বেরিয়ে যেতে পারেন না৷ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের চারিদিক শূন্যতায় ভরা৷ সেই পরিবেশ বাতাসহীন ও মাধ্যাকর্ষণহীন৷ মাটিয়াস সেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও মাধ্যাকর্ষণহীনতা তার শরীরের উপর কঠিন প্রভাব ফেলছে বৈকি৷ বিশেষ করে মস্তিষ্কের উপর চাপ পড়ছে৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘মানিয়ে নিতে বেশ সময় লেগেছে৷ এখানে আসার পর প্রথম কয়েক দিন মাথা কিছুটা ঝিমঝিম করে, সবকিছু দেখে তাক লেগে যায়৷ চারিপাশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে মস্তিষ্ককে সর্বদা সজাগ থাকতে হয়৷ অর্থাৎ মেঝে, দেওয়াল, ছাদ – সব দিকেই কাজ করতে হয়৷ প্রথমদিকে প্রায়ই অনেক জিনিস হারিয়ে যায়৷ সেসব খুঁজে পেতে অর্ধেক সময় লেগে যায়৷ আমার মতে, প্রায় দশ দিন পর নতুন পরিবেশ ও মাধ্যাকর্ষণহীনতার অভ্যাস হয়ে যায়৷’’

তা সত্ত্বেও বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ভেসে বেড়িয়েও মাটিয়াস মাউরার পুরোপুরি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি৷ সেই অস্বস্তির বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘‘আমার মাথা সামান্য ঝিমঝিম করে৷ বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা পুরোপুরি কাজ করে না৷ পুরোপুরি সজাগ হতে একটু সময় লাগে৷ ফলে বলতে গেলে শতভাগের বদলে ৯৫ শতাংশ তরতাজা লাগে৷ সে কারণে মহাকাশে কাজ করা আরো বড় চ্যালেঞ্জ৷ ভুল বেশি হয়, তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়াও স্বাভাবিক৷ আমার বন্ধুরা যেমন বলে, পৃথিবীর বুকে অংক করার তুলনায় মহাকাশে অংক করা আরো বড় চ্যালেঞ্জ৷’’

মহাকাশ স্টেশনে থাকার অভিজ্ঞতা জানালেন মাউরার

এমনকি তরল পদার্থও যেখানে ভেসে বেড়ায়, সেখানে শরীরের মধ্যের তরলেরও একই অবস্থা হয়৷ ফলে প্রকৃত অর্থে সে সব মাথায় চড়ে যেতে পারে৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘কোনো মহাকাশচারীকে যাত্রার আগের তুলনায় মহাকাশে পৌঁছে যে অন্য রকম দেখায়, ছবিতেও তা স্পষ্ট বোঝা যায়৷ মহাকাশে মুখচ্ছবি কিছুটা পুরু ও গোল হয়ে ওঠে৷ আমি বলি মুখটা যেন চাঁদের মতো হয়ে ওঠে৷ এর কারণ হলো, হৃদযন্ত্র পাম্প করে শরীরের তরল পদার্থ উপর দিকে চালনা করে৷ অথচ পৃথিবীর বুকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সেই তরলকে পায়ের দিকে টানে৷ ফলে মহাকাশে আমার পা অনেক চিকন হয়ে ওঠে, কারণ তরল নীচের দিকে আসে না৷ হৃদযন্ত্রের সার্কুলেশনের কারণে উপর দিকে চলে যায়৷ শরীরের উপরের অংশ, বিশেষ করে মাথায় বেশি তরল থাকে৷ ফলে মুখচোখ কিছুটা বেশি লাল দেখায়৷’’

মাথা একটু ভারি হলেও সৌভাগ্যবশত চুল ধুতে অসুবিধা হয় না৷ সেই অবস্থাকে ‘পাফি ফেস চিকেন লেগ ফেনোমেনান’ বলা হয়৷ সেটা কোনো সমস্যা নয়৷ কিন্তু মাথায় বেশি তরল চড়ে গেলে শুধু বাইরের দিকেই চাপ সৃষ্টি হয় না৷ সেই অবস্থার বর্ণনা করে মাটিয়াস মাউরার বলেন, ‘‘আমাদের মধ্যে বাড়তি ‘ক্রেনিয়াল প্রেশার’ সৃষ্টি হয়৷ অর্থাৎ মস্তিষ্কে বেশি তরল প্রবেশ করলে সেই চাপ চোখের স্নায়ু, এমনকি অক্ষিগোলকও চেপে ধরে৷ ফলে মহাকাশে আমাদের দৃষ্টিশক্তিও বদলে যায়৷ তখন কিছুটা দূরত্বের লেখা পড়তে অসুবিধা হয়৷ পৃথিবীতে প্রয়োজন না হলেও কিছু মানুষের মহাকাশে চশমার প্রয়োজন হয়৷ কাছের ও দূরের লেখা পড়ার জন্য আমারও চশমা নিতে হয়েছিল৷ তবে সৌভাগ্যবশত পরে সেগুলির আর প্রয়োজন হয়নি৷’’

আইএসএস-এ সারাক্ষণ একই জিনিস দেখতে হয় বলে চোখের অনুশীলন সম্ভব হয় না৷ মহাকাশ চিকিৎসাবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা সেটিকেও দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতার কারণ মনে করেন৷ তাছাড়া চোখ বেশি ঘোরানোও সম্ভব হয় না৷

লেয়া আলব্রেশট/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান