1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাটি কাটার কাজ পেতে মরিয়া কাজ হারানো শ্রমিকরা

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
২৬ এপ্রিল ২০২০

লকডাউনে কাজ গিয়েছে। তাই ১০০ দিনের কাজে নাম লেখাচ্ছেন কারখানার শ্রমিকরা। কিন্তু তাতেও কাজ মিলবে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

https://p.dw.com/p/3bIkP
ছবি: AFP/X. Galiana

ভারতে ২০০৫ সালে  গরিব মানুষের ন্যূনতম রোজগারের জন্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের অর্থ হলো, গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারকে কাজের মধ্যে এনে অন্তত ১০০ দিনের রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া। ২০২০ সালের রিপোর্ট বলছে, গোটা দেশে অন্তত পাঁচ কোটি ২০ লাখ মানুষ এই প্রকল্পের আওতায় আছেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এবং তার জেরে লকডাউন সেই সমস্ত হিসাব বদলে দিচ্ছে।

বিভিন্ন রাজ্য এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহে ১০ গুণেরও বেশি মানুষ ১০০ দিনের কাজে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছে। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে। রাজস্থানের উপমুখ্যমন্ত্রী এবং গ্রামীণ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী শচীন পাইলট জানিয়েছেন, ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর রাজ্যে নথিভুক্ত ১০০ দিনের কাজের কর্মী ছিলেন ৬২ হাজার। পাঁচ দিনে সেই সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ সাত হাজার। মহারাষ্ট্র জানিয়েছে সেখানে নথিভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার। কিন্তু গত কয়েক দিনে তা বেড়ে হয়েছে এক লাখ। সংখ্যাটি প্রতিদিন বাড়ছে। শুধু রাজস্থান বা মহারাষ্ট্রই নয়, দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই ১০০ দিনের শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে কাজ নেই।

মূলত রাস্তা সারাই, পুকুর কাটা, সরকারি নির্মাণ, সরকারি খেতে ফসল তোলার মতো কাজে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের ব্যবহার করা হয়। দিন পিছু তাঁদের মজুরি দেওয়া হয়। গ্রামের দিকে এই প্রকল্পের চালু নাম মাটি কাটার কাজ।  উল্লেখ্য, সাধারণত এই ধরনের শ্রমিকদের কোনও রকম প্রযুক্তিগত শিক্ষা থাকে না। কেবলমাত্র গায়ে গতরে পরিশ্রম করতে পারেন তাঁরা। ফলে দেশের বিভিন্ন গ্রামে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকদের সামাজিক ভাবে খুব সম্মানের চোখে দেখা হয় না। ন্যূনতম শিক্ষা বা প্রযুক্তি-জ্ঞান থাকলে গ্রামের মানুষ সাধারণত ১০০ দিনের কাজে যুক্ত হতে চান না। কিন্তু করোনা সব বদলে দিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক দিনে দেশে প্রায় ১২ কোটি লোক কাজ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকরা। তাঁদের অনেকেই গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। কেউ কেউ আটকে পড়েছেন ভিন রাজ্যে। কারও হাতে কোনও কাজ নেই। অদূর ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ আসবে, এমনও বলা যাচ্ছে না। ফলে তাঁরা সকলেই ১০০ দিনের কাজে নাম লেখাচ্ছেন। আশা, অন্তত ১০০ দিনের রোজগার নিশ্চিত হবে এর ফলে। সত্যি কি হবে?

সিপিএমের কৃষক ফ্রন্টের বর্ষীয়ান নেতা হান্নান মোল্লা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''পরিস্থিতি যা তাতে ১০০ দিনের কাজে যোগ না দিয়ে শ্রমিকদের আর উপায় নেই। এখন কাজের বিচার করলে চলবে না। প্রাথমিক কাজ হলো সকলে যাতে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা। কারণ, কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা নেহাতই অপ্রতুল।''

১০০ দিনের কাজ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করছেন দেবরাজ ভট্টাচার্য। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''শ্রমিকরা ১০০ দিনের কাজে নাম নথিভুক্ত করলেও তাঁরা কাজ পাবেন এবং রোজগার করতে পারবেন, এমন ভাবার কারণ নেই। বস্তুত, বেশ কিছু দিন ধরেই ১০০ দিনের কাজের এই প্রকল্প নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এত দিন পর্যন্ত নথিভুক্ত শ্রমিকরাই ৬০ দিনের বেশি কাজ পাচ্ছিলেন না। রাতারাতি কাজ বাড়বে না। ফলে নতুন করে যাঁরা নাম লেখাচ্ছেন, তাঁরা কাজ পাবেন, এমন ভাবার কারণ নেই।'' ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের অবস্থা যে খুব ভাল নয়, তা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। স্পষ্ট হয়, সরকার এ বিষয়ে খুব উৎসাহী নয়। ২০২০ সালের বাজেটে ১৩ শতাংশ বরাদ্দ কমানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের বক্তব্য, যেখানে ১০০ দিনের কাজের চাহিদা বাড়ছে, সেখানে বাজেট কমিয়ে গরিব মানুষকে আরও সমস্যায় ফেলা হয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। কাজ এবং বাজেট না থাকলে যাঁরা সামান্য রোজগারের আশায় নতুন করে নাম লেখাচ্ছেন, তাঁদের কাজ জুটবে না। রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রের সরকার সেই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বার বার বলছেন, এই অবস্থায় ১০০ দিনের কাজে জোর দেওয়া দরকার। কিন্তু কেন্দ্র এই প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ না বাড়ালে সমস্যা। হান্নান মোল্লাও বলছেন, ''যাঁদের নাম ১০০ দিনের কাজের তালিকায় আগে থেকে আছে, তারা প্রথম সুযোগ পাবেন। তারপর নতুন করে যঁরা নাম লেখালেন, তাঁদের সুযোগ আসবেন।  তাঁদের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ বড়জোর কাজ পেতে পারেন।'' 

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রজিৎ রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''করোনা পরিস্থিতিতে যে অর্থনীতি বেহাল হবে, সরকার তা আগেই বুঝতে পেরেছিল। যুক্তরাজ্য সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সাধারণ মানুষের জন্য বেশ কিছু প্যাকেজ তাই আগেই ঘোষণা করেছিল। ভারত যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তা অপ্রতুল। ফলে শ্রমিকরা নিজেরাই কাজের ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু ১০০ দিনের কাজে নাম লিখিয়ে তাঁদের রোজগারের ব্যবস্থা হবে না। পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হওয়ার আগে সরকারের উচিত কাজ হারানো শ্রমিকদের জন্য নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া। দু)খজনক বিষয় হলো, ভারতের সরকার সে দিকে নজরই দিচ্ছে না।''

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো