1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এমপির স্ত্রীর সাফাই এবং ‘লজ্জিত’ সরকার

শামীমা নাসরিন
৮ জুন ২০২০

গ্রেপ্তার নয় বরং বেকার কর্মীদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য কুয়েতের সরকারি দপ্তর ও সিআইডি থেকে লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলামকে ডেকে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি তার স্ত্রীর৷

https://p.dw.com/p/3dR6C
ছবি: Imago Images/Zuma/M. Hasan

শহিদ ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম নিজেও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি৷

সপ্তাহখানেক আগে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে মানবপাচারকারীর স্বজনদের গুলিতে ২৬ বাংলাদেশি নিহতের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই একজন নির্বাচিত এমপির নাম মানবপাচারে জড়িয়ে যাওয়া এবং ভিনদেশে তার গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়৷  

কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামের বরাত দিয়ে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোতে রোববার শহিদ ইসলামের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে৷ তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদলু এজেন্সিতেও এই খবর প্রকাশ পায়৷

শহিদ ইসলামকে গ্রেপ্তার নিয়ে গণমাধ্যমে যে খবর প্রকাশ পেয়েছে তা ঠিক নয় দাবি করে ওই দিনই তার স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে একটি বার্তা পাঠান৷

সেখানে তিনি বলেন, ‘‘শহিদ ইসলাম মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী৷ যে প্রতিষ্ঠানে  ২৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কাজ করেন৷ করোনা মহামারির কারণে গত তিন মাস কুয়েত লকডাউন হয়ে আছে৷ এই সময়ে বেকার হয়ে পড়া কয়েকজন অভিবাসী কর্মী সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করেছেন৷

‘‘কুয়েত সরকারের নিয়মানুযায়ী ব্যবসায়িক বিষয়ে আলোচনার জন্য সিআইডি তাকে ডেকে নিয়েছে৷’’

অবশ্য মানবপাচারে শহিদ ইসলামের জড়িত থাকার খবর নিয়ে সংবাদ প্রকাশ এবারই প্রথম নয়৷ গত ফ্রেব্রুয়ারিতে কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছিল কুয়েতি পত্রিকা ‘আল কাবাস’ ও ‘আরব টাইমস’৷

তখন আল কাবাস-র প্রতিবেদনে কুয়েতে মানবপাচার ও ‘ভিসা বাণিজ্যে’ জড়িত তিন বাংলাদেশির একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া এবং একজনকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হয়৷ বলেছিল, বাকি দুইজন বাংলাদেশে পালিয়ে গেছেন, যাদের একজন বার্তমান সংসদ সদস্য৷

চক্রটি ২০ হাজার জনকে কুয়েতে পাচার করে পাঁচ কোটি কুয়েতি দিনার হাতিয়ে নিয়েছে বলেও ধারণা প্রকাশ করা হয়েছিল৷

আল কাবাস পত্রিকায় এমপির নাম প্রকাশ না পেলেও তখন বাংলাদেশি কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে শহিদের নাম এসেছিল৷

ফেব্রুয়ারির ওই খবর তখন ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন৷ এবার অবশ্য এ ঘটনাকে তিনি ‘লজ্জাজনক’ ও ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন৷

কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত টেলিফোনে তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তবে কুয়েত সরকার থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি জানিয়ে তিনি রোববার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘‘ঘটনা সত্যি হলে এটা খুবই দুঃখজনক৷ বিদেশে একজন সাংসদের এ ধরনের অপরাধ কাণ্ডে জাড়ানো অনভিপ্রেত৷ আমরা এতে লজ্জিত৷’’

উন্নত জীবনের আশায় সহায়সম্বল বিক্রি করে দেশ-পরিবার ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাচারকারীদের হাত ধরে অজানা পথে নামে মানুষ৷ লিবিয়ায় হতাহত ৩৭ বাংলাদেশিও একই আশায় পাচারকারীদের খপ্পরে ধরা দিয়েছিলেন৷ উন্নত জীবন তো দূরের কথা, তাদের বেশিরভাগের জীবনই থাকলো না৷

মানবপাচার করতে পাচারকারীরা যে রাস্তা আর যে কৌশল অবলম্বন করে তাতে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি৷ সেই সঙ্গে অমানুষিক নির্যাতন করে পরিবারের কাছ থেকে আরো টাকা আদায় তো আছেই৷

DW-Mitarbeiterin Shamima Nasrin
শামীমা নাসরিন, ডয়চে ভেলেছবি: privat

অত্যন্ত সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করা মানবপাচার চক্রে দেশি-বিদেশি অনেক এজেন্ট থাকে৷ ফলে বেশিরভাগ সময় পাচারের শিকার ব্যক্তি বা তার পরিবারের কিছুই করার থাকে না৷ কারণ, তারা এ বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারে না৷৷ মানবপাচারের বিরুদ্ধে দেশে কঠোর আইন আছে৷ কিন্তু ওই আইনে হওয়া মামলার বিচার কাজ দিনের পর দিন চলতে থাকে৷ মাঝেমধ্যে চক্রের চুনাপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে আড়ালেই থেকে যায়৷

লিবিয়ায় বাংলাদেশি খুনের ঘটনায় সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলায় রাজধানী ঢাকায় ১৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ বলা বাহুল্য, এদের সবাই চক্রের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের সদস্য৷ হয়তো, মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে শিকার সংগ্রহ করে দেওয়াই এদের কাজ৷ আর আড়ালে থেকে পুরো চক্র নিয়ন্ত্রণ করেন ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা৷ সরকার যন্ত্রও যাদের হাতের মুঠোয়৷

ফেব্রুয়ারির ঘটনা যখন প্রকাশ পায় তখন এটিকে ‘ভুয়া নিউজ’ বলে উড়িয়ে না দিয়ে যথাযথ তদন্তের ব্যবস্থা নিলে হয়তো থলের বেড়াল বেরিয়া আসতো এবং আজ এভাবে ভিন দেশে গে্রপ্তার কাণ্ডে ‘লজ্জিত’ হতে হতো না৷

আরব টাইমস-র খবর অনুযায়ী, পাঁচজন প্রবাসী বাংলাদেশি এমপি শহিদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন৷ তারা বলেছেন, তারা শহিদকে কুয়েতে নিয়ে যাওয়ার বিনিময়ে তিন হাজার কুয়েতি দিনার দিয়েছেন এবং প্রতিবছর মেয়াদ বাড়ানো জন্য বাড়তি অর্থ দেন৷