‘‘মানুষ পৃথিবীর নিকৃষ্ট একটা জাতি৷ যে জাতির কাছে মা, বোন এখন নিরাপদ নয়,'' বলেছেন ডয়চে ভেলের পাঠক সালাউদ্দিন৷
শাফিন লিখেছেন, ‘‘ভারতেই এসব সম্ভব, সত্তর বছরের একজন নারীকে ধর্ষণ করা৷''
মো. রেজাউল হক মনে করেন, ভারত একটা আজব দেশ৷ ‘‘এদেশে কত কিছুই না ঘটে!,'' লিখেছেন তিনি৷
উল্লেখ্য, ভারতের প্রায় সর্বত্রই বেড়ে চলেছে ধর্ষণের ঘটনা৷ এক বছরের শিশু থেকেসত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা, কাম-রিপুর বিকৃত প্রকাশ কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না৷ এর সাম্প্রতিকতম ও ন্যক্কারজনক নমুনা বর্ধমানে সত্তর বছরের এক প্রবীণাকে ধর্ষণ৷
-
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
ভারতীয় নারী
‘নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত ভারতে প্রতিদিন একশ’ নারীর ওপর যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের অভিযোগ পায় পুলিশ৷ ২০১৬ সালে ভারতের পুলিশ প্রায় ৩৯ হাজার নারীর ওপর আক্রমণ বা হয়রানির অভিযোগ পেয়েছিল, যা তার আগের বছরের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি ছিল৷ ভারতের নারীরা যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ছাড়াও, পাচার, জোর করে কাজ করানো, আয় বৈষম্য, অ্যাসিড নিক্ষেপ ইত্যাদির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
-
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান
২০১১ সালে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত একই শিরোনামের প্রথম জরিপটিতে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় আফগানিস্তান ছিল প্রথমে৷ এবার তালিকায় তাদের অবস্থান দুই নম্বরে৷ তালিকায় যে সাতটি বিষয়ের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল, তার চারটি বিষয়ে আফগানিস্তান সবচেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে৷ লৈঙ্গিক নিপীড়ন, ব্যবহার, নিরক্ষরতা, দারিদ্র ইত্যাদি প্রশ্নে আফগানিস্তান এখনো নারীদের জন্য নরক৷
-
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
সিরিয়া
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর উত্থান এবং যুদ্ধ সেদেশের নারীদের জন্য তৈরি করেছে ভয়ংকর পরিবেশ৷ ২০১১ সালে একই তালিকায় সিরিয়া প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ছিল না৷ তারাই এবার উঠে এসেছে তিন নম্বরে৷
-
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
আফ্রিকার তিন দেশ
সোমালিয়া, কঙ্গো আর নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দেশের তালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ, সপ্তম এবং নবম স্থানে রয়েছে৷ এদের মধ্যে সোমালিয়া প্রায় দুই দশক ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত৷ এর আগের তালিকায় সোমালিয়ার অবস্থান ছিল ৫ নম্বরে৷ এদিকে ২০১১ সালের তুলনায় জরিপের ফল অনুযায়ী রিপাবলিক কঙ্গোর অবস্থান কিছুটা ভালো হয়েছে৷ তারা এর আগে তালিকায় দুই নম্বরে ছিল৷
-
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
সৌদি ও পাকিস্তান
আগের তালিকায় পাকিস্তান ছিল তিন নম্বরে, অর্ধযুগের বেশি সময় পরে চালানো জরিপে তাদের অবস্থান ছয় নম্বরে৷ এদিকে সম্প্রতি নারীবান্ধব নানা পদক্ষেপ নিলেও সৌদি আরব নারী অধিকার ও নিপীড়নের প্রশ্নে, এখনো বিশ্বে নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশের তালিকাতে শীর্ষের দিকেই রয়ে গেছে৷ সৌদির অবস্থান নতুন তালিকায় ৬ নম্বরে৷
-
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
জরিপ
জাতিসংঘের সদস্য ১৯৩ টি দেশের ওপর এই জরিপ চালানো হয়৷ জরিপে তালিকার শীর্ষের দেশগুলো আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের৷ যে যে বিষয় জরিপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো: স্বাস্থ্যখাত, নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক চর্চা, যৌন নিপীড়ন, যৌনতা ছাড়া অন্যান্য নিপীড়ণ এবং নারী পাচার৷
-
নারীদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর দেশ ভারত
অ্যামেরিকাও তালিকায়
পশ্চিমের একমাত্র দেশ হিসেবে মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় অ্যামেরিকা এসেছে ১০ নম্বরে৷ সম্প্রতি ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন এবং ‘টাইমস আপ’ ক্যাম্পেইনে নারীদের ওপর দেশটিতে প্রচুর যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ হতে শুরু করায় তালিকায় এসেছে দেশটি৷
এই ঘটনায় মো. তারেক আজিজ মুন্না শুধু একটি শব্দই লিখেছেন, ‘নিকৃষ্ট'৷
সাকিব রায়হানের মন্তব্য, ‘‘এরা মানব সন্তান না, এরা জন্তু৷ এদের জনসম্মুখে ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত৷''
‘‘মানুষ আর কত নীচে নামবে?'' প্রশ্ন মো. নুরুজ্জামান ইসলাম মাদুরের৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পদনা: জাহিদুল হক
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট
নারী নির্যাতন সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অহরহ৷ তার ওপর পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধের যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেটাও যথার্থ নয়৷ এছাড়া বিশ্বের মোট নারীর ৭ শতাংশ নাকি জীবনের যে কোনো সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
উন্নত বিশ্বের নারীরাও রেহাই পান না
ধর্ষণ শব্দটি শুনলেই মনে হয় এ ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে শুধু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে৷ আসলে কিন্তু মোটেই তা নয়৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়৷ এমনকি জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
ধর্ষিতা নারীরা জানাতে ভয় পান
জার্মানিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত বা ধর্ষিত নারীদের সঠিক পদ্ধতিতে ‘মেডিকেল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সোনিয়া পিলস বলেন, ‘‘ধর্ষণের শিকার নারী লজ্জায় এবং আতঙ্কে থাকেন৷ তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে সে অভিজ্ঞতা বা ধর্ষক সম্পর্কে তথ্য জানাতে ভয় পান, কুণ্ঠা বোধ করেন৷ অনেকদিন লেগে যায় ধর্ষণের কথা কাউকে বলতে৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
ধর্ষককে ধরার জন্য দ্রুত ডাক্তারি পরীক্ষা
ধর্ষণের পর নারীদের কী করণীয় – এ বিষয়ে জার্মানির ধর্ষণ বিষয়ক নির্দেশিকায় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ধর্ষণের পর একা না থেকে কারো সাথে কথা বলা৷ গোসল, খাওয়া, ধূমপান, বাথরুমে যাওয়ার আগে, অর্থাৎ ধর্ষণের চিহ্ন মুঝে না যাবার আগে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো৷ এ পরীক্ষা করালে ধর্ষক কোনো অসুখ বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল কিনা, তা জানা সম্ভব৷ নারীর শরীরে নখের আচড় বা খামচি থাকলে ধর্ষকের চিহ্ন সহজেই পাওয়া যায়৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
যাঁরা ধর্ষণের শিকার, তাঁদের জন্য জরুরি বিভাগ
ধর্ষক যেসব জিনিসের সংস্পর্শে এসেছে, অর্থাৎ অন্তর্বাস, প্যাড এ সব তুলে রাখুন৷ ছবিও তুলে রাখতে পারেন৷ নিজেকে দোষী ভাববেন না, কারণ যে ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম কাজটি করেছে – সেই অপরাধী, আপনি নন৷ জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরের হাসপাতালে যৌন নির্যাতন বিষয়ক আলাদা জরুরি বিভাগ রয়েছে৷ তাছাড়া ধর্ষণ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে রয়েছে ‘গেভাল্ট গেগেন ফ্রাউয়েন’, যেখানে ২৪ ঘণ্টাই টেলিফোন করা যায়৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
গ্রুপ থেরাপি
যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার নারীদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সমাধানের জন্য জার্মানিতে রয়েছে গ্রুপ থেরাপি, যার সাহায্যে নারীরা আবার সমাজে সহজভাবে মিশতে পারেন এবং তাঁদের জীবনে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি সহজে ভুলে যেতে পারেন৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
সবচেয়ে বেশি যৌন অপরাধ হয় বাড়িতেই
ভারতের কোথাও না কোথাও প্রতি ২২ মিনিটে একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে৷ তাই আদালতের নির্দেশে ভারতের পুলিশ বিভাগ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল দিল্লির ৪৪টি এলাকায়৷ চলতি বছরের গত আট মাসে ২,২৭৮টি ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন এবং যৌন অপরাধের তদন্তের ফলাফলে দেখে গেছে: ১,৩৮০টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা হলেন পরিবারের লোকজন এবং পরিচিতজনেরা৷ অর্থাৎ নিজের বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়!
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
সঠিক বিচার চাই
২০১৩ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দিল্লিতে গণধর্ষণ ঘটনার পর, ভারতে ঘটা করে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসিয়ে ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ দমনে আইন-কানুন ঢেলে সাজানো হয়৷ শাস্তির বিধান আরো কঠোর করা হয়৷ কিন্তু তাতে যৌন অপরাধের সংখ্যা না কমে বরং বেড়েছে৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
বাংলাদেশে ধর্ষণের শিকার
বাংলাদেশে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১১ সালে ৬২০ জন, ২০১২ সালে ৮৩৬ জন, ২০১৩ সালে ৭১৯ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ মাত্র ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮২ জন৷ তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অপহরণ করে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাও অনেক বেড়েছে৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
নারীর পোশাকই কি ধর্ষণের জন্য দায়ী?
বাংলাদেশের একজন পুলিশ কর্মকর্তা একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বাংলাদেশের নারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বেপরোয়াভাবে, বেপর্দায় চলাফেলার কারণে ধর্ষণের শিকার হন৷’’ পুলিশের কর্মকর্তার দাবি, ধর্ষণের দায় প্রধানত নারীদের৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘বখাটে ছেলেরা তো ঘোরাফেরা করবেই৷’’ এ কথা শুধু পুলিশ কর্মকর্তার নয়, ভারত-বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাই এরকম৷ ধর্ষণ বন্ধ করতে এই মধ্যযুগীয় চিন্তা, চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন৷
-
কেন এত ধর্ষণ? কী করলে কমবে এ জঘন্য অপরাধ?
ছোট বেলা থেকে সচেতন করতে হবে
ধর্ষণ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সঠিক ধারণা দিলে স্বাভাবিকভাবে ধর্ষণের সংখ্যা কমবে৷ তাছাড়া পাঠ্যপুস্তকেও বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷ ধর্ষিতা নারীকে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়, সে সম্পর্কেও সচেতনতা দরকার৷ অনেকে যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ গোটা সমাজও নারীকেই দোষ দিয়ে থাকে৷ ডাক্তারি বা মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য ছাড়াও প্রয়োজন পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজের বন্ধুবৎসল আচরণ৷
লেখক: নুরুননাহার সাত্তার