1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মালিতে সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে উন্নয়নের উদ্যোগ

১৮ জুন ২০২১

আফ্রিকার দেশ মালির গ্রামাঞ্চলে মানুষের আয়ের সুযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে ফ্রান্সের এক এনজিও৷ সৌর বিদ্যুৎ ও পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনছে এই উদ্যোগ৷

https://p.dw.com/p/3v8kp
প্রতীকী ছবিছবি: DW/J. Schneider

কাসিম সানোগোর শিক্ষানবিশরা কেতাদূরস্ত পোশাক তৈরির কাজ শিখছেন৷ দর্জি হিসেবে তিনি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক দ্লকি-বাস এবং পুরুষদের পিপাউস তৈরি করেন৷ কৌরি গ্রামের কিশোরদের জন্য সেই প্রশিক্ষণ সত্যি সৌভাগ্যের কারণ বটে৷ কাসিম বলেন, ‘‘আমি এখানে তরুণ প্রজন্মের প্রশিক্ষণের জন্য একটি কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ কাজের অভাবে অনেকে অন্য জায়গায় গিয়ে পেশাগত প্রশিক্ষণ নেয়৷ এখানেও সেটা সম্ভব৷ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সৃষ্টি করলে তরুণ প্রজন্ম শেখার সুযোগ পাবে বলে আমি মনে করি৷’’

সৌরশক্তির দৌলতেই সানোগোর দর্জির দোকানে এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷ ফ্রান্সের উন্নয়ন সাহায্য সংগঠন জেরেস যে বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও সোলার কালেক্টর গড়ে দিয়েছে, এই দোকান তারই অংশ৷ সানোগোর মতো ছোট ব্যবসায়ী এই উদ্যোগের ফলে যথেষ্ট অগ্রগতির মুখ দেখছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই কেন্দ্রের কারণে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ সুলভ মূল্যে স্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ ছাড়া কিছুই সম্ভব হতো না৷’’

সারা মাসে বিদ্যুতের ব্যয় ১৪ ইউরোর মতো৷ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি মালির ৩০ জন তরুণকে পেশাদারি প্রশিক্ষণ দিতে পারছেন৷

২০১৯ সালে বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তোলার পর থেকে ১৫টি সংস্থা সেখানে সক্রিয় রয়েছে৷ ছুতার মিস্ত্রী ও ওয়েল্ডারের মতো অনেক মিস্ত্রী সেখানে কাজ করছেন৷ একজন ফটোগ্রাফার, একটি রেস্তোরাঁ ও স্থানীয় একটি রেডিও স্টেশনও এই কেন্দ্রে স্থান পেয়েছে৷

গ্রামের মানুষের আয় বাড়ানোর চেষ্টা

রমজান মাসে ইফতারের খাবার শীতল রাখার জন্য বরফ তৈরির যন্ত্র খুব জরুরি৷ সৌর প্লান্টের কর্মক্ষমতা নিশ্চিত রাখতে লিডি ওনগোইবা প্রতিদিন টহল দেন৷ শহরে আরামের জীবন পেছনে ফেলে তিনি এই কাজ বেছে নিয়েছেন৷ এই প্লান্ট বছরে ৩১ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে৷ লিডি বলেন, ‘‘সৌর সেন্টারের ক্ষমতা চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট৷ তা সত্ত্বেও বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে৷ আমার ধারণা, সেটা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে৷ কারণ এখনো সব কোম্পানি পুরোপুরি কাজ শুরু করেনি৷’’

এনজিও হিসেহে জেরেস মালির কুভো শহরে দ্বিতীয় একটি কেন্দ্রও গড়ে তুলেছে৷ দিয়ারামানা এলাকায় তৃতীয় কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ চলছে৷ ২৪ ঘণ্টা ধরে দশটি কোম্পানির জন্য পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷

ওয়েল্ডার হিসেবে সুমাইলা ফানে কেন্দ্রের মধ্যে খুব ভালো জায়গা পেয়েছেন৷ সেখানে গিয়ে নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে তিনি উদগ্রীব হয়ে আছেন৷ সুমাইলা বলেন, ‘‘আমি লেদ মেশিন ও প্লানারের মতো অন্যান্য যন্ত্র কিনতে চাই৷ বিদ্যুতের অভাবে এখনো সেটা করতে পারি নি৷ জেনারেটর দিয়ে এমন যন্ত্র চালানো যায় না৷’’

জেরেস মালিতে আরও পাঁচটি কেন্দ্র গড়ে তুলছে৷ সম্প্রসারণের আরও পরিকল্পনা রয়েছে৷ সংগঠনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার গ্রেগোয়ার গেইলি বলেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলের ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানী হিসেবে আমরা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ এবং গোটা মহাদেশে এই সমাধানসূত্র আরও বেশি করে তুলে ধরতে চাই৷ হয় এনজিও হিসেবে আমরাই এমন প্রকল্প শুরু করবো৷ অথবা অবকাঠামোর দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই প্রক্রিয়ার স্বার্থে আমরা বেসরকারি সংস্থাগুলির উপর নির্ভর করতে চাই৷’’

আবার কুরির দর্জির দোকানে ফেরা যাক৷ মানিয়েনে সাংগারে প্রতিদিন নিজের বাচ্চা মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন৷ তার স্বামীও কাজ করেন বলে বাসায় শিশুকে দেখাশোনা করার কেউ নেই৷ এই কেন্দ্র না থাকলে মানিয়েনে পেশার কোনো সুযোগ পেতেন না৷ মানিয়েনে বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শেষ করার পর আমি নিজেই কুরিতে সেলাইয়ের ওয়ার্কশপ খুলতে চাই৷ শিক্ষক হিসেবে আমার স্বামীর ট্রান্সফার হলে আমি নতুন জায়গায় গিয়ে ওয়ার্কশপ খুলতে পারি৷’’

কাসিম সানোগো ও তার শিক্ষানবিশদের জন্য সৌর বিদ্যুৎ শহরের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনছে৷ ফলে গ্রাম থেকে শহরে মানুষের ঢল কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

সাশা গানকিন/এসবি