1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাল্টিপ্লেক্স রূপে নবজীবন মেট্রো সিনেমার

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বেসরকারি উদ্যোগে নবজীবন ‘মেট্রো’ সিনেমার৷ এক দশক পরে আবার খুলল এই প্রেক্ষাগৃহের দরজা৷ কলকাতা ফিরে পেল তার ঐতিহ্যের হারানো আইকন৷ তবে সিঙ্গল স্ক্রিন নয়, ‘মেট্রো' ফিরল মাল্টিপ্লেক্স রূপে৷

https://p.dw.com/p/3pq9A
মেট্রো আইনক্স মাল্টিপ্লেক্স
ছবি: Payel Samanta/DW

লকডাউনের পর সম্পূর্ণ দর্শকাসন নিয়ে সিনেমা হল চালানোর অনুমতি ছিল না৷ গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০০ শতাংশ দর্শক বসার অনুমতিও মিলেছে৷ তবুও অনেক হলই এখনো খোলেনি৷ এই প্রেক্ষাপটেই কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার বুকে প্রায় এক দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক মেট্রো সিনেমা হল খুলল ২০ ফেব্রুয়ারি৷ মাল্টিপ্লেক্স চেইন ‘আইনক্স’-এর হাত ধরে৷ যেখানে ঐতিহ্যবাহী লাইটহাউস, রক্সি, এলিট, জ্যোতি, চ্যাপলিন, লোটাস, টাইগার, প্যারাডাইসের মতো হলগুলি স্থায়ী বা অস্থায়ীরূপে ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে দুটি স্ক্রিন, ৪২২টি আসন নিয়ে নতুন রূপে মেট্রোর আগমন সিনেমা ব্যবসাকে কতটা আশা জোগাবে?

১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের বুকে মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়র সংস্থার হাতেই (বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন প্রযোজনা ও বিপণন সংস্থা) এই মেট্রো সিনেমা হলের গোড়াপত্তন৷ ২০১১ সালে এই প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যায়৷ মূল সিনেমা হলটি অপরিবর্তিত রেখে শপিং মলে বদলে যায় বাকি অংশ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, মেট্রো কেবল সিনেমা হল নয়, একটা ঐতিহ্য৷ ৮৬ বছর আগের সে ঐতিহ্য শহরে আবার আনন্দের উদ্রেক করেছে সিনেমাপ্রেমী-সহ সব নাগরিকের কাছে৷ নতুন বাংলা ছবি ‘প্রেম টেম’, ইংরেজি ছবি ‘টম অ্যান্ড জেরি' ও ‘টুইসডেস অ্যান্ড ফ্রাইডেস’ দেখানো চলছে৷ বাংলা ছবি ‘প্রেম টেম’-এর পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতটা ঐতিহ্যবাহী হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং সেখানে জামাকাপড়ের বিপণি হওয়ায় আমাদের খারাপই লেগেছিল৷ কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটা ধর্মতলার বুকে এই মেট্রো৷ আইনক্সের হাত ধরে মেট্রোর ফিরে আসা আমাদের কাছে খুশির খবর৷” ঐতিহ্যবাহী মিনার সিনেমার মালিক সুরঞ্জন পাল বলেন, ‘‘সিনেমা ব্যবসায় ফিরে আসাটাই গুরুত্বপূর্ণ৷ মিনারের ক্ষেত্রেও আমি এমনটাই করতে চাই৷’’

কলকাতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটা ধর্মতলার বুকে এই মেট্রো: পরিচালক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

ভ্যালেন্টাইন ডে, সরস্বতী পুজোর পরে পরে বাংলা ছবি সিঙ্গল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স নির্বিশেষে দর্শকদের হলমুখী করেছে৷ মেট্রো আইনক্সেও মাস্ক মুখে ইতিউতি দর্শকদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গেল৷ খুদে দর্শকেরা ‘টম অ্যান্ড জেরি’-র সন্ধানে হাজির হয়েছে৷ তবে কি আশা করা যায়, এ ক্ষেত্রে আইনক্সের হাত ধরে মেট্রো সিনেমা কলকাতার দর্শকদের বাড়তি আবেগ জোগাবে? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক মধুজা মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইতিহাসটা আবেগ নয়৷ ইতিহাস থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ৷ ১৯০৬ সালের তৈরি চ্যাপলিন (এলফিনস্টোন পিকচার প্যালেস ছিল অতীতে) পুরো ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে৷ এখন সেখানে সরকারি অফিস তৈরি হচ্ছে৷ এটা খুবই হতাশাজনক৷ এই ধরনের ঐতিহাসিক জায়গাগুলিতে কোনো প্রদর্শনশালা করলে মানুষ ইতিহাস জানতে পারত৷ সরকারের হাত ধরে এগুলির সংস্কার দরকার৷’’ এ প্রসঙ্গে ঐতিহ্যশালী মিনার্ভা থিয়েটারের কথা বলেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘মিনার্ভার সংস্কার একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ৷ এ রকম সরকারি উদ্যোগের দরকার ছিল৷ আইনক্সের মতো ব্র্যান্ড মেট্রো নেওয়ার ফলে বাণিজ্য বেশি গুরুত্ব পেল, ইতিহাস কম৷’’

আইনক্সের মতো ব্র্যান্ড মেট্রো নেওয়ার ফলে বাণিজ্য বেশি গুরুত্ব পেল, ইতিহাস কম: অধ্যাপক মধুজা মুখোপাধ্যায়

মেট্রো সিনেমা হল ছিল ১৯২০-৩০ সালের ইউরোপীয় শিল্পকলা ও স্থাপত্যের ‘আর্ট ডেকো মুভমেন্ট’-এর অন্যতম নির্দশন৷ তাই কলকাতা পুরসভার ‘হেরিটেজ কনজার্ভেশন কমিটি’ মেট্রোর বাইরের কাঠামো অক্ষত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল৷ স্থপতিবিদ সুবীর বসু নতুন মেট্রো তৈরির নেপথ্যনায়ক৷ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের কথায়, হেরিটেজ শৈলী অক্ষুণ্ণ রেখেই নতুন মেট্রো নির্মাণ করা হয়েছে৷ সরকার কেন সংস্কারের উদ্যোগ নিল না? স্থপতিবিদ আনমোল গ্রোভার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের কাছে মেট্রো সংরক্ষণের অর্থ নেই৷ তাই প্রথম দিকে শপিং মল হয়ে যায়, যাতে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু সাহায্য পাওয়া যায়৷ এখন একটা অংশ সিনেমা হল করা হচ্ছে, এটা আনন্দের৷ সংরক্ষণের মডেল হিসেবে এটা খুবই ভাল৷ বহিরঙ্গে মেট্রো বদলায়নি, এটাও আনন্দের৷’’

শহরের বুকে আবারও একটা সুস্বাদু খাবারের ঠিকানা-সহ মাল্টিপ্লেক্স! সিঙ্গল স্ক্রিন নয় কেন? অনিন্দ্য বলেন, ‘‘সিনেমা দেখতে দল বেঁধে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে৷ বিরাট আকারের মেট্রো সিনেমার রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেক৷ আইনক্স নেওয়াতে সুবিধা হল, দু-তিনটি স্ক্রিন পাওয়া যাচ্ছে৷ পুরনো প্রোজেকশনের তুলনায় নতুন প্রোজেকশনও ভালো হবে৷’’