মিশেল প্লাতিনি: অপবাদ নাকি দায়মুক্তি?
পায়ের জাদুতে মাঠে আলো ছড়াতেন৷ আশির দশকে মধ্য মাঠের সেরা খেলোয়াড় বলতে, মুখে মুখে ফিরতো প্লাতিনির নাম৷ ফুটবল সংগঠক হিসেবেও পেয়েছন সাফল্য৷ ৯৮তে নিজ ঘরে বিশ্বকাপ জেতে ফ্রান্স৷ অপবাদ গায়ে মেখেই কী শেষ হবে তাঁর ফুটবল অধ্যায়?
দুর্দান্ত ফুটবলার
কুশলী পা, তীক্ষ্ণ মেধা আর গোলের তীব্র আকাঙ্ক্ষা-সব নিয়ে মিশেল প্লাতিনি ছিলেন আশির দশকের সেরা ফুটবলার৷ লিগ ওয়ানে ন্যান্সি ও সেন্ট ইতয়েনের সঙ্গে দফা রফা করে, ১৯৮২ সালে প্লাতিনি যোগ দেন য়ুভেন্তোসে৷ ওই সময় তিনি পরিণত হন বিশ্ব তারকায়৷ ‘দ্য ওল্ড লেডি’র হয়ে লিগ জিতেছেন দুই বার৷ ১৯৮৪ সালে পেয়েছেন ইউরোপীয়ান কাপ উইনার্স শিরোপার স্বাদ৷
জাতীয় নায়ক
ক্লাবের গণ্ডি ছাড়িয়ে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেকে মেলে ধরেন প্লাতিনি৷ তাঁর নেতৃত্বে ১৯৮৪ সালে ঘরের মাটিতে ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে ফরাসীরা ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্পেনের বিরুদ্ধে ফ্রি কিক থেকে একমাত্র গোলটি করেন প্লাতিনি৷ তখন থেকেই নিজ দেশে নায়ক বনে যান এই খেলোয়াড়৷ উৎসবে মেতে উঠে লা গ্রানাদা৷ এরপর আসে ইউরোপের সেরা ক্রীড়াবিদের স্বীকৃতি৷
বন্ধুর পথচলা
খেলোয়াড় জীবনের ইতি টানতে না টানতেই, ফ্রান্সের কোচ বনে যান প্লাতিনি৷ তখন তার বয়স মাত্র ৩৩৷ মাঠে যতোটা সাফল্য পেয়েছেন, সাইডলাইনে বসে, দলকে তা এনে দিতে ব্যর্থ তিনি৷ এমনকি ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার সুযোগটাই পেলো না ফ্রান্স৷ এরপর, টানা ১৯টি ম্যাচে অপরাজিত ছিল তাঁর দল৷ কিন্তু ১৯৯২ সালের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে, আবারো চটজলদি বিদায়৷ তাতেই বিদায় ঘণ্টা বাজান কোচিং জীবনের৷
সফল আয়োজক
১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপ আয়োজনের গুরুদায়িত্বটা বর্তায় তাঁর কাঁধে৷ ৩৮ বছর বয়স এসে, আর মাঠে নয়, ফুটবলকে এগিয়ে নিতে শুরু করলেন সংগঠকের কাজ৷ এলো সাফল্য৷ ওই বছর, ‘নতুন যুগের অনুপ্রেরণা‘ জিনেদাইনে জিদানের জাদুতে বিশ্বজয় করে ফ্রান্স৷ সম্ভবত তখনই, সেপ ব্লাটারের সঙ্গে মিত্রতায় তাড়িত হন প্লাতিনি৷
বদলে গেল ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
২০০৭ সালে ইউরোপীয় ফুটবলে বড় ধরণের ঝাঁকুনি দিলেন প্লাতিনি৷ লেনার্ট জোহানসনকে সিংহাসনচ্যুত করে, তিনি নির্বাচিত হলেন উয়েফা প্রেসিডেন্ট৷ ছোট দল আর পূর্ব ইউরোপের ফুটবল ফেডারেশনের সমর্থনে ভোটে জেতেন প্লাতিনি৷ ওইসময়, ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আকার বড় করেন তিনি৷ সূচনা হয়, ১৬ দলের পরিবর্তে ২৪ দল নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন৷
শিষ্যত্ব, প্রশ্রয় আর অপরাধে অংশীদারিত্ব?
সেপ ব্লাটারের পর ফিফা প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন প্লাতিনি৷ কিন্তু গুরুর দায়িত্ব শিষ্যের বুঝে নেয়ার সুযোগ আর হয়নি৷ বরং ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগে, দুজনকেই ফিফা থেকে বহিস্কার করা হয়৷ কারণ? নামমাত্র পরমার্শ কাজের অজুহাতে ব্লাটারের অ্যাকাউন্ট থেকে ১.৮ মিলিয়ন ইউরো ঢুকে পড়ে প্লাতিনির থলিতে৷ ফলে, গিয়ান্নি ইনফান্তিনো পেয়ে যান ফিফার নেতৃত্ব৷
থমকে দাঁড়িয়ে
দুর্নীতির দায় মুক্তিতে যুদ্ধ নেমেছিলেন প্লাতিনি৷ কিন্তু সাফল্য আসেনি৷ ক্রীড়া আদালতেও তার আপিল ব্যর্থ হয়৷ ২০১৫ সালে ডিসেম্বরে, ফিফা থেকে আট বছরের জন্য প্লাতিনিকে নিষিদ্ধ করে সংস্থাটির নীতি-নৈতিকতা বিষয়ক কমিশন৷ ওই আপিলে আদালতে সিদ্ধান্ত ছিল, ব্লাটার-প্লাতিনির লেনদেন ঠিক দুর্নীতি নয়, তবে বিষয়টি আইন বহির্ভূত৷ পরে তাঁর নিষেধাজ্ঞা আট থেকে কমিয়ে চার বছর করা হয়৷
শেষ পরিণতি?
এ বছরের শেষে ফুটবল কেন্দ্রিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন প্লাতিনি৷ তার আগে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ! অভিযোগ উঠেছে, ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতারের দায়িত্ব পাওয়ার পেছনেও রয়েছে তাঁর হাত৷ তবে কী ফিফায় তার ক্যারিয়ার শেষ? তার আইনজীবী অবশ্য সেটা মনে করেন না৷ তার দাবি, প্লাতিনি কোনো অন্যায় করেনি৷ এ ঘটনায় তার কোনো সম্পর্কও নেই, বিষয়টিও তার অজানা৷ কিন্তু, সোমবার এই অভিযোগে প্লাতিনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ৷