1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমারে জার্মান প্রতিষ্ঠানের সফলতা

২০ জানুয়ারি ২০১৯

জার্মান সরকারের সহায়তায় মিয়ানমারে স্থাপিত হয় ‘সিন্ডে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র'৷ দুই দেশের আন্তরিক সহযোগিতায় বেশ সফলভাবে চলছে এটি৷

https://p.dw.com/p/3BlpD
ছবি: DW/R. Ebbighausen

প্রায় চার দশক আগে গড়ে তোলা হয়েছিল এটি৷ প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের পূনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এখান থেকে পাশ করা সাবেক শিক্ষার্থীরা সমবেত হন৷ সাবেক শিক্ষার্থীরা গত চার দশকে মিয়ানমারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রেখেছেন তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন৷

যেভাবে শুরু

সত্তর দশকের শেষ দিকের কথা৷ তৎকালীন মিয়ানমার সরকারের শিক্ষামন্ত্রী সেখানকার জার্মান দূতাবাসকে মিয়ানমারে জার্মান সরকারের সহযোগিতায় একটি মডেল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দেন৷ এতে বলা হয়, একটি দ্বৈত শিক্ষা ব্যবস্থা হতে পারে সবচেয়ে ফলপ্রসূ যেখানে শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক দু'ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে৷ জার্মান সরকার এ প্রস্তাবে রাজি হয়৷ ১৯৭৫ সালে মোং চো নামে একজন সামরিক কর্মকর্তা দেশটির শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন৷ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি জার্মান কোম্পানি ফ্রিটৎস ভেরনের-এ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন৷ ইয়াঙ্গন থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে সিন্ডে নামক জায়গাটিকে তিনি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বেছে নেন৷ সে থেকেই শুরু পথচলা৷ বেশ কয়েকজন জার্মান শিক্ষক ও ২৪ জন স্থানীয় শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি৷ প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০৮ জন৷

প্রতিবন্ধকতা ও নতুন সুযোগ

মিয়ানমার বিষয়ক জার্মান গবেষক হানস-বের্ন্ড সলনের সিন্ডের এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সম্পর্কে লিখেছেন, ‘‘এ ভোকেশনাল স্কুলটি ধীরে ধীরে পথচলা শুরু করলেও এর ভিত্তি ছিল বেশ শক্ত৷'' প্রতিষ্ঠার ১০ বছরের মধ্যে জার্মান সরকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির পরিচালনার সব দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করে৷ তবে অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখে জার্মান সরকার৷  এদিকে ১৯৮৮ সালে মিয়ানমারে সামরিক সরকার ক্ষমতায় এলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান বন্ধ করে দেয় জার্মান সরকার৷ তবে সে সময়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা ছাড়াই স্কুলটি পরিচালনা করতে থাকে মিয়ানমার সরকার৷ যদিও এ সময় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির পাঠ্যসূচি বেশ পুরোনো হয়ে পড়ে এবং ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ অনেকটা অনুপযোগী হয়ে পড়ে৷ যে কারণে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে ব্যবহারিক ক্লাসের উপর আর ততটা জোর দিতে পারছিলো না মিয়ানমার সরকার৷ এদিকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষা নেয়ার সুযোগ পেতে সহায়তা করতে থাকে৷ অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ মিয়ানমারের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছিল৷

নতুন করে শুরু

২০১২ সালে মিয়ানমারে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দেশটির উপর থেকে সব ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন৷ এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে জার্মান-মিয়ানমার উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আবার শুরু হয়৷ শুধু তাই নয় মিয়ানমারের উপর থেকে সব ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়ার পরবর্তী সময়ে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে জার্মানিই মিয়ানমারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এগিয়ে আসে৷

সফল উদ্যোক্তা

প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি প্রথম ব্যাচের ছাত্র ইয়ে টুট পড়াশোনা শেষে ১৯৮২ সালেরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন৷ ১৯৮৮ সালে সহকর্মীদের সাথে সামরিক সরকারবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন টুট৷ এ সময় সরকারের চাপের মুখে দেশ ত্যাগ করতে হয় তাঁকে৷ ইয়ে টুট চলে যান সিঙ্গাপুরে এবং সেখানে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ তবে ১৯৯৯ সালে দেশে ফিরে তিনি মাল্টি পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন৷ ‘‘আমি সব সময়ই দেশের জন্য কাজ করতে চেয়েছি৷ যে কারণে দেশে ফিরে নিজ উদ্যোগে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করি যেখানে আরো অনেকেই চাকরির সুযোগ পায়'', ডয়চে ভেলেকে বলেন ইয়ে টুট৷ তাঁর এ প্রতিষ্ঠানে এখন প্রায় ১২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন৷ এর মধ্যে ২৩ জন জার্মান সরকারের সহযোগিতায় স্থাপিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আসা শিক্ষার্থী৷ টুট বলেন, তাঁর এ সফলতার পেছনে রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি, যা তাঁকে প্রায়োগিক জ্ঞান সমৃদ্ধ একজন দক্ষ প্রকৌশলী হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে৷   

কী ভবিষ্যত শিক্ষার্থীদের?

জার্মানির সহায়তায় গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে মিয়ানমারের শিক্ষাব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখেছে৷ প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা জার্মানির আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের নিয়োজিত করছে প্রকৌশলী পেশায় আর অবদান রাখছে দেশের অর্থনীতিতে৷ আগামী বছর ৪০তম বর্ষপূর্তি হবে প্রতিষ্ঠানটির৷

রোডিওন এবিগহাওসেন/আরআর

প্রতিবেদনটি ভালো লেগে থাকলে জানান আমাদের, নীচের ঘরে৷