1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা: বিতর্ক শেষ হবে কবে?

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ জুন ২০২০

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের একটা তালিকা প্রস্তুত করা যায়নি৷ প্রত্যেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটা নতুন সরকার আসে, নতুন করে একটা তালিকা প্রস্তুত করা হয়৷

https://p.dw.com/p/3dW21
আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ ছবিটি ১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় তোলা৷ছবি: AP

ভুয়া বা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নয় বলে বাতিল করা হয় কিছু নাম৷ স্বাধীনতার পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে এই বিতর্ক চলে আসছে৷

আওয়ামী লীগ প্রায় ১২ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়৷ এর মধ্যেও বহুবার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ সর্বশেষ গত রোববার এক প্রজ্ঞাপনে বিমান বাহিনীর ৮১ ও বিজিবির ১ হাজার ১৩৪ জনসহ মোট ১ হাজার ১৮১ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ নতুন করে ৪১ জেলায় ১ হাজার ২৫৬ জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে৷ এই অন্তর্ভুক্তি আর বাদ দেওয়াতেও তৈরী হয়েছে নতুন বিতর্ক৷

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান, বীর বিক্রম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারা চাই এই বিতর্কের অবসান হোক৷ কিন্তু তা তো হচ্ছে না৷ কারণ ২০১৬ সালে আমি যখন কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান তখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে নিয়ে আমি তৎকালীন সেনা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করি৷ সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যদি কোন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট বাহিনী থেকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেবে মন্ত্রণালয়ে৷ মন্ত্রণালয় সেটা মেনে নেবে৷ ২০১৭ সালের ২১ জুন এ নিয়ে একটা প্রজ্ঞাপনও হয়৷ কিন্তু এখন বিমান বাহিনীর যে ৮১ জনকে বাদ দেওয়া হল সেটা কি ওই বাহিনীর সুপারিশের ভিত্তিতে? তাই যদি না হয় তাহলে তো বিমান বাহিনী প্রধান তো প্রশ্ন তুলতেই পারেন কিভাবে তাদের বাদ দেওয়া হল? ফলে বিতর্কটা শেষ হচ্ছে না৷’’

আমরা মুক্তিযোদ্ধারা চাই এই বিতর্কের অবসান হোক, কিন্তু তা তো হচ্ছে না: হেলাল মোর্শেদ খান

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা প্রজ্ঞাপন থাকলে সেটা রহিত না করে সে বিষয়ে নতুন করে কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া যায় না৷ সশস্ত্র বাহিনীর একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন৷ তারা চাকরিতে ফিরতে পারেননি তাই বলে তাদের মুক্তিযোদ্ধার সম্মান কেড়ে নেওয়া যায় না৷ তাছাড়া জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এ জাতীয় সুপারিশও করতে পারে না৷ ২১ জুনের আদেশেই বলা আছে, যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে বিতর্ক দেখা দেয় তবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও মন্ত্রণালয় যৌথভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে৷ এটিকে পাশ কাটানো হয়েছে৷ এর ফলে সামরিক মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন৷

আবার নতুন করে যাদের মুক্তিযোদ্ধা করা হয়েছে, তাদের অনেকেই আগে একাধিকবার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার কালো তালিকাভুক্ত হয়ে আছেন৷ তাছাড়া তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায় কোনো কোনো উপজেলা থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন নতুন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন৷ স্বাধীনতার পর অন্তত পাঁচ বার তালিকা হয়েছে কিন্তু কোনো তালিকায় তারা আসেননি৷ এতদিন পর কীভাবে তারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আসলেন তা নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে৷
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আপনারাই একবার বলেন সঠিক তালিকা করুন, ভুয়াদের বাদ দেন৷ আবার সেটা করতে গেলে আপনারাই প্রশ্ন তোলেন? আমরা তাহলে কি করব? এটা গত ডিসেম্বর মাসের সিদ্ধান্ত৷ তখন তো করোনা ছিল না৷ বিজি প্রেস চার-পাঁচ মাস লাগিয়েছে এটা ছাপাতে৷ এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই৷ এখানে কোনো ভুল থাকলে ক্ষতিগ্রস্থরা আপিল করতে পারবেন৷ কোনো বাহিনীতে অমুক্তিযোদ্ধা থাকলে তাদের সনদ বাতিল করা যাবে না কেনো?’’

কোনো বাহিনীতে অমুক্তিযোদ্ধা থাকলে তাদের সনদ বাতিল করা যাবে না কেনো?: মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী

আওয়ামী লীগ টানা প্রায় ১২ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও কাজটা কেন শেষ হচ্ছে না? জবাবে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘আজ যদি একটা খুন হয়, তাহলে তার বিচার শেষ হবে ১০ বছর লেগে যায়৷ তেমনি তালিকা থেকে চাইলেই কাউকে বাদ দেওয়া যায় না৷ অনেক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজটা চূড়ান্ত করতে হয়৷’’

এর আগে সর্বশেষ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ নিয়ে বিতর্কের জেরে তা স্থগিত রাখা হয়৷ পরে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধার সঠিক পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করবেন এমন ঘোষণা দিলেও সেটা এখনো হয়নি৷

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘আমরা শুরু থেকেই বলছি, আমলাদের দিয়ে এই কাজটা করালে বিতর্ক শেষ হবে না৷ এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে৷ এই কথা বলার কারণে আমার ২০১৩ সালের একটা বিল মন্ত্রণালয়ে আটকে রয়েছে৷ আসলে আগে এটা পরিস্কার হওয়া দরকার যে, কোন শ্রেনীকে আমরা মুক্তিযোদ্ধা বলব৷ তবে আগের যে কোন সময়ের মন্ত্রীদের চেয়ে বর্তমান মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে আমার কাছে অনেক বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে৷ যতবারই নতুন তালিকা হয়েছে, ততবারই এটা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে৷ ফলে অনেক কাজই দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে আছে৷ আমার মনে হয় না, এই বিতর্কের কোন অবসান আমরা করতে পারব?’’