1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুখচ্ছবি দিয়ে অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ লন্ডনের পুলিশ

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

অপরাধী শনাক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও মানুষের দক্ষতা কিন্তু আজও অনেক বেশি৷ লন্ডন পুলিশের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মীরা সিসিটিভি ভিডিও দেখে সন্দেহভাজন মানুষকে শনাক্ত করার কৃতিত্ব দেখাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/47hOR
Großbritannien ITN-Protestaktion in London
ছবি: Tolga Akmen/AFP via Getty Images

২০১৪ সালের ২৮শে আগস্ট লন্ডনের ঘটনা৷ ১৪ বছরের অ্যালিস গ্রস দুপুরে হাঁটতে বেরিয়েছিল৷ চারটে ছাব্বিস মিনিটে একটি ক্যামেরায় তার ছবি উঠেছিল৷ তারপর থেকেই সে নিখোঁজ৷ ২০০৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর লন্ডনের পুলিশ এত বড় আকারের অভিযান চালায়নি, যেমনটা তার সন্ধানে করা হয়েছে৷

এ ক্ষেত্রে সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ বিশ্বের অন্য কোনো শহরে এত বেশি নজরদারি নেই৷ লন্ডনে আনুমানিক দশ লাখ ক্যামেরা পদে পদে মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখে৷

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের দফতরে সেই ভিডিও বিশ্লেষণ করা হয়, যেটি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড নামেও পরিচিত৷ সেখানে বেশ কয়েকজন ‘সুপার রেকগনাইজার' কর্মরত রয়েছেন, যাঁরা মুখচ্ছবি খুব ভালো মনে রাখতে পারেন৷ এমনকি ভিড়ের মধ্যে আংশিক লুকানো বা অস্পষ্ট ছবি দেখেও তাঁরা কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেন৷

অনেক বছর ধরে সেই ক্ষমতার কথা জানা না থাকায় সেটি কখনো কাজেও লাগানো হয় নি৷ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনর মিক নেভিল বলেন, ‘‘১৯৯৪ সালে টের পেলাম যে পুলিশ সিসিটিভি ভিডিও ঠিকমতো কাজে লাগাচ্ছে না৷ আঙুলের ছাপ বা ডিএনএ-র মতো কোনো নির্ধারিত প্রণালী নেই৷ ফলে আমি ছবি সংগ্রহ ও ঠিকমতো ক্যাটালগ করার সিস্টেম তৈরির কাজ শুরু করলাম৷ সেটা করতে গিয়ে বুঝলাম, ছবি দেখে কয়েকজন অফিসার প্রতি ১০০ ব্যক্তির মধ্যে এক বা দুই জনকে শনাক্ত করতে পারেন, কয়েকজন দশ বা বিশ জনকেও চিহ্নিত করেন৷ তখন বোঝা গেল, যে কিছু মানুষের সত্যি এ বিষয়ে জ্ঞান আছে৷''

এভাবে বিশ্বের প্রথম সুপার রেকগনাইজার ইউনিট গঠন করা হলো৷ এলিয়ট পোরিট সেটির প্রধান৷ তিনি নিজেও তাঁর এই বিশেষ প্রতিভা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না৷ এলিয়ট বলেন, ‘‘সেটা ছিল ২০১২ সাল৷ আমাকে বলা হলো, তুমি সুপার রেকগনাইজার তালিকায় রয়েছো৷ প্রথমে ভাবলাম সেটা আবার কী! অপরাধীদের পোস্টার দেখে আমি সফলভাবে তাদের শনাক্ত করতে পারছিলাম বলেই আমাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল৷''

সেই দক্ষতা অ্যালিস গ্রসের ক্ষেত্রে খুব কাজে লেগেছিল৷ ১৪ বছর বয়সি কিশোরী নিখোঁজ হবার কয়েক দিন পরেই একই এলাকার এক নারী তাঁর স্বামীর সন্ধানে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ পুলিশের খাতায় সেই ব্যক্তির নাম থাকায় সন্দেহের তির তার দিকেই চলে গেল৷

সুপার রেকগনাইজাররা অ্যালিসের যাত্রাপথে তোলা ভিডিও বিশ্লেষণ করে সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা শুরু করলেন৷

এলিয়ট পোরিট ও তাঁর টিম সত্যি সেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারলেন৷ শুধু তাই নয়, অ্যালিস নিখোঁজ হবার পর দেখা গেল যে, সেই ব্যক্তি নদীর তিরে নির্দিষ্ট এক জায়গায় বার বার যাচ্ছে৷ এলিয়ট পোরিট বলেন, ‘‘তখন আমরা তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বললাম, যে আমরা সেই ব্যক্তিকে অপরাধস্থলে যেতে দেখেছি৷ তখন তারা অ্যালিসকে খুঁজে পেল৷''

১৪ বছরের কিশোরীর বাবা-মা প্রায় এক মাস পর ভয়াবহ বাস্তবের মুখোমুখি হলেন৷ জানলেন,  নদীর তীরে মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে৷ মোজা ছাড়া তার পরণে কিছুই ছিল না৷

কিন্তু তখনো সন্দেহভাজন অপরাধীর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না৷ শুধু খুনের কিনারা নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সুপার রেকগনাইজারদের দক্ষতা কাজে লাগে৷ লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মী হিসেবে এলিয়ট পোরিট জানালেন, ‘‘আমাদের অন্যতম সফল কেসের মধ্যে দোকানের এক পাকা চোরের ঘটনা রয়েছে৷ আমাদের একজন সুপার রেকগনাইজার কয়েক সপ্তাহের ফারাকে এক ব্যক্তিকে চিনতে পারলেন৷ নিজেদের তথ্যভাণ্ডারেই সেই ব্যক্তির ছবি ছিল৷ খোঁজ করার সময় আমরা তাকে তিন-চার বার দেখেছি৷ অপরাধী ও অপরাধস্থলের সব ছবির তথ্যভাণ্ডার থাকার এটাই সুবিধা৷ কারণ এভাবেই আমরা অমীমাংসিত অপরাধের রহস্য সমাধান করতে ফিরে তাকাতে পারি৷ ৪৩টি অপরাধের দায়ে আমরা সেই ব্যক্তিকে ধরতে পারলাম৷''

কোনো ফেশিয়াল রেকগনিশন সফ্টওয়্যার এমন অসাধ্যসাধন করতে পারতো না৷ খুব ভালো মানের ছবি ছাড়া এমন প্রযুক্তি কাজ করে না৷ কিন্তু তদন্তকারীদের হাতে সব সময়ে তেমন ছবি থাকে না৷

আনা ফ্ল্যুগার/এসবি