1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে ডাক্তারদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৭ জুন ২০১৯

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর সারা রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন থামলেও ডাক্তারের সঙ্গে রোগীদের আরও বেশি দূরত্বের শঙ্কা থেকে গেল৷

https://p.dw.com/p/3Kajh
Indien westbengalische Politikerin Mamata Banerjee
ছবি: Ians


টানা ছয় ‌দিনের অচলাবস্থা কাটাতে একটি দাবি ছাড়া আন্দোলনরত ডাক্তারদের প্রায় সব দাবিই মেনে নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার৷ দাবিটি ছিল যে  ধর্মঘটিদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে৷ তবে আন্দালেনর দিনগুলোতে রাজ্য প্রশাসন ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে  বিক্ষোভরত ডাক্তাররাও নমনীয়তা দেখালেন৷ মূখমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচিত পাঁচজন প্রতিনিধির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার আলোচনার দাবি থেকে সরে এলেন তারা৷ ফলে রাজ্যের ১৪টি মেডিকেল কলেজ থেকে দুই‌জন করে প্রতিনিধি এবং আরও দুইজনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতি থাকবে ডাক্তারদের এ শর্তও মুখ্যমন্ত্রী মেনে নেন৷ ফলে রাজ্য সচিবালয় ‘‌নবান্ন'‌–তে গিয়ে কথা বলতে ডাক্তাররাও রাজি হন ৷

সেই আলোচনা শেষ হল ডাক্তারদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে৷ ডাক্তাররা করজোড়ে বললেন, আপনি সময় করে একবার ওখানে, সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ান৷ মুখ্যমন্ত্রী ছদ্ম ভর্ৎসনার সুরে বললেন, ‘‌আমি যেতে চাই তো!‌ তোমাদের জন্যেই যেতে পারছি না৷ তোমরা আন্দোলন তোলো, আমিও যাব'৷ ‌ জনতার হামলায় জখম জুনিয়র ডাক্তার পরিবহ মুখার্জিকে দেখতে যাওয়ার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী৷

সরকারি হাসপাতালের সুরক্ষা বাড়াতে সর্বত্র সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো, ফটকে বাড়তি পুলিস পাহারা, স্থায়ী পুলিস গুমটি তৈরি করা, রোগীর সঙ্গীদের  সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে দুইজনে আনা, হঠাৎ হাঙ্গামা হলে বিপদঘণ্টার ব্যবস্থা করা— এরকম একগুচ্ছ পরিকল্পনা আগেই নিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন৷ সোমবারের আলোচনায় আরও কিছু প্রস্তাব এল৷ কিছু প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর, কিছু ডাক্তারদের৷ যেমন এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে যাতে রোগী এবং তাঁর দুইজন সঙ্গী ছাড়া যাতে আর কেউ ঢুকতে না পারে  সেজন্য লোহার গেট বসানোর কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি আরও প্রস্তাব দিলেন,  কর্তব্যরত ডাক্তারদের সঙ্গে রোগীর পরিজনদের সরাসরি সংযোগ এড়াতে প্রতি বিভাগে জনসংযোগ কর্মকর্তা রাখার৷ রোগীর  অবস্থা ওই আধিকারিকই জানাবেন৷ মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি বৈঠকে হাজির রাজ্য পুলিসের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিলেন, প্রত্যেক থানায় যেন একজন করে পুলিশ কর্মকর্তা শুধু হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন৷ অন্যদিকে ডাক্তাররা বললেন, তাঁদের তরফের অভাব–অভিযোগ জানানোর জন্য একটি বিশেষ সেল চালু করার কথা৷

সরকারি হাসপাতালে প্রতিদিন মানুষের ক্ষোভ, দুঃখ, রাগের মোকাবিলা জুনিয়র ডাক্তারদের করতে হয়৷ তাই তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করার বিষয়ে সবাই একমত৷ এনআরএস হাসপাতালের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদে, নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষ ও সিনিয়র ডাক্তাররাও সমর্থন দেন৷ এই আন্দোলন এনআরএস থেকে কলকাতার অন্যান্য হাসপাতালে, বিভিন্ন জেলায়, ক্রমশ গোটা রাজ্যে এবং শেষ পর্যন্ত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ সোমবারও ভারতের প্রথম সারির চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এইমস–এর আবাসিক ডাক্তারদের সংগঠনের ডাকে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে৷ টানা ছয়দিন সরকারি হাসপাতালের বহির্চিকিৎসা বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়েছিল৷

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এবং ডাক্তারদের তা স্বাগত জানানোর মধ্যেও কি চিকিৎসক–রোগী সম্পর্কের ভিত কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেল?‌ অসুস্থ, মুমূর্ষু পরিজনকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পর যে স্বজন এতদিন ডাক্তারের হাত ধরে বলতেন, ‘‌আপনি ভগবান, আপনি বাঁচিয়ে দিন!‌'‌— সেই বিশ্বাসের মাঝে কি দেওয়াল তুলে দেওয়ার সূচনা হল এদিন?‌