1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেসি-বার্সেলোনা: জয় হলো কার?

নোমান মোহাম্মদ ঢাকা
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

নাটকের চেয়েও নাটকীয় ১০ দিন৷ লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার ইচ্ছেবোমা ফাটানোয় শুরু; সিদ্ধান্ত বদলে এ মৌসুম থেকে যাওয়ায় শেষ৷ বাংলাদেশের ফুটবলার, কোচ, ক্রিকেটার, ক্রীড়া সাংবাদিকরা কী ভাবছেন এ নিয়ে?

https://p.dw.com/p/3i709
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Franco

ফুটবল কোচ মারুফুল হকের কাছে মেসির বার্সেলোনা ছাড়তে চাওয়া খুব বেশি অপ্রত্যাশিত ছিল না, ‘‘মেসির দলবদলের পুরো বিষয়টি আমার কাছে খুব চমক হয়ে আসেনি৷ এ রকম কিছু হতে পারে, তা বুঝতে পারছিলাম৷ গত পুরো মৌসুমেই খেলাতে বোঝা গেছে, যথেষ্ট অনুপ্রাণিত মেসি ছিলেন না৷ মনে হচ্ছে যেন শুধু দায়িত্ব পালন করছিলেন, খেলা উপভোগ করছিলেন না৷’’

অবশ্য মেসির অতীত যে তাকে কিছুটা সংশয়ে রেখে ছিল সে কথাও স্বীকার করেছেন তিনি, ‘‘তবে একইসঙ্গে এটিও ধারণা করেছিলাম, ক্লাব ছাড়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত মেসি বার্সেলোনা ছাড়বেন না৷ কারণ, মেসি আর্জেন্টিনা থেকে অবসর নিয়ে পরে আবার সিদ্ধান্ত বদলেছেন৷ আমার তাই মনে হয়েছে, সত্যি সত্যিই বার্সা ছাড়ার জন্য তিনি এ ঘোষণা দেননি৷ কেবল নাড়া দিতে চেয়েছেন৷’’

বাস্তবতা হলো শেষ পর্যন্ত একটা মৌসুম অন্তত বার্সেলোনাতেই থাকছেন মেসি৷ তারপর? এই প্রশ্নে মারুফুল হকের জবাব, ‘‘এ মৌসুমের পরও মেসি বার্সেলোনায় থাকবেন কিনা, তা অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে৷ যদি বার্সেলোনা দল বদলে যায়, যদি মেসি আগের মতো উপভোগ করতে পারেন, তাহলে মনে হয় না, উনি অন্য কোনো ক্লাবে যাবেন৷’’

বার্সেলোনা সমর্থন করি মেসির কারণে: মাশরাফি

ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা জানালেন তিনি বার্সেলোনাকে সমর্থনই করেন মেসির কারণে, ‘‘বার্সেলোনা সমর্থন করি মেসির কারণে৷ একজন খেলোয়াড়ের মাধ্যমেই কোনো ক্লাবকে কেউ পছন্দ করেন৷’’ তবে মেসি চলে গেলেই যে বার্সেলোনাকে সমর্থন করা বাদ দিতেন তা মোটেই নয়, কারণ, ‘‘মেসি চলে গেলে ক্লাবের সমর্থন পাল্টে ফেলবো, বিষয়টা এমন না৷ রোনালদিনহো যখন বার্সায় খেলেছেন, তখন মেসির বয়স ১৯-২০ বছর৷ তখন রোনালদিনহো ভালো খেলুক, সেটি চেয়েছি না? আবার উনি ক্লাব ছাড়ার সময়ও খারাপ লেগেছে৷ এখন যদি এমন হয়, মেসি যে ক্লাবে যাবে, আমি সে ক্লাবই সমর্থন করব, তা একটু অন্য রকম হয়ে যায়৷ মেসি চলে গেলে অবশ্যই খারাপ লাগত৷ কিন্তু এটি পেশাদারদের জগত৷ এখানে খারাপ-ভালো লাগার যুক্তি থাকে না৷’’ মাশরাফী আরো বলেন, ‘‘এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মেসিকে মেসি হিসেবে তৈরি করেছে বার্সেলোনা৷ শারীরিক সমস্যার সময় থেকেই তিনি বার্সেলোনায়৷ কী কারণে এ ক্লাব ছাড়তে চেয়েছেন, এর ভেতরে অনেক গল্প আছে, যা আমরা কেউই জানি না৷ নিজেদের মতো করে আন্দাজে বলে দেবো, সেটি ঠিক হবে না৷ তবে শেষ পর্যন্ত যে মেসি থেকে গেছেন, সেটিও নিশ্চয়ই কোনো কারণে৷’’

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতম সাবেক অধিনায়ক মনে করেন মেসির বার্সেলোনায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দেয়া যায় না, ‘‘এ বছর যদি নিজে ভালো খেলেন, ক্লাব ভালো ফল পায় তাহলে মেসির মন পরিবর্তন হতে পারে৷ বার্সেলোনায় এই মৌসুমের পরও খেলতে পারেন৷ তবে আমার কাছে মনে হয়, মানসিক দূরত্ব নিয়ে থাকা আর না থাকা একই কথা৷ এটিও ক্লাব ও মেসি ভালো জানে৷ আমি যা বুঝি, মানসিক দূরত্ব থেকে সেরা কিছু বের করা যায় না৷’’

জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা শুরুতেই বললেন স্প্যানিশ ক্লাবটির সঙ্গে আর্জেন্টাইন তারকার ক্যারিয়ারসমান সম্পর্কে চিড় ধরায় বিস্মিত হওয়ার কথা, ‘‘বার্সেলোনার জন্য মেসির যেমন অনেক অবদান, মেসির জন্যও বার্সেলোনার অনেক অবদান৷ তুলনা করলে বার্সার অর্জনে মেসির অবদানটাই বেশি বলে মনে করি৷ তাঁর বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা পুরো বিশ্বকেই নাড়া দিয়েছে৷’’

তুলনা করলে বার্সার অর্জনে মেসির অবদানটাই বেশি বলে মনে করি: আশরাফুল ইসলাম রানা

সঙ্গে মেসি-রোনাল্ডো যে সমকালীন ফুটবলকে উপভোগ্য করে তুলেছেন সে কথা স্মরণ করে রানা বললেন, ‘‘গত ১২-১৪ বছরে মেসি-রোনালদো বড় ধরনের এন্টারটেইনার৷ দুজনই গ্রেট ফুটবলার৷ আমার পছন্দ রোনালদো, মেসিকেও যে খারাপ লাগে, তা নয়৷ আর ক্লাব হিসেবে সমর্থন করি রিয়াল মাদ্রিদকে৷ তবু মেসির দলবদলের বিষয়টি আলাদা৷ আমি জানি না, বার্সেলোনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী! অনেক ফুটবলার ছেড়ে দিচ্ছে৷ ওরা নতুন পরিকল্পনা করছে৷ এখানে মেসির মানিয়ে নিতে হবে৷'' তার মতে মেসি আর বার্সেলোনার সামনে এখন কঠিন সময়, ‘‘আমার মনে হয় না, বার্সেলোনায় মেসি আর খুব ভালোভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন৷ একজন খেলোয়াড় তখনই পারফর্ম করতে পারেন, যখন অফিসিয়াল-কোচ তাঁর উপর শতভাগ আস্থা রাখেন৷ বার্সেলোনায় মেসির সঙ্গে অফিসিয়াল ও কোচের একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে৷ এটি কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন৷’’

শেষ পর্যন্ত সাময়িক যে একটা আপোশরফা হলো, তাতে কে বেশি উপকৃত? মেসি, নাকি বার্সেলোনা? নাকি দু পক্ষই? ক্রীড়া সাংবাদিক মোস্তফা মামুনের জবাব, ‘‘আমার মনে হয়, এটি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই পরাজয়৷ মেসির জন্য পরাজয়, কারণ, তিনি চলে যেতে চেয়েছিলেন, অথচ ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকতে হচ্ছে৷ বার্তোমেউয়ের জন্য পরাজয়, কারণ, মেসি যেভাবে প্রকাশ্যে তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং তাতে তিনি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছেন না৷ বার্সেলোনা ক্লাবের জন্য পরাজয় দলের প্রেসিডেন্ট-কোচ এবং দলের সেরা খেলোয়াড়ের মধ্যে দূরত্ব থাকাটা৷ কোচের সঙ্গে মেসির আলোচনার খবর বাইরে বেরিয়ে আসায় তা সরাসরি লড়াইয়ের জায়গায় চলে গেল৷ বার্সেলোনা সমর্থকরাও ঠিক নিশ্চিত নন, মেসিকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে রাখাটা ঠিক হলো, নাকি তাঁকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে বিদায়েই ক্লাবের ভালো হতো৷ সব মিলিয়ে তাই আমি এখানে সব পক্ষেরই পরাজয় দেখছি৷ তবে এটিও বোধহয় কেউ জানেন না, জয় কীসে হতো! এখানে সবাই পরাজিত হয়েছে কিন্তু কিভাবে জিততে পারতো তা কেউ জানেন না৷’’

তিনি মনে করেন এই মৌসুম শেষেও মেসি বার্সেলোনায় থাকবেন কিনা, তা জানতে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, ‘‘আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় স্পোর্টিং সাফল্য৷ মাঠের ফুটবলে সাফল্য পেলে হয়তো মেসি ক্লাব ছাড়বেন না৷ নিশ্চয়ই মনে আছে, সাবেক কোচ লুইস এনরিকের সঙ্গে মেসির তুমুল ঝামেলা হয়েছিল৷ কিন্তু ২০১৪-১৫-র সেই মৌসুমে ক্লাব ট্রেবল জিতলো, ব্যস, বাকি সব ইস্যু পড়ে যায় পেছনে৷ এবারও তেমন কিছু হওয়াটা পুরোপুরি অসম্ভব না৷ আরেকটি ব্যাপার হলো, ক্লাবের নির্বাচন৷ আগামী বছরের সেই নির্বাচনে বার্তোমেউকে পেছনে ফেলে অন্য কেউ নির্বাচিত হলে তিনি মেসিকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাই নিশ্চয়ই করবেন৷ সত্যি বলতে কী, প্রার্থীদের নির্বাচনি ক্যাম্পেইন হবে মেসিকে কেন্দ্র করে৷ বার্সেলোনা ও মেসিকে নিয়ে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় তাই আসেনি৷ মাঠের ফুটবল ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে৷’’

আরেক ফুটবল কোচ সাইফুল বারী টিটু বললেন, ‘‘মেসি জাত চ্যাম্পিয়ন; সবসময় জিততে চান৷ রোনালদিনহো, জাভি, ইনিয়েস্তা, অঁরি, ভিয়া, ইতোদের সঙ্গে উনি খেলেছেন৷ তাঁরা একে অন্যের পরিপূরক ছিলেন৷ এখন হয়তো মেসি চারপাশে অমন মানের সতীর্থ পাচ্ছেন না৷ আবার পেপ গার্দিওলার সঙ্গে একসঙ্গে হওয়া যায় কিনা, সেটিও হয়তো ভেবে দেখছিলেন৷ তবু মেসি বার্সেলোনা ছাড়বেন, এটি কল্পনার বাইরে ছিল৷’’ তবে তার মতে এ মৌসুম থাকতে বাধ্য হলেও আর বেশিদিন হয়ত বার্সেলোনায় থাকবেন না মেসি, ‘‘আমার মনে হয়, বার্সেলোনায় এটিই শেষ মৌসুম হবে মেসির৷ কারণ, ছন্দ-সুর কেটে গেছে৷ মনে হলো, তিনি বাধ্য হয়ে থেকে গেলেন৷ ব্যাপারটিকে আদালত পর্যন্ত নিয়ে গেলে কী লাভ হতো? মামলা হয়তো পাঁচ-ছয় মাস চলতো৷ এ সময়ে মেসি হয়তো খেলতে পারতেন না৷ তাই তাঁর হয়তো মনে হয়েছে, এ মৌসুম খেলে চুক্তিটা শেষ করি৷ ফ্রি ট্রান্সফারে পরের মৌসুমে তিনি চলে যাবেন বলেই আমার মনে হয়৷’’

গত  বছরের সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...