1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেয়েলি নামের ঘূর্ণিঝড়!

৮ জুন ২০১৪

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিন্স উপকূলে ২০০৫ সালে যে ঝড়টি ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছিল তার নাম ক্যাটরিনা না হয়ে পুরুষবাচক হলে প্রাণহানি কি কম হতো? গত ৬২ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে গবেষকদের কিন্তু তেমনটাই ধারণা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/1CEF9
মেয়েলি নামের ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানির পরিমাণ পুরুষ নামের ঝড়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি ছিল!ছবি: picture-alliance/dpa

ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের গবেষকরা বলছেন, ১৯৫০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা হারিকেন বা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে যেসব ঝড়ের নাম ছিল মেয়েদের নামে, সেগুলোতে প্রাণহানি ঘটেছে পুরুষবাচক নামের ঝড়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি৷ আর এ জন্য অ্যামেরিকানদের মনস্তত্ত্বকেই দায়ী করেছেন তাঁরা৷

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঝড়ের নাম মেয়েলি হলে মানুষ অনেকটা হালকাভাবে নেয়৷ অন্যদিকে পুরুষবাচক নামের ঝড়গুলোর ক্ষেত্রে তাঁরা অনেক বেশি সতর্ক৷

সাগরে কোনো নিম্নচাপ যখন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তখন তথ্য সংরক্ষণ এবং বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্য এর একটি নাম দেয়া হয়৷ আর নাম দেয়ার কাজটি করা হয় পূর্বনির্ধারিত একটি তালিকা থেকে৷

GLOBAL IDEAS: Best Practice models to fight climate change

অ্যাটলান্টিক মহাসাগর এলাকার ক্ষেত্রে ইংরেজি বর্ণমালা অনুসারে প্রতি বছরের জন্য ২১টি নাম বাছাই করে এই তালিকা তৈরি করা হয়৷ বৈষম্য এড়াতে এমনভাবে এ তালিকা করা হয়, যাতে একটি নাম ছেলেদের হলে পরেরটি হবে মেয়েদের৷ যেমন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর অ্যাটলান্টিক উপকূলে চলতি বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে আর্থার, পরেরটি বার্থা৷

২০০৫ সালের মতো কোনো বছর ২১টির বেশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে সেগুলোর নাম হবে গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী – আলফা, বিটা, গামা৷ এভাবে প্রতিটি তালিকায় ছয় বছরের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম আগেই ঠিক করা হয়৷ ফলে কোন ঝড় কতটা শক্তিশালী বা বিধ্বংসী রূপ নেবে, তার সঙ্গে নামের কোনো যৌক্তিক যোগাযোগ থাকে না৷

অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের এই গবেষণায় উল্টো ফলই দেখা যাচ্ছে৷ গত ছয় দশকে যেসব ঝড়ের নাম রাখা হয়েছিল পুরুষবাচক শব্দে, সেগুলোতে গড়ে ১৫.৫ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ অন্যদিকে মেয়েলি নামের ঝড়গুলোতে প্রাণহানি ঘটেছে গড়ে ৪১.৮৪ জন মানুষের৷

এই প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক অধ্যাপক শ্যারন শাভিট বলেন, ‘‘নারী-পুরুষের নাম শুনে মানুষ যে ধরনের আচরণ আশা করে, ঘূর্ণঝড়ের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটে৷ আগুয়ান ঝড়টি কতটা শক্তিশালী হবে – নাম শুনেই তা তাঁরা অনুমান করার চেষ্টা করেন৷ এ কারণে সিন্ডি বা বেলে নামের ঝূর্ণিঝড় কম ভয়ংকর হবে বলেই তাঁরা ধরে নেন৷''

বিষয়টি পরীক্ষা করতে কতগুলো নাম দিয়ে একটি সমীক্ষা চালান গবেষকরা৷ কোন নামের ঝড় কতটা শক্তশালী হতে পারে তা কল্পনা করতে বলা হয় অংশগ্রহণকারীদের৷ তাঁদের জবাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আলেক্সান্দ্রা, ক্রিস্টিনা বা ভিক্টোরিয়া নামের ঝড়গুলোকে তাঁরা আলেকজান্ডার, ক্রিস্টোফার বা ভিক্টরের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন৷

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যাজেল রোজ মার্কাস বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা৷ সাংস্কৃতিক চেতনা আমাদের যে কোনো পদক্ষপকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে – এতে তারই প্রমাণ পাওয়া গেল৷''

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর ১৯৫৩ সালে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করে৷ তাদের দেয়া প্রথম নামটি ছিল অ্যালিস৷ ঝড়ের আচরণ নারীর মতোই অনিশ্চিত – এমন একটি প্রচলিত ধারণা থেকে সে সময় প্রায় সব ঝড়ের নামই হতো মেয়েদের নামে৷ কিন্তু লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ ওঠায় ১৯৭০ সাল থেকে নামকরণের বর্তমান রীতি চালু করা হয়৷ ১৯৭৯ সালের ‘বব' হলো প্রথম ঘূর্ণিঝড়, যে ছেলেদের নাম পায়৷

গবেষকরা বলছেন, এবারের সমীক্ষায় যা পাওয়া গেল, তাতে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে আরেক দফা পরিবর্তন আনার প্রয়োজন তৈরি হলো৷

জেকে/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য