1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ম্যালেরিয়া নির্মূল করার লক্ষ্যে বিজ্ঞানীদের উদ্যোগ

১৭ মে ২০২২

অনেক জটিল রোগ মোকাবিলায় সাফল্য এলেও ম্যালেরিয়া পুরোপুরি নির্মূল করা এখনো সম্ভব হচ্ছে না৷ বিজ্ঞানীরা জিন প্রযুক্তিসহ একাধিক কৌশল ব্যবহার করে মশার ক্ষমতা দূর করার চেষ্টা করছেন৷

https://p.dw.com/p/4BPrV
ফাইল ফটোছবি: Jerome Delay/AP Photo/picture alliance

বিজ্ঞানী হিসেবে সিলভিয়া পর্তুগাল প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপ্যারুম নামের পরজীবী নিয়ে গবেষণা করছেন৷ মশার কামড়ের মাধ্যমে এই প্যারাসাইট ম্যালেরিয়া রোগ ছড়িয়ে দেয়৷ তিনি বলেন, ‘‘লোহিত রক্ত ​​কণিকার মধ্যে বেড়ে ওঠে বলে এই প্যারাসাইট এত বিপজ্জনক৷ সেগুলির বংশবৃদ্ধির গতিও কম নয়৷ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ থেকে ৩২টি নতুন পরজীবী জন্ম নেয়৷ সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি রক্তনালীগুলির আস্তরণে জোট বাঁধে৷ খুব ছোট নালীতে রক্ত চলাচলও বন্ধ করতে পারে৷ বিশেষ করে শিশুদের জন্য জটিল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷ সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া নামের একটা রোগ আছে৷'' 

সিলভিয়া পর্তুগাল জানতে পেরেছেন, যে শুষ্ক মরসুমে ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইট প্রায় ছয় মাস শরীরে থাকলেও মানুষ রোগে আক্রান্ত হয় না৷ সেই জ্ঞান রোগ মোকাবিলার কাজে সহায়তা করতে পারে৷ সিলভিয়া মনে করেন, ‘‘টিকা থাকলে ভালো হতো৷ কিন্তু বর্তমানে ম্যালেরিয়ার মোকাবিলায় যা হাতে আছে, তার ক্ষমতা খুব সীমিত৷ কিন্তু আমরা দেখেছি, যে বিভিন্ন দেশে শুধু আরও ভালো হাসপাতাল, চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারলে আক্রান্তদের সংখ্যা নাটকীয় মাত্রায় কমে যায়৷ মস্কুইটো ভেক্টর কনট্রোলও জরুরি৷''

বর্তমানে যে টিকা প্রচলিত রয়েছে, তা মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে৷ তাছাড়া অনেক ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় চিকিৎসা পরিষেবা একেবারেই পর্যাপ্ত নয়৷ সে কারণে কীটনাশকের প্রলেপসহ মশারিই সুরক্ষার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার৷ কিন্তু মশাও সেই বিষের ধাক্কা সামলাতে শিখে যায়৷ তাই ম্যালেরিয়া মোকাবিলা করতে আরও জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে৷

রুশ বিজ্ঞানী এলেনা লেভাশিনা নিজে সরাসরি প্যাথোজেনের বদলে ম্যালেরিয়া বহনকারী অ্যানোফিলিস মশা নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি জানতে পেরেছেন, যে এই প্রজাতির সব মশা মোটেই ম্যালেরিয়া ছড়ায় না৷ সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে গবেষকরা আরও সুনির্দিষ্ট সমাধানসূত্রের সন্ধান করতে পারেন৷ এলেনা বলেন, ‘‘আমরা গোটা বিশ্বে প্রায় ৩০০ প্রজাতির মশার কথা জানি৷ অর্থাৎ বৈচিত্র্যের অভাব নেই এবং সেগুলির মধ্যে কিছু প্রজাতি বেজায় জটিল৷ মূল প্রজাতির মধ্যেও আমার মতে গোটা বিশ্বে প্রায় ৩০টি ‘সাব স্পিশিস' রয়েছে, যেগুলি ম্যালেরিয়া বহন করতে পারে৷ অর্থাৎ সংখ্যা খুব বেশি নয়৷ কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় একটি বা দুটি খুব ‘এফিশিয়েন্ট ভেক্টর' প্রজাতির মশার কার্যকলাপ দেখা যায়৷'' 

সিঙ্গাপুরে মশা তাড়ানোর অভিযান

বিজ্ঞানীরা তথাকথিত ‘জিন ড্রাইভ টেকনিক' নামের এক কৌশল নিয়ে কাজ করছেন৷ এর আওতায় মশার জিন এমনভাবে বদলে দেওয়া হয়, যাতে হয় সেগুলি আর বংশবৃদ্ধি করতে না পারে, অথবা ম্যালেরিয়া প্যাথোজেন বহনের ক্ষমতা হারায়৷ ফলে সেই মশা আর রোগ বহন করতে পারে না৷ এলেনা লেভাশিনা বলেন, ‘‘এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রজনন বন্ধ করা যায় এবং বর্তমানে নানা টুল সৃষ্টি করে মশা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ চলছে৷ অর্থাৎ এই পোকার প্রসার বন্ধ করা সম্ভব৷ অবশ্যই আমরা নিরাপত্তা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে নতুন প্রজাতি সৃষ্টি করে বা জিনগত পরিবর্তন করে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চাই না৷''

মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া রোগের প্রবেশ বন্ধ করতে উৎসাহজনক গবেষণা চলছে৷ তবে রক্তচোষা এই প্রাণীকে পুরোপুরি বশে আনতে এখনো অনেক কাজ বাকি৷

কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি