1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যেসব শিল্পকর্ম শেষ পর্যন্ত নষ্ট করে দিতে হয়

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

শিল্পের কোনো সীমা নেই, এই বাস্তব আজ স্বীকৃত৷ জার্মানির এক শিল্পী বিশাল আকারে উজ্জ্বল, রঙিন সৃষ্টিকর্ম প্রস্তুত করলেও সেগুলি আবার নষ্ট করে ফেলতে হয়৷ তবে সবার আগে নিজের স্টুডিওতে নমুনা তৈরি করেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3iejX
ছবি: DW

কাটারিনা গ্রসে সমসাময়িক যুগের সফলতম শিল্পীদের একজন৷ ৫৮ বছর বয়সি এই শিল্পী বার্লিন ও নিউজিল্যান্ডে বসবাস করেন৷ তাঁর ছবিগুলি জোরালো রংয়ে ভরপুর এবং একাধিক ডায়মেনশন বা মাত্রায় ভরা৷ তাঁর প্রেরণার উৎস খেলাধুলার জগত৷ তিনি বলেন, ‘‘ফুটবলের মতো মাঠভিত্তিক খেলা আমার প্রেরণার জোরালো উৎস৷ অনেকটা দূরত্ব জুড়ে নানা ধরনের মুভমেন্ট প্রতিনিয়ত বদলে চলেছে, সম্প্রসারিত হচ্ছে, নতুন স্পেস সৃষ্টি করছে৷’’

বার্লিনে সমসাময়িক শিল্পের মিউজিয়াম ‘হামবুর্গ স্টেশন’-এ জার্মানির এই শিল্পীর এক বিশাল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তাঁর সব শিল্পকর্মেই জোরালো রংয়ের মিশ্রণ কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে৷ নিজের প্রেরণার উৎস সম্পর্কে কাটারিনা বলেন, ‘‘আঁকার সময় রং হঠাৎ কোনো অংশে পৌঁছলে যেভাবে ফুলে ওঠে অথবা ছড়িয়ে পড়ে, কিংবা একেবারে নতুন এক আকার ধারণ করে, এমনকি কিছু জায়গায় চেনার অযোগ্য হয়ে ওঠে –সেই বিষয়টি আমার জন্য বরাবর বেশ রোমাঞ্চকর৷ কখনো রং এমন পাইপ বা কাটা অংশে জমা হয়৷ তখন রংয়ের চরিত্রই যেন বদলে যায়৷ আগে থেকে এমনটা কল্পনা অথবা পরিকল্পনা করা অসম্ভব৷’’

স্টাইরোফোম প্যানেলের বিশাল পাহাড় শিল্পীর ক্যানভাস৷ মেঝেও তাঁর সৃষ্টিকর্মের অংশ৷ কাটারিনা গ্রসে তুলি ও রং দিয়ে ছবি আঁকেন না, বরং স্প্রে গান নিয়ে কাজ করতেই ভালবাসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটাই আমার হাতিয়ার৷ এটা একটা লান্স৷ সামনে রং বের হয়৷ আর এটা হলো ট্রিগার৷ অনেক উপর ও দূর পর্যন্ত যাওয়া যায়, সম্প্রসারণও করা যায়৷ চার মিটার দীর্ঘ হতে পারে৷ সিঁড়ির মতো এটিরও সাহায্যে আমি শরীর বড় করতে পারি৷ শরীর সম্প্রসারণ করতে পারা আমার কাছে অত্যন্ত আগ্রহের বিষয়৷ এভাবে আমি এত কম কসরৎ করেও একেবারে উপরে কোণে পৌঁছে যেতে পারি৷ এটিকে এক ধরনের জাদুময় হাতিয়ার বলা যেতে পারে৷’’

শিল্পী কাটারিনার প্রেরণার উৎস খেলাধুলার জগত

১৯৯৮ সালে তিনি ‘গ্রিন কর্নার’ নামের শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছিলেন, যেটিকে মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ তাঁর ছবি কোনো সীমা চেনে না এবং গোটা নিসর্গ উজ্জ্বল রংয়ে ভরিয়ে দেয়৷ কাটারিনা গ্রসে বলেন, ‘‘আগেও আমি রং খুব ভালবাসতাম৷ তবে আমি সত্তরের দশকে বড় হয়েছি৷ সে সময়ে সব জামাকাপড় খুব রঙিন ছিল৷ মনে আছে, কমলা রংয়ের প্যান্ট, হলুদ জামা, সবুজ ট্যাংক টপ পরতাম৷ ট্যাংক টপ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যাতে আরও রং যোগ করা যেত৷’’

বার্লিনে একটি ভবনের তিন তলা জুড়ে কাটারিনা গ্রসের স্টুডিও৷ বিশাল মাপের শিল্পকর্ম গড়ে তোলার আগে শিল্পী সবার আগে তার ছোট নমুনা তৈরি করেন৷ আপাতত তিনি ২০২১ সালের হেলসিংকি বিয়েনালে উৎসবের জন্য একটি শিল্পকর্ম তৈরির কাজে ব্যস্ত৷ সেই প্রয়াস সম্পর্কে কাটারিনা বলেন, ‘‘বাড়িটি পুরোপুরি কাঠের তৈরি৷ তাই সামনে এমন কিছু রাখতে চাই, যার কাঠামো কাঠের তৈরি৷ ভাবছি এমন কিছু আছে কিনা, যার সারফেস বা উপরিভাগ ভাঙাচোরা দেখতে৷ খুব কম পরিশ্রম করে এখানে ছোট আকারের মডেলের উপর নানা ধরনের কাঠামো বসিয়ে দেখতে পারি৷ তার উপর রং করলে সারফেস চিরে ছিদ্র সৃষ্টি হয়৷ বৃহত্তর ছবির মধ্যে সেই ছিদ্রও আমাকে খুব নাড়া দেয়৷’’

বার্লিনের প্রদর্শনীর শিল্পকর্মের মডেলও স্টুডিওতে শোভা পাচ্ছে৷ নিজের সৃষ্টিকর্ম যে স্থায়ী হয় না, সেটাও কাটারিনা গ্রসের জন্য অত্যন্ত রোমাঞ্চকর৷ কাটারিনা বলেন, ‘‘স্থায়িত্বের অভাবের মধ্যে এক বড় সৌন্দর্য রয়েছে বলে আমি মনে করি৷ কোনো ঘটনার কারণে সৃষ্টিকর্ম উধাও হতেও সময় লাগে৷ বর্তমানকালে সেই সৃষ্টি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷’’

এমন জমকালো সৃষ্টিকর্মও নষ্ট হয়ে যাবে৷ ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ‘ইট ওয়াজন্ট আস’ নামের প্রদর্শনী চলবে৷

ক্রিস্টিনে লেব্যার্ট/এসবি