1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রবীন্দ্রনাথ ও হাইনরিশ হাইনে

মোনাজ হক
১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

একজন বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একই সময়ে সাহিত্য ও জীবনের প্রতীক৷ আর একজন জার্মানের কাছে হাইনরিশ হাইনে হলেন ‘রোম্যান্টিক যুগের' প্রেম ও সুন্দরের কবি৷ তবে হাইনের কবিতা কবিগুরুকেও অনুপ্রাণিত করেছিল৷

https://p.dw.com/p/2pJaP
হাইনরিশ হাইনে
ছবি: picture-alliance/dpa/akg-images

সাহিত্যে রোম্যান্টিক যুগ বলতে ইউরোপের রেনেসাঁ আন্দোলনের ঠিক পরবর্তী সময়টাকে বোঝায়৷ রোম্যান্টিক একটি সাংস্কৃতিক-ঐতিহাসিক যুগ, যা মূলত ১৮০০ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জার্মানিতে, তথা ইউরোপে, একাধারে শিল্পবিপ্লব ও রোম্যান্টিক সাহিত্য-শিল্প চর্চার উন্মেষ ঘটায়৷

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম (১৮৬১), অর্থাৎ ইউরোপের রেনেসাঁ আন্দোলনের অনেক পরে হলেও ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক যুগান্তকারী সময়গুলিকে তিনি তাঁর লেখায় বিশেষভাবে চিহ্নিত করে বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন৷ তিনি সমাজ ও সংস্কৃতির মানবিক মূল্যবোধের একত্রীকরণের আদর্শ উপস্থাপন করে সাহিত্যে এক নতুন ধারার প্রতিফলিত ঘটান৷

আর ‘রোম্যান্টিক যুগ' ইউরোপীয় সাহিত্যের সৃজনশীল বুদ্ধিদীপ্ত এবং রচনাশৈলীর এক যুগান্তকারী সময়, যা ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে ১৮ শতকের প্রথম থেকেই শুরু হয়৷

রেনেসাঁ যেমন গ্রিক ও ল্যাটিন ধ্রুপদী সাহিত্যের পুনরুদ্ধার তথা খ্রিষ্টীয় ধর্মশাস্ত্রের নবতর ব্যাখ্যার প্রয়োজনে সেখানে নিয়ে আসে এক পরিপূর্ণ সংস্কার ও নবজাগরণ, তেমনি বাংলায় পাশ্চাত্য সভ্যতাই চমকিত করেছিল প্রাচ্যকে – তাকে উজ্জীবিত করেছিল এক নতুন জীবনে; চালিত করেছিল এক অত্যাশ্চর্য পুনর্জাগরণের পথে৷ রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও সেই পুনর্জাগরণে আরো যাঁদের নাম অবশ্যই বলতে হয়, তাঁরা হলেন রবীন্দ্রনাথের পূর্বসূরি বঙ্কিমচন্দ্র, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দীনবন্ধু মিত্র ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত৷ রবীন্দ্রনাথ ছাড়া এঁরা সকলেই ছিলেন ইউরোপীয় রেনেসাঁর সমসাময়িক যুগের কবি-সাহিত্যিক (১৭৫০ থেকে ১৮৫০)৷

জার্মান কবি হাইনরিশ হাইনের (জন্ম: ১৩ ডিসেম্বর ১৭৯৭, মৃত্যু: ১৮৫৬) সাথে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্মের তুলনামূলক আলোচনা একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ৷ হাইনের মৃত্যুর পাঁচবছর পর রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়৷ তাই এই দু'জন মহাপুরুষকে এক করে দেখবার কোনো সুযোগ নেই৷ তবুও কোথায় যেন একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়৷

জার্মানিতে ‘রোম্যান্টিক যুগের' কবি হাইনরিশ হাইনে যখন মাত্র ৩৫০টি কবিতা রচনা করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন, ঠিক তার পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৩৫০০-এর বেশি কবিতা ও গান লিখে প্রেম, ঐশ্বরিক পূজা ও প্রকৃতির কবি হয়ে বাংলা সাহিত্যে একটা বিরাট অংশ জুড়ে আসন গেড়েছেন৷ এর প্রকৃত কারণ হলো, হাইনরিশ হাইনে একা ছিলেন না, তাঁর সময়োপযোগী রোম্যান্টিক যুগের অন্যান্য কবি সাহিত্যিক যেমন নোভালিস, প্রিন্স হার্ডেনব্যার্গ, হাইনরিশ ফন ক্লাইস্ট, আইসেনডর্ফ, হফমান, বেটিনা ফন অর্নিমরা একত্র হয়েই রোম্যান্টিসিজম-এর চর্চা করেছেন আর রবীন্দ্রনাথ বলতে গেলে প্রায় একাই বাংলা সাহিত্যে একটা বিরাট সময় জুড়ে মানুষের মনোজগতে জায়গা করে নিয়েছেন৷

কাজেই এই দু'জন কবির সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্র ও প্রকাশ আলাদা, মিলটা শুধু মানুষের গ্রহণযোগ্যতায়৷ রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির পুরো কীর্তিটাই (নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগে পর্যন্ত) ভারতবর্ষেই পেয়েছেন, অন্যদিকে হাইনরিশ হাইনে সেসময় বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন ধর্ম সমালোচনায় ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কট্টর সমালোচক হিসেবে৷ ওদিকে হাইনে জন্মগতভাবে ইহুদি হয়েও খ্রিষ্ট ও ইহুদি ধর্মের সমালোচনায় ছাড় দেননি৷ সেই অপরাধেই একসময় তাঁকে জার্মানি ছেড়ে প্যারিসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে হয়েছিল৷

দু'জন জার্মান সাহিত্যের দিকপালের নাম না উল্লেখ করলে জার্মান সাহিত্য আলোচনা অসমাপ্ত থাকে৷ তাঁরা হলেন গ্যোটে ও শিলার৷  এঁরা দু'জনেই ছিলেন রেনেসাঁ ও রোম্যান্টিক যুগের লেখক৷ এঁদের দু'জনেরই লেখার পর্যালোচনা রবীন্দ্রনাথ বাংলায় করেছেন, গ্যোটের ফাউস্ট নাটকের একটা বিরাট অংশ অনুবাদ করেন তিনি৷ আবার হাইনের কবিতার বঙ্গানুবাদও করেন রবীন্দ্রনাথ৷

মোনাজ হক
মোনাজ হক, সম্পাদক এশিয়া টুডেছবি: Monaz Haque

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জার্মান সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ জাগার কারণ হলো তাঁর পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর৷ ব্যবসায়িক কারণে প্রিন্স দ্বারকানাথ ইউরোপের শিল্পন্নোত দেশ যেমন ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানিতে সফর করেন ও বেশ লম্বা সময় জার্মানিতে কাটান, জার্মান লেখকদের বই তুলে রাখেন ঠাকুর পরিবারের গ্রন্থাগারে৷ কথিত আছে রবীন্দ্রনাথের যখন ১৭ বছর বয়স, তখন তিনি জার্মান ভাষা শেখা শুরু করেন এবং ১৮৭৮ সালে ভারতী পত্রিকায় গ্যোটের ফাউস্ট-এর একটি ‘ক্রিটিক' লেখেন মূল বই পড়েই৷ এখনো রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সেই ফাউস্ট বইটি সংরক্ষিত আছে, যেখানে তিনি নিজ হাতে বিশেষ বিশেষ লাইনগুলি কালি দিয়ে দাগ দিয়েছিলেন৷ পরবর্তীতে জার্মান রোম্যান্টিক কবি হাইনরিশ হাইনের কবিতার প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়ে৷

যেমন হাইনের ‘মিট ডাইনেন ব্লাউয়েন আউগেন' নামের একটি প্রেমের কবিতা রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করেছিলেন ঠিক এভাবে:

নীল ভায়লেট নয়ন দুটি করিতেছে ঢলঢল

রাঙা গোলাপ গাল দুখানি, সুধায় মাখা সুকোমল

শুভ্র বিমল করকমল ফুটে আছে চিরদিন!

হৃদয়টুকু শুষ্ক শুধু পাষাণসম সুকঠিন!

প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য