1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরে কতটা বদলেছে শ্রমিকের জীবনমান?

২৪ এপ্রিল ২০২৪

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পর কারখানায় নিরাপত্তাব্যবস্থায় অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর পোশাক শ্রমিকদের ন্য়ূনতম মজুরিও বেড়েছে। কিন্তু তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে কতটা?

https://p.dw.com/p/4f7OX
২০১৩ সালে বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর ছবি
রানা প্লাজার ঘটনা কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বেই তোলপাড় তৈরি করেছিল। এরপর নড়েচড়ে বসে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও। তাদের ওপর চাপ তৈরি হয় পোশাক শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah

২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল রানা প্লাজায় ফাটল দেখা দেয়ার পর সেখানে অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি তো বটেই, সাভারের পুলিশ কর্মকর্তা, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সবাই ঘুরে দেখে গেছেন ভবনের পরিস্থিতি। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার যখন নিজে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে সাহস পাচ্ছিলেন না, ভবন মালিক রানা 'সামান্য প্লাস্টার খসে পড়েছে', 'ঝুঁকিপূর্ণ কিছু না' বলে ঘোষণা দেন। স্বয়ং ইউএনও যখন ভবন মালিকের সুরে সুর মিলিয়ে বললেন, 'তেমন আশঙ্কার কিছু নেই', তখন আসলে শ্রমিকদের আর কীই বা করার থাকতে পারে।

ফাটলটি গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে একটি টেলিভিশন ছাড়া অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদটি প্রকাশও করা হয়নি।

রানা প্লাজা ধসের আগেরদিন থেকে এই সংবাদ প্রচার করার চেষ্টা করা সাংবাদিক নাজমুল হুদা ডিডাব্লিউকে বলছিলেন, ''এত দায়িত্বশীল মানুষেরা সেখানে এসে ভবন পরিদর্শন করে গেছেন, এত সাংবাদিক সেখানে ছিলেন। একটু সচেতন হলেই হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত।''

কিন্তু এই অবহেলার কারণটা কী?

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার মনে করেন, অতি মুনাফার লোভই এর আসল কারণ। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ''বাংলাদেশের মালিক (কারখানার), সরকার বা বিদেশি ক্রেতারাও শ্রমিকদের মনে করতেন অনেকটা মেশিনের মতো। তারা শুধু কাজ করবে, তাদের কোনো স্বপ্ন থাকবে না। তাদের কোনো পরিবার থাকবে না। এই যে ভাবনা, যে তারা মালিকদের জন্য পণ্য তৈরি করবে আর তাদের মুনাফার আয়োজন করবে, সেটাই মূল সমস্যা।''

রানা প্লাজায় অবস্থিত পোশাক কারখানাগুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের মন্তব্যেই স্পষ্ট, কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয়েছিল। আগের দিন ফাটল দেখা দেয়ার পরদিন কারখানা ছুটি দেয়া হয়। পরদিন তাদের অনেকেই ভয়ে আর কাজ করতে চাচ্ছিলেন না। মাসের ২৪ তারিখ। আর এক সপ্তাহ পরই হয়তো বেতন হবে। বেশিরভাগ শ্রমিকেরই বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচের একমাত্র জোগান এই পোশাক কারখানার চাকরি। ২৪ তারিখ সকালে যারা রানা প্লাজায় ঢুকতে চাচ্ছিলেন না, তাদের হুমকি দেয়া হয় কাজ না করলে বেতন আটকে রাখার। ফলে অধিকাংশ শ্রমিকই বাধ্য হন কাজ শুরু করতে।

কেমন আছেন আহত শ্রমিকেরা?

রানা প্লাজা ধস থেকে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের কাছে এখনও সেই সময়ের স্মৃতি সমান স্পষ্ট। বরং অনেকের কাছে রানা প্লাজায় বেঁচে যাওয়ার পর বাকি জীবন বেঁচে থাকাটা একটা লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।

রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেডে অপারেটরের কাজ করতেন আজিরন বেগম। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ার প্রথম দিনই উদ্ধার করা হয় তাকে। আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হলেও, মেরুদণ্ড ও মাথায় আঘাত পাওয়ায় এখন দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না।

ধামরাইয়ে ডয়চে ভেলে যখন তার সঙ্গে দেখা করতে গেলো, তখন তিনি একটি স্থানীয় দাতব্য সংস্থার অফিসে কিছু অর্থসাহায্যের জন্য ধর্ণা দিচ্ছেন। কেন? রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের কি ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি? তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি?

আজিরন জানান, তার কারখানা প্রাইমার্কের পোশাক তৈরির কাজ করতো। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন ক্ষতিপূরণ হিসাবে তিনি কিছু টাকা পেয়েছেন। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতার কারণে তিনি কোনো কাজই করতে পারছেন না। ফলে সেই টাকাও একসময় শেষ হয়ে গেছে। বাসা ভাড়াও জোগাড় করতে পারেন না বলে থাকছেন মেয়ের বাড়িতে। সেখানেও তাকে বোঝা মনে করে দুর্ব্যবহার করা হয়।

আজিরন বলেন, ''এলাকার মানুষ বলে, তুমি এত খারাপ ব্যবহার সহ্য করেও মেয়ের বাড়িতে থাকো কেন? অন্য কোথাও সরে যাও। কিন্তু সরে কোথায় যাবো? কার কাছে যাবো?''

তিনি জানান, তার বাবা-মা মারা গেছেন অনেক আগেই। রানা প্লাজা ধসে আহত হওয়ার পর তার স্বামীও তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। ভাইও তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চায় না। উপায় না দেখে বাবার কাছ থেকে পাওয়া নিজের ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েছিলেন মেয়ের জামাইকে। এখন সেটাও শেষ হয়ে যাওয়ায় তার আর কোনো উপায় নেই।

আজিরন বলেন, ''জমিজমাও বিক্রি করে খেয়েছি। এখন কী খাবো? আমি যদি এই বয়সে মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে যাই, মানুষ ভিক্ষা দিবে? মানুষ বলবে, তুই ভালো মানুষ, আমার বাড়িতে কাজ করে খা। মানুষ তো আর দেখছে না আমার শরীরে কোথায় কী সমস্যা!''

এই পরিস্থিতি শুধু আজিরনের নয়।

নিউ ওয়েভ স্টাইলে সেলাই অপারেটর ছিলেন আফরোজা বেগম। কয়েক ধাপে লাখখানেক টাকার মতো ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক সংকটে ভোগার কারণে কোনো কাজ করতে পারছেন না তিনিও। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা শেষ হয়েছে অনেক আগেই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ দেয়া হলেও সিটি স্ক্যানের মতো অনেক পরীক্ষার খরচ তাকেই বহন করতে হচ্ছে। আর সেখানেই তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।

আফরোজার পরিস্থিতিও অনেকটা আজিরনের মতোই। কয়েকবার নানা ধরনের কাজ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কয়েকদিন কাজ করলেই তার নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়ায় এখন আর কেউ তাকে কোনো কাজেও নিতে চায় না।

২০১৪ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে রানা প্লাজায় হতাহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল সরকার। কমিটি কিছু সুপারিশ করে।

সেই সুপারিশ অনুযায়ী, স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করা শ্রমিকদের ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হয়েছিল৷ একটি অঙ্গ হারানো শ্রমিকদের সাড়ে সাত লাখ টাকা, দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা প্রয়োজন এমন শ্রমিকদের সাড়ে চার লাখ টাকা এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের দেড় লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

কিন্তু পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ 'বাংলাদেশের গার্মেন্টস মালিকদের এত টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার সামর্থ্য নেই' বলে এইসম সুপারিশের কোনোটাই মানেনি।

অনেকে নিজেদের ক্ষতির প্রমাণ দিতে না পারায় ক্ষতিপূরণও পাননি। তাদেরই একজন আফরোজার ফুপাতো বোন ফাহিমা। ফাহিমা বেগম এবং তার বোন রিক্তা বেগম একই সঙ্গে কাজ করতে রানা প্লাজার তিন তলার একটি কারখানায়। ভবনটি যখন ধসে পড়ে, তখন ফাহিমা ছিলেন গর্ভবতী। তাকে আহত উদ্ধার করা হলেও তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। তার বোন রিক্তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। একসময় তাদের মা মানসিক ভারসাম্য হারান। একটু সুস্থ হয়েই হাসপাতাল থেকে দ্রুত মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান ফাহিমা। যাওয়ার সময় হাসপাতালের ছাড়পত্র না নেয়ায় পরবর্তীতে আর কোনো ক্ষতিপূরণের দাবিও তিনি করতে পারেননি।

পরিস্থিতি কি বদলেছে?

রানা প্লাজার ঘটনা কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বেই তোলপাড় তৈরি করেছিল। এরপর নড়েচড়ে বসে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও। তাদের ওপর চাপ তৈরি হয় পোশাক শ্রমিকদের কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো একজোট হয়ে গঠন করে অ্যাকর্ড। অ্যামেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন করে অ্যালায়েন্স জোট। এরপর থেকে পরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, এমনটা স্বীকার করছেন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্টরাও। কিন্তু পাশাপাশি তারা এও বলছেন, ভবনের চেহারা বদলালেও শ্রমিকদের জীবনমানে সার্বিক উন্নতি আসেনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলস রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর উপলক্ষ্যে ঢাকার এক সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ সাংবাদিকদের বলেছেন, রানা প্লাজার অভিজ্ঞতা অন্য শিল্পখাতে কাজে লাগানো হয়নি। একারণেই চট্টগ্রামে কনটেইনার ডিপো, নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুডের কারখানা, নিমতলী ও চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তিনি। এমনকি এইসব দুর্ঘটনাতেও শ্রমিকেরা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাননি বলে দাবি তার।

তাসলিমা আখতার বলেন, ''কিছু পরিবর্তন তো অবশ্যই হয়েছে। কাঠামোগত কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেমন ভবনের নিরাপত্তা নিয়ে এত চিন্তা করা হতো না, এখন সেটা নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জীবনমানে এতে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।''

এখনও শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ''শ্রমিকেরা এখনও একটা জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের মধ্যে আছে। এক বছর আন্দোলনের পর এখন শ্রমিকেরা ন্যূনতম সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি পান। সেটাও এক বছর আন্দোলনের পর। আমরা দাবি করেছিলাম ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু সরকার ও মালিক মিলে তাদের বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে দিলো। অর্থাৎ, শ্রমিকেরা হয় ভবন ধসে বা আগুনে পুড়ে মারা যাবে। আর বেঁচে থাকলে তাদের কম খেয়ে, কম পরে, কম চেয়ে, কম স্বপ্ন দেখে বাঁচতে হবে।''

রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের অধিকার নিয়েও সোচ্চার হয়েছিল দেশি-বিদেশি অধিকার সংগঠনগুলো। এরপর পোশাক শ্রমিকদের নানা ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে ওঠে। কিন্তু সেগুলো নিয়েও রয়েছে নানা সমালোচনা।

বিলসের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসাইন মনে করেন, শ্রমিকদের কার্যকর ট্রেড ইউনিয়ন না থাকাটা বড় একটি সমস্যা। 'মালিকদের অনুগত লোক' দিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ফলে শ্রমিকরা কার্যকরভাবে নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারে না বলেও অভিযোগ তার।

১১ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ১১ বছরে ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৮৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, সাক্ষীদের ডাকলেও তারা অনেকে আসছেন না। এমনকি আদালত থেকে সমন জারি করে, পুলিশ পাঠিয়েও অনেক সাক্ষীকে হাজির করতে হয়েছে বলে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

এমন অভিযোগ অবশ্য বেশ কিছু শ্রমিক মানতে নারাজ। ডয়চে ভেলেকে আফরোজা বলেন, ''হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করতো এই রানা প্লাজায়। সাক্ষীর তো অভাব নেই। কিন্তু আমাদের তো ডাকেই না। ডাকলে তো সাক্ষী দিতে যাবো।''

অবশ্য, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, মোটামুটি ১০০ জনের সাক্ষ্য পেলেই তারা মামলার কাজ শেষ করতে পারবেন। দ্রুতই তা শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী বরাবরই দাবি করে আসছেন, জমির মালিক হিসাবে সোহেল রানার বাবা-মায়ের নাম তাকে জামিন দেয়া উচিত। আসামীর আইনজীবীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল ভবন মালিক সোহেল রানাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে পরবর্তীতে সেই আদেশ স্থগিত করে আপিল বিভাগ।

তবে সবশেষ ১৫ জানুয়ারি ৬ মাসের মধ্যে হত্যা মামলার বিচার শেষ করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। এর মধ্যে বিচার শেষ না হলে রানার জামিনের বিষয়টি আদালত বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন রানার আইনজীবী সাবেক খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম।

বিচারের ধীরগতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হতাশা প্রকাশ করে আসছেন আহত শ্রমিক এবং অধিকারকর্মীরা। রানা প্লাজা ধসকে দুর্ঘটনা নয়, বরং 'কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড' বলে দাবি করে আসছে শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।

এখনও ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য ভবন

রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার নিরাপত্তার দিকটি নজরে এলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ভবনের নিরাপত্তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ঢাকার বেইলি রোডে একটি ভবনে আগুনে অন্তত ৪৬ জনের প্রাণহানির পর আবার নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় আসে। দমকল বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ঢাকার শতকরা ৫৫ ভাগ, অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি ভবন রয়েছে আগুনের ঝুঁকিতে। এরমধ্যে রয়েছে সরকারি মালিকানায় থাকা বিভিন্ন ভবনও।

তাহলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এসব ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন?

এই নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্ব ফায়ার সার্ভিসের। কিন্তু এই সংস্থাটির ভূমিকা অনেকটা ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দারের মতোই। ব্যবস্থা নেয়ার মতো কোনো ক্ষমতা না থাকায় নোটিশ দেয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় তাদের। বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে যাওয়া গ্রিন কোজি কটেজকেও তিন বার নোটিশ দিয়েছি দমকল বাহিনী।

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, "মামলা করে তেমন ফল হয় না। ২০১৪ সালের বিধিমালা স্থগিত থাকার ফলে মামলা কাজে আসে না। আমাদের নিজস্ব ম্যাজিষ্ট্রেট না থাকায় মোবাইল কোর্ট পারিচালনাও কঠিন।”

তিনি বলেন, ''আমরা কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিল গালা করতে পারিনা। আইনে আমাদের সেই ক্ষমতা নাই। বার বার নোটিশ দেয়ার পরও যখন ভবন মালিক আমলে না নেয় তখন আমরা ভবনটি অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ বলে নোটিশ টানিয়ে দিই। কিন্তু আমরা চলে আসার পর তারা তা ছিড়ে ফেলেন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান