1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রিপাবলিক টিভির দুই সাংবাদিক গ্রেফতার

১০ সেপ্টেম্বর ২০২০

মহারাষ্ট্রে গ্রেফতার করা হলো রিপাবলিক টিভি-র দুই সাংবাদিক ও তাঁদের ড্রাইভারকে। অভিযোগ, তাঁরা জোর করে মুখ্যমন্ত্রীর ফার্মহাউসে ঢুকতে গেছিলেন।

https://p.dw.com/p/3iFVC
ছবি: Getty Images/C. McGrath

মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলায় মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের ফার্মহাউস। সেখানেই তদন্তমূলক রিপোর্টিং করতে গেছিলেন রিপাবলিকের সাংবাদিকরা। রিপোর্টার অনুজ কুমার, ফটো সাংবাদিক যশপালজিৎ সিং এবং ওলাচালক প্রদীপ ধানাভাড়ে। পুলিশের দাবি, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ফার্মহাউসের কাছে গার্ডের কাছে ঠিকানা জানতে চান। গার্ড তখন চলে যাচ্ছিলেন। সাংবাদিকদের হাবভাব দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি তাঁদের ভুল ঠিকানা দিয়ে আবার ফার্মহাউসে ফিরে আসেন এবং পুলিশকে ফোন করেন।

এই সময় সাংবাদিকরা ফের ফার্মহাউসের সামনে চলে আসেন। গার্ডকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি ভুল ঠিকানা দিয়েছিলেন। তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতি হয়। পুলিশ এসে দুই সাংবাদিক ও ড্রাইভারকে গ্রেফতার করে। পুলিশের অভিযোগ, তাঁরা জোর করে ফার্মহাউসে ঢুকতে চেয়েছেন, কর্তব্যরত রক্ষীকে মেরেছেন, ইত্যাদি। এরপর আদালতে তোলা হলে তাঁদের চারদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

রিপাবলিক টিভির সাংবাদিক গ্রেফতার নিয়ে আলোড়ন দেখা দিয়েছে। কোনো কর্তব্যরত সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হলে উত্তেজনা ছড়ানো স্বাভাবিক। রিপাবলিক টিভির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা সাংবাদিকের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ। ওই দুই সাংবাদিক একটা খবরের সূত্র পেয়ে তদন্তের কাজে ওখানে গেছিলেন। পুলিশ তাঁদের বেআইনিভাবে গ্রেফতার করেছে।

আবার পুলিশের দাবি, সাংবাদিক কাজ করার সময় আইন ভাঙতে পারেন না। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে পরিষ্কার বলা আছে, অপরের বাড়ি ও জমিতে অনধিকার প্রবেশ করা যায় না। এই সাংবাদিকরা সেটাই করেছিলেন। নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে কাউকে মারা যায় না। সাংবাদিকরা রক্ষীকে মেরেছেন। ফলে পুলিশ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে।

সম্প্রতি সুশান্ত সিং রাজপুত হত্যা ও রিয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে রিপাবলিক টিভি রীতিমতো সোচ্চার। তারা মহারাষ্ট্র সরকারের দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছে। তবে রিপাবলিক জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ফার্মহাউসে সাংবাদিকরা তদন্তের কাজে গেছিলেন। এই তদন্তের সঙ্গে সুশান্ত-রিয়া জড়িত কি না, তা তারা জানায়নি। তবে রিপাবলিকের অন্দরেও সুশান্ত-রিয়াকে নিয়ে যেভাবে খবর করা হচ্ছে, তা নিয়ে বিক্ষোভ আছে। সংবাদিক শান্তশ্রী সরকার টুইট করে জানিয়েছেন, তিনি এর প্রতিবাদে রিপাবলিক টিভি থেকে পদত্যাগ করেছেন। একগুচ্ছ টুইট করে তিনি জানিয়েছেন, তিনি শিখেছিলেন সাংবাদিকতা মানে সত্য প্রতিষ্ঠা করা। তাঁকে এমন সব ঘটনা বের করতে বলা হয়েছিল যা সত্য নয়। শান্তশ্রী জানিয়েছেন, কাজ পছন্দ না হওয়ায় তাঁকে শাস্তি দেয়া হয়। ৭২ ঘণ্টা ধরে কোনো বিশ্রাম ছাড়াই কাজ করতে হয়েছে।

তবে এই সাংবাদিক গ্রেফতার, রিপাবলিক বনাম উদ্ধব ঠাকরের লড়াইয়ের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রে অন্য বিতর্কও তীব্র হয়েছে। রিয়া চক্রবর্তীকে গ্রেফতার নিয়ে যেমন বিতর্ক হচ্ছে, তেমনই বিতর্ক হচ্ছে কঙ্গনা রানাওয়াতকে নিয়ে। উদ্ধব ঠাকরেকে তীব্র আক্রমণ, করণ জোহর ও খানদের নিয়ে সমালোচনামূলক টুইট, শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে ভয়ঙ্কর কথার লড়াইয়ের পর কঙ্গনার মণিকর্ণিকা ফিল্মসের অফিস ২৪ ঘণ্টার নোটিসে ভাঙতে শুরু করে মুম্বই পুরসভা। হাইকোর্টের নির্দেশে ভাঙার কাজ মাঝপথে বন্ধ রাখতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা জায়গাই ভেঙে দেয় পুরসভা। এ জন্য হাইকোর্টের তিরস্কারও শুনতে হয়েছে পুরসভা কর্তৃপক্ষকে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সুশান্ত-রিয়াকে নিয়ে ঘটনাস্রোত এবং কঙ্গনার ঘটনা এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক দিকে মোড় নিয়েছে। আর বিতর্কের কুশীলবরা কোনো না কোনো পক্ষের হয়ে কথা বলছেন। এই রাজনৈতিক লড়াই দুটো কারণে হচ্ছে। এক বিহারের বিধানসভা ভোট আসন্ন। সেখানে বিহারের ভূমিপুত্র সুশান্ত সিং রাজপুতকে ন্যায় দেয়ার কথা বলে রাজপুত ভোটব্যাঙ্ককে পাশে পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে বিজেপি তথা এনডিএ। অন্য রাজনৈতিক লড়াইটা হচ্ছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে জোট সরকার ফেলার জন্য বিজেপি মরিয়া বলে তাঁরা মনে করছেন। তাই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার মতো অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য। সে জন্যই কঙ্গনা, রিয়া, রিপাবলিক বিতর্ক এত গুরুত্ব পাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার বুধবার উদ্ধবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সূত্রের খবর, তিনি কঙ্গনা, রিপাবলিক সহ বিজেপি-র বিবিধ উস্কানিতে পা না দেয়ার জন্য উদ্ধবকে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যেন শান্ত থেকে কাজ করে যান।

বলিউডের চিত্রনাট্যে রাজনীতির প্রবেশ পরিস্থিতিকে রীতিমতো জটিল করে তুলেছে।  

জিএইচ/এসজি(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি, টুইটার)