1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিয়ানমারের সুবিধা দেখছে বিএনপি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ ডিসেম্বর ২০২০

বিএনপি মনে করে, ভাসানচরে পাঠানোর ফলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানো কঠিন হয়ে যাবে৷ এক বিবৃতিতে দলটি আরো বলেছে, এই স্থানান্তরের ফলে মিয়ানমারেরই সুবিধা হবে৷

https://p.dw.com/p/3mKYn
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বিএনপি'র স্থায়ী কমিটি বৈঠক করে এই বিবৃতি দিয়েছে৷  বিএনপি সহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আপত্তির মুখে রোহিঙ্গা শরণার্থী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের এই প্রক্রিয়াকে আত্মহননের প্রক্রিয়া হিসাবে অভিহিত করেছে স্থায়ী কমিটি৷ এর ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্মান ও নিরাপত্তার সা্থে প্রত্যাবর্তনের দাবি দুর্বল হবে বলে সভা মনে করে৷’’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘‘এই স্থানান্তর  প্রক্রিয়া মিয়ানমারের স্বার্থ রক্ষায় সাহায্য করবে এবং এই সমস্যা একদিকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করবে, অন্যদিকে বাংলাদেশের পরিবেশ, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে৷’’

এটা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন না করে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের ইঙ্গিত দেয়: আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ওই সভায় উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান৷ মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে৷ কোর্ট অব জাস্টিসের চাপ বাড়ছে৷ তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য গ্রহণযোগ্য পরিবেশের চাপ বাড়ছে৷ কফি আনান রিপোর্ট বাস্তবায়নের আলাপ চলছে৷ তালিকা পাঠানো হয়েছে৷ রাখাইনে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে, রোহিঙ্গারা যাতে ফিরে যেতে পারে৷ ঠিক সেই সময়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর কী মেসেজ দেয়? এটা রোহিঙ্গাদের  মিয়নমারে প্রত্যাবাসন না করে বাংলাদেশে পুনর্বাসনের ইঙ্গিত দেয়৷’’

তিনি বলেন, দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করে ভাসানচরে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে৷ কেন করা হলো? এটা বাংলাদেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকা৷ আর জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর বিরোধী৷ তারা এখন কী ভাববে?

বিএনপি দুইবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

জাতিসংঘ বিরোধিতা করার পর বিএনপি বিরোধিতা করছে- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এটা ঠিক নয়৷ আমরা আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর বিরোধিতা করেছি৷ দুই-তিনটি সেমিনার করেছি৷ আমরা কি রাস্তায় নামবো? এই সরকার তো রাস্তায় প্রতিবাদ করতে দেয় না৷’’

‘‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দুইবার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ছে৷ একবার জিয়াউর রহমানের সময় এবং আরেকবার খালেদা জিয়ার সময়৷ তাহলে এখন কেন পারা যাবে না? এটা এই সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা,’’ বলেন তিনি৷

তার মতে, এই সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে সামরিক কৌশলেও ব্যর্থ হয়েছে৷ জিয়াউর রহমানের সময় বর্ডারে যে শক্ত অবস্থান ছিল তা এখন নাই৷ তারা বাংলাদেশের আকাশে ঢুকে পড়ছে৷ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না৷

বিএনপি'র এই নেতা মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যু সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে সামনে থেকে পিছনে চলে গেল৷ মিয়ানমার এখন আগের চেয়ে আরো সুবিধা পেয়ে গেল৷

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা সব সময়ই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না পাঠানোর জন্য বলেছি৷ আমরা তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছি৷ এখন ভাসানচরে পাঠানোর মাধ্যমে সরকার তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলো৷ ফলে সরকার মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার জন্য যে চাপ সৃষ্টি করতে পারতো সেই জায়গায় দুর্বল হয়ে পড়লো৷ মিয়ানমার সুযোগ পেয়ে গেল৷ একটা বার্তা গেল যে, রোহিঙ্গাদের আমরা স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি দুইবার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছে মিয়ানমারে৷ এখন  মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জায়গাটা দুর্বল হয়ে গেল৷’’

তার মতে, ভাসানচরে সর্বোচ্চ এক লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো যাবে৷ আরো সাত লাখ তো কক্সবাজারে থেকে যাবে৷ ফলে যে পরিবেশ-প্রতিবেশ ও স্থানীয় অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বলা হচ্ছে তার তেমন কোনো উন্নতি হবে না৷
আর কোনো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পঠানোর আহ্বান জানচ্ছেন কিনা প্রশ্ন করলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে পাঠাতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিরোধিতার প্রশ্ন নয়, আমরা বলছি এটা করার কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের  অবস্থান দুর্বল হয়ে যাবে৷’’

এই বিষয় নিয়ে বিএনপি সরকারকে বার বার সহযোগিতা করতে চেয়েছে, আলোচনা করতে চেয়েছে, কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি বলে দাবি করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷

ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ শুক্রবার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে এক হজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে ৭টি জাহাজে করে ভাসান চরে নেয়া হয়েছে