1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান বাংলাদেশমুখী

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে মত বিনিময় করেন৷ ভারতের এখন দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার মতো অবস্থা৷ ফলে নানা প্রশ্নচিহ্নের মুখে মোদী সরকার৷

https://p.dw.com/p/2kHOK
Rohingya Krise in Bangladesch
ছবি: DW/M.M. Rahman

রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করা হবে কিনা সুপ্রীম কোর্টে জনস্বার্থ মামলার রায়ে তা জানা যাবে৷

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লির নীতি, অবস্থান নিয়ে মত বিনিময় করেন৷ সরকারিভাবে দিল্লি এ বিষয়ে জানাতে না চাইলেও এটুকু জানা গেছে যে,  রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেবার জন্য দিল্লি ও ঢাকা দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক স্তরে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে৷ এ বিষয়ে দিল্লি ও ঢাকার পথ অভিন্ন৷ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ৷ দুজনেই এখন নিউইয়র্কে৷ বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে হাসিনা সরকার যে সংকটের সন্মুখীন তা নিরসনে ভারত মোট সাত হাজার টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠাচ্ছে ‘অপারেশন ইনসানিয়াত' কর্মসুচির অধীনে৷ ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশাল মালবাহী বিমানে এক এক বারে ৫৩ টন করে ত্রাণ সামগ্রী ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছে গেছে৷ ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে আছে চাল, ডাল, নুন, ভোজ্য তেল, চিনি, চা, মশারি, তাঁবু ও জরুরি ওষুধপত্র প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র৷

ভারতের এই নতুন অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন নতুন দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম গতকাল কলকাতায় সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনকালে পার্শ্ববৈঠকে ভারত-বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হতে পারে৷ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে গ্রহণযোগ্য বিস্তারিত আলোচনা হবার সম্ভাবনা আছে৷ কারণ, এর সঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রশ্নও জড়িত৷ বাংলাদেশে আরাকানি রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ তাই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নাম রেজিষ্ট্রি করার কাজ শুরু হয়েছে, জানালেন তিনি৷ শরণার্থীদের ফেরত নেবার জন্য মিয়ানমার সরকারকে একাধিক চিঠি দিয়েছে ঢাকা৷ কিন্তু কোনো উত্তর আসেনি৷ সমস্যার মোকাবিলায় ভারতের সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম৷

প্রশান্ত ভূষণ

অপরদিকে ভারতে আশ্রয় নেওয়া ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত পাঠাতে যেভাবে তোড়জোড শুরু করেছে মোদী সরকার, তার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা হয় এক জনস্বার্থ মামলা৷ তাঁদের পক্ষে মামলা লড়ছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার সমর্থক প্রশান্ত ভূষণ৷ শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছেন নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের কেন ফেরত পাঠাতে চাইছেন মোদী সরকার৷ এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকার ১৬ পাতার এক হলফনামায় একাধিক কারণ জানিয়েছেন আদালতকে৷ এক, রোহিঙ্গারা ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী৷ দুই, এরা জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে বিপদের কারণ হতে পারে৷ তিন, ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে এদের যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছে৷ ইসলামিক স্টেটও রোহিঙ্গাদের দিকে হাত বাড়িয়েছে এবং সাড়াও পেয়েছে৷ অবৈধ পথে টাকা লেনদেন হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য৷ চার, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন ভারতে থাকতেদিলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে পারে৷ দাঙ্গার কারণ হতে পারে৷ পাঁচ, হলফনামাতে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গারা ভুয়া পরিচয়পত্র জোগাড় করেছে৷ এমনকি তারা মানব পাচারেরও লিপ্ত৷ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দিল্লি, জম্মু, হায়দ্রাবাদ, মেওয়াটের মতো ভারতের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ সর্বোপরি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় করিডরের স্পর্শকাতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়বে৷ বাড়বে অস্থিরতা৷ পাশাপাশি ভারতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোকেরা বাস করে ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে৷ রোহিঙ্গা উগ্রপন্থীরা বদলা নিতে বৌদ্ধদের ওপর হামলা চালাতে পারে মনে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা৷

পাশাপাশি মনবাতাবাদীদের যুক্তি, এটা মানবিক সমস্যা৷ নিরাশ্রয় নিজ দেশ থেকে উত্পীড়িত বিতাড়িত এক জাতি গোষ্ঠীকে এভাবে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ তাঁরা ভারতীয় নাগরিক হোক বা না হোক৷ জীবন রক্ষার গ্যারান্টি সংবিধানে আছে৷ এটা ভারতের সংবিধান বিরোধী৷ মানবাধিকার সমর্থনের ইতিহাস ভারতের দীর্ঘ৷ তিব্বতি শরণার্থী, শ্রীলঙ্কার শরণার্থী, পাখতুন শরণার্থী, এমনকি বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি শাসকদের গণহত্যার থেকে বাঁচতে ঐতিহাসিক কারণে এক কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীকেও আশ্রয় দিয়েছে ভারত৷ আর মাত্র ৪০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে এত মাথা ব্যথা কেন মোদী সরকারের? এটা গৈরিক পার্টির মুসলিম বিরোধিতা৷ উল্লেখ্য, বিজেপি-শাসিত আসামে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় গণ অনশনের ডাক দেওয়ায় রাজ্য বিজেপি বিধায়ক বেনজির আরফানকে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাইছে তখন দলের বিধায়ক হয়ে কী করে বেনজির আরফান দলীয় নীতির বিরোধিতায় পথে নামার কথা বলতে পারেন?

অন্যদিকে, মিয়ানমারের জননেত্রী নোবেল জয়ী অং সাং সূ চি জাতির উদ্দেশে ভাষণে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লংঘনের সমালোচনার উত্তরে বলেছেন, তাঁর সরকার রোহিঙ্গা জঙ্গিদের বিরুদ্ধেই শুধু ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি মিয়ানমারে এসে তা যাচাই করে দেখতে পারেন৷ নিরপরাধ রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই করে ফিরিয়ে নিতেও মিয়ানমার সরকারের আপত্তি নেই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান