1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট ছাড়া করোনা প্রতিরোধ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ জুন ২০২০

রোহিঙ্গা ক্যাম্প বাংলাদেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা৷ সেখানে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব এবং আইসোলেশন প্রায় অসম্ভব৷ ইন্টারনেট না থাকায় নানা ধরনের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3dgz8
রোহিঙ্গা ক্যাম্প বাংলাদেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Rubel

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এক বর্গ কিলোমিটারে ৬০ হাজার মানুষের বসবাস৷ ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস ৩৪টি ক্যাম্পে৷ আশ্রয়কেন্দ্রে তারা যে ঘরগুলোতে বসবাস করেন তার ক্ষেত্রফল ১০ ফুট বাই ১২ ফুট৷ প্রতিটি ঘরে বসবাস করেন গড়ে সাত-আটজন৷ঘরগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো৷ স্যানিটেশন ব্যবস্থাও আলাদা নয়৷ সেখানে এখন চলছে লকডাউন৷ আর ক্যাম্পের বাইরে পেলেই পাঠানো হয় ভাসানচরে৷ তাই কুতুপালং ক্যাম্পের মুখপাত্র ইউনূস আরমানের প্রশ্ন, ‘‘এখানে কীভাবে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব? ঘরে কীভাবে আলাদা থাকা সম্ভব?’’

ক্যাম্প এলাকায় কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই৷ আর মোবাইল নেটওয়ার্কও দূর্বল৷ ফলে ইন্টারনেটভিত্তিক সচেতনতামূলক কর্মসূচিরও বাইরে আছেন তারা৷ শুরুর দিকে কিছুটা মাইকিং করা হলেও এখন আর তা করা হয় না৷ ক্যাম্পের ভেতরে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও কোনো নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই৷ ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আতঙ্ক আর গুজব ছড়ায় সহজেই৷ ইউনূস আরমান বলেন, ‘‘এখানে কেউ মারা গেলেই করোনায় মারা গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে৷ আর যেকোনো ধরনের হাঁচি-কাশিকেই করোনা আক্রান্ত বলে মনে করা হয়৷’’

ইউনূস আরমান

এর বাইরে গুজব আছে যে, আক্রান্তদের আইসোলেশন সেন্টারে নেয়ার নামে ভাসানচরে পাঠানো হবে৷ এই ভয়ে এরইমধ্যে দুইজন করোনা পজিটিভ রোহিঙ্গা আইসোলেশন সেন্টার থেকে পালিয়েছেন৷ স্থানীয় সূত্র জানায়, তারা পালিয়ে ক্যাম্পে চলে গেলেও এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি৷

এইসব গুজবের কথা অস্বীকার করেননি জেলা সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান৷ তিনি বলেন,‘‘মাঝে মাঝে এরকম গুজব ছড়ালে আমরা তা সরেজমিন গিয়ে দূর করার চেষ্টা করি৷’’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয় ১৪ মে৷ আর ক্যাম্পে প্রথম রোহিঙ্গা মারা যায় ২ জুন৷ এ পর্যন্ত দুইজনের মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করা হচ্ছে৷ কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শামসুদ্দোজা নয়ন জানান, ‘‘একজনের মৃত্যুর কারণ কোভিড কিনা তা আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি৷’’ একই কথা বলেন সিভিল সার্জন৷

কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত আক্রান্ত রোহিঙ্গা ৩৬ জন৷ কোয়ারিন্টিনে আছেন ১০০ জনের কিছু কম৷ আটশ'র বেশি ছিল৷ বাকিরা পর্যায়ক্রমে ছাড়া পেয়েছেন৷ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে আছেন ১৭ জন৷ 

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো জেলা প্রশাসনের নির্দেশে লকডাউন করা হলেও যেসব এলাকায় রোগী শনাক্ত হয়েছে সেসব এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে কঠোর লকডাউনে নেয়া হয়েছে৷ চার হাজার পরিবার এরকম লকডাউনে আছে বলে জানান মো. শামসুদ্দোজা নয়ন৷

মাহবুবুর রহমান

রোহিঙ্গাদের জন্য তিনশ’ বেডের একটি আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে৷ সেখানেই আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হয়৷ আর তাদের নমুনা নিয়ে টেস্ট করানো হয় কক্সবাজারে৷ তবে যারা করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন তাদের আশ্রয় কেন্দ্রের বাড়িতেই রাখা হয়৷ তখন ওই এলাকা লকডাউন করা হয়৷ ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় ছোট ঘরে গাদাগাদি করে কিভাবে হোম কোয়ারিন্টিন সম্ভব? সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘আমরা চলাচল পুরো বন্ধ করে দিই৷ তারা যাতে ঘরে থাকেন তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করি৷ এর বাইরে আমাদের পক্ষে আর কী করা সম্ভব?’’

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসলে ক্যাম্পের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো উপায় নেই৷ নিজেরা যে নিজেদের সচেতন করবেন তারও কোনো উপায় নেই৷ আর মাইকিং করেও কোনো প্রচার করা হয় না৷ ইউনূস আরমান বলেন, ‘‘আমাদের যদি ইন্টারনেট চালু করে দেয়া হতো তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেরাই সচেতস হতে পারতাম৷’’

পুরো কক্সবাজার জেলায় এখন আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ২৭৫ জন৷ মারা গেছেন ২৫ জন৷ গত ২৩ মার্চ কক্সবাজারে প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়৷

এদিকে কক্সবাজার শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. এএইচ তোহা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ তিনি মোবাইল এসএমএসে জানিয়েছেন এখন বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন৷

গত বছরের সেপ্টেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান