1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউন তোলা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে বিতর্ক

৪ মে ২০২০

লকডাউন কি এখনই তোলা উচিত? এই প্রশ্নে বিতর্ক শুরু হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। অনেকেরই ধারণা, দ্রুত লকডাউন তুলে দিলে সংক্রমণ বাড়বে। অন্যপক্ষ চিন্তিত অর্থনীতি নিয়ে।

https://p.dw.com/p/3bjPa
ছবি: Reuters/L. Jackson

কাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে? অর্থনীতি, না কি মানুষের প্রাণ? বিশ্ব জুড়ে এটাই এখন সব চেয়ে বড় প্রশ্ন। করোনার প্রভাবে প্রায় গোটা বিশ্বেই লকডাউন জারি হয়েছিল। তার জেরে অর্থনীতি কার্যত ধসে পড়েছে। ফলে করোনার প্রকোপ না কাটলেও ক্রমশ লকডাউন তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। যা নিয়ে বিতর্কও চলছে যথেষ্ট। তবে এই মুহূর্তে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে অ্যামেরিকা।

সোমবার সকাল পর্যন্ত অ্যামেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১ লাখ ৮৮ হাজার জন। মৃত্যু হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৯৮ জনের। সংক্রমণের হার এখনও কমেনি। কিন্তু ট্রাম্প জানিয়েছেন, লকডাউন তুলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। বস্তুত, রবিবার থেকেই দেশের জনগণ রাস্তায় বেরোতে শুরু করেছেন। প্রতিবাদ সভায় মাস্ক ছাড়াই অংশগ্রহণ করেছেন। নিউ ইয়র্কের মতো করোনাপ্রবণ জায়গায় রোববার রৌদ্রস্নান করতেও বেরিয়ে পড়েছিলেন মানুষ। যা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন ডেবোরা বার্ক্স। হোয়াইট হাউসে করোনা টাস্ক ফোর্সের কো-অর্ডিনেটার তিনি। তাঁর বক্তব্য, এ ভাবে যদি জনগণ রাস্তায় বেরোতে শুরু করেন, তাহলে সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বস্তুত, এখনই লকডাউন হাল্কা করে দেওয়ার বিরুদ্ধেও জোড়ালো সওয়াল করেছেন ডেবোরা। ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, অর্থনীতি সচল রাখতে লকডাউন তুলতেই হবে। তবে কোথায় কবে কী ভাবে লকডাউন তোলা হবে, তার সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্যের গভর্নররা।

রোববার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, এ বছরের শেষের মধ্যেই করোনার টিকা বাজারে চলে আসবে বলে তিনি মনে করেন। তার আগে রেমডিসিভিয়ারের চিকিৎসায় সাড়া মিলেছে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি। সোমবার থেকে অ্যামেরিকার বিভিন্ন হাসপাতালে ওষুধটি দেওয়া হবে বলেও হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।

অন্য দিকে, মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও রোববার আবার বলেছেন, চীনের উহানের একটি পরীক্ষাগার থেকেই যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল তার যথেষ্ট প্রমাণ তাঁদের কাছে আছে। যদিও এখনও পর্যন্ত প্রমাণ প্রকাশ করতে চাইছে না অ্যামেরিকা। গত সপ্তাহের শেষে ডনাল্ড ট্রাম্পও একই কথা বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, উহানের পরীক্ষাগার থেকেই যে করোনা ছড়িয়েছে, সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। বেজিং পাল্টা আক্রমণও করেছিল। চীনের দাবি, নিজের দেশে করোনা পরিস্থিতি সামলাতে পারছেন না বলেই ট্রাম্প তাদের দিকে আঙুল তুলছেন। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অ্যামেরিকা এবং চীনের এই শব্দযুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছবে, তা বলা মুশকিল। অনেকেরই ধারণা, এ ভাবে আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ চলতে থাকলে তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে।

লকডাউন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেও। ধীরে ধীরে সেখানে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। তারই মধ্যে সিডনিতে এক স্কুল পড়ুয়ার করোনা ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছে, এত তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দিলে নতুন করে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি তৈরি হবে। ফলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। জার্মানিতেও স্কুল-কলেজ খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অ্যামেরিকা অবশ্য জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের আগে সেখানে স্কুল-কলেজ খোলা হবে না।

লকডাউন তোলা নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন দোলাচলে, তখন করোনা সংক্রমণ পেরিয়ে গেল ৩৫ লাখের গণ্ডি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার ১১১। মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার জনের। সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ৫৪ হাজার জন। কিন্তু চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, যে সব দেশে করোনা পরিস্থিতি সামান্য ভালো হয়েছে, সেখানে ফের ফিরে আসতে পারে এই মারণ রোগ। সম্প্রতি আফগানিস্তানে একটি জরিপ হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী কাবুলের এক তৃতীয়াংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবেন। বস্তুত, শুধু কাবুল নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই করোনা সংক্রমণ এখনও সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছয়নি বলে অনেকে মনে করছেন।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই, এপি)