1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘লোভ সংবরণ করতে না পারলে প্রতারণা চলতেই থাকবে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১ অক্টোবর ২০২১

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতারণা বা দুর্নীতির অধিকাংশই প্রযুক্তি নির্ভর৷ লাখ লাখ মানুষ সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছেন এই প্রতারণার ফলে৷ সবার চোখের সামনেই এই প্রতারণা হলেও আগে থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷

https://p.dw.com/p/415ij
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম
ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামছবি: DMP

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় কী করছে? এই ধরনের প্রতারণা রোধে তাদের দায়িত্বই বা কতটুকু? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম৷

সাম্প্রতিককালে আমরা দেখছি, যত প্রতারণার ঘটনা অধিকাংশই প্রযুক্তিনির্ভর৷ আপনারা এই প্রতারণার ঘটনায় কী করছেন?

মোহা. শফিকুল ইসলাম : প্রযুক্তি নির্ভর যে প্রতারণা তার নানা ধরণ আছে৷ ই-কমার্স একটা, লটারি জিতেছেন এইটা একটা, বলে ভুলে আপনার একাউন্টে টাকা চলে গেছে এরকম একটা, আরেকটা হল আপনার একজন নিকটজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে রক্ত লাগবে- এমন প্রতারণার ঘটনাগুলো যখন আমরা জানি তখন সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই৷ সম্প্রতি ই-কমার্স নিয়ে যে প্রতারণা হচ্ছে এটি আমাদের দেখার কথা না৷ মানুষ যখন প্রতারিত হয়ে আমাদের কাছে আসে, তখন আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেই৷ কে কোথা থেকে কী পণ্য কিনছে, কত দামে কিনছে? এই পণ্য বিক্রি করার এখতিয়ার তার আছে কি-না এগুলোর জন্য পুলিশ কোনভাবেই দায়বদ্ধ না৷ এর জন্য আলাদা বিভাগ আছে৷ তারা কাজ করে৷ মানুষ প্রতারিত হয়ে আমাদের কাছে এলে আমরা তখন ব্যবস্থা নিচ্ছি৷

‘আইনগতভাবে পুলিশকে কোন রেসপনসিবিলিটি দেওয়া হয়নি’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনিয়মের আশ্রয় নেন শিক্ষার্থীরা৷ এই অনিয়ম কীভাবে রোধ করা যায়?

প্রশ্ন ফাঁসের একটা চক্র ছিল৷ যেখানে প্রশ্ন ছাপা হয়, সেখান থেকেই এই দুর্নীতি বা অনিয়মের সূচনা ঘটে৷ প্রচুর টাকা পয়সার বিনিময়ে প্রশ্নগুলো বাইরে চলে যায়৷ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্লু টুথের মাধ্যমে প্রশ্নগুলোর উত্তর ক্লাস রুমে শিক্ষার্থীদের কাছে চলে যেত৷ এগুলোর ব্যাপারে এখন যারা পরীক্ষার হলে ডিউটি করেন তারাও যেমন সচেতন হয়েছেন, আবার এভাবে যারা বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিল তাদের ভর্তিও বাতিল হয়ে গেছে৷ বর্তমানে এই প্রবণতা বেশ কমেছে৷

সরকার কী চাইলেই যে কোন জায়গার ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে পারে? আপনারা কী কখনও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছেন?

এই ধরনের কোন সুযোগও নেই৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমরা চাইলেই ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে পারি না৷ প্রযুক্তিগত কোন সুযোগ নেই৷ জ্যামারের একটা সুযোগ আছে৷ সেটা খুব হাই পাওয়ার প্রযুক্তি এবং দামি প্রযুক্তি৷ এই প্রযুক্তিটা আমরা শুধু ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করি৷

যারা অনলাইনে ব্যবসা করছে, এদের তদারকিতে কি আপনাদের কিছু করণীয় আছে?

এ ব্যাপারে পুলিশকে কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি৷ আইনগতভাবে পুলিশকে কোন রেসপনসিবিলিটি দেওয়া হয়নি৷

অনলাইনে তো লাখ লাখ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে, এখানে আপনাদের নজরদারি করার সুযোগ আছে কি?

আগে তো আমাকে আইনগতভাবে অধিকারটা দিতে হবে৷ আমি আপনার একাউন্টে ঢুকব, আমি আপনার ব্যাংক একাউন্ট চেক করব, আপনি কি কিনছেন, কি বিক্রি করছেন সেটা দেখার ক্ষমতা তো আইন আমাকে দেয়নি৷

অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর তো আপনারা হস্তক্ষেপ করতে পারেন?

অপরাধ হওয়ার পর আমাদের কাছে তারা আসছে৷ আমরা প্রতারণার মামলা নিচ্ছি৷ এটা খুবই সাধারণ একটা মামলা৷ কিন্তু এখানে যে লাখ লাখ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন, রাস্তায় বসে যাচ্ছেন এগুলো দেখার আলাদা কর্তৃপক্ষ আছে৷ যেমন ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষ আছে, প্রতিযোগিতা কমিশন আছে, মন্ত্রণালয় আছে, এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক আছে৷ তারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমতি দিচ্ছে৷ মনিটরিংটা তো তারা করবে৷ এখানে পুলিশকে আইনগতভাবে কোন ক্ষমতা দেওয়া নেই৷

প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে প্রতারণা, অনিয়ম তা নিয়ে তো পুলিশের কাছে বহু অভিযোগ৷ এগুলোর সুরাহা আপনারা কীভাবে করছেন?

আমাদের কাছে যে অভিযোগ আসে, তার ন্যূনতম একটা সংখ্যার মামলা হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী যারা আমাদের কাছে আসেন তারা মামলা করতে চান না পারিবারিক, সামাজিক মর্যাদার কারণে৷ সেক্ষেত্রে আমরা যিনি ভিকটিম তার কথা শুনে অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা ডিবিতে ধরে নিয়ে আসি৷ কখনও কখনও অভিভাবককে ডেকে আনি৷ এভাবে সুরাহার চেষ্টা করি৷ যখন এভাবে হয় না, তখন আমরা মামলা নিয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসামী গ্রেফতার করে ব্যবস্থা নেই৷  

ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে সিকিউরিটির দায়িত্ব কার? আপনারা কি এগুলো দেখেন?

আমরা এগুলোর কিছু দেখি না৷ এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে হয়৷ এটার জন্য হয়ত সরকারের অন্য সংস্থা কাজ করে৷ কে কত টাকা লেনদেন করল সেটা আমরা দেখি না৷ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেজিন্ট ইউনিট থেকে যখন সিআইডিতে কিছু জানানো হয় যে, অস্বাভাবিক লেনদেন হচ্ছে, তখন তারা সেটার তদন্ত করে৷ এর বাইরে সাধারণ পুলিশী কার্যক্রমে এটা দেখার সুযোগ নেই৷ 

বিভিন্ন সময় আলোচনাও হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইটি অডিট হওয়া উচিৎ৷ আপনারা কি এ ব্যাপারে কখনও কোন সুপারিশ করেছেন?

যেহেতু এটা দেখারই এখতিয়ার পুলিশের নেই, তাহলে আমি কোথা থেকে সুপারিশ করব? আইনগত কোন ক্ষমতাই আমার নেই৷ কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন যে, তিনি প্রতারিত হয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাহলে আমরা মামলা নিয়ে তদন্ত করতে পারি৷ এর বাইরে করার কিছু নেই৷

যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনিয়ম বা দুর্নীতি করছে, তাদের অনেককেই তো আপনারা গ্রেফতার করেন, এরা জামিনে বেরিয়ে আবারও একই কাজ করছে কি-না সেটা কি তদারক করেন?

আমাদের দেখার সুযোগ খুবই কম৷ এই ধরনের ঘটনা তো শত শত ঘটে৷ এই ধরনের শত শত মানুষের উপর নজরদারি করার সক্ষমতা আমাদের নেই৷

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আপনার পরামর্শ কী?

যিনি প্রতারিত হচ্ছেন, তিনি যদি লোভটা সংবরণ করতে পারেন তাহলে তিনি এটা থেকে বের হতে পারবেন৷ মানুষের সর্বব্যাপী লোভটাই এদের কোম্পানি খুলে প্রতারিত করার জন্য প্রলুব্ধ করেছে৷ ব্যাংকে টাকা রাখলে সুদ পাওয়া যায় ৫ শতাংশ৷ আর এখানে আপনি তিন লাখ টাকার পণ্য কিনছেন এক লাখ টাকায়, রাতারাতি দুই লাখ টাকা লাভ করবেন? স্বপ্ন দেখছেন আপনি কোটিপতি হয়ে যাবেন? লোভ সংবরণ করতে না পারলে এই প্রতারণা চলতেই থাকবে৷ মানুষ সচেতন না হলে প্রতারিত হতেই থাকবে৷

অনেকেই তো লোভ না করেও প্রতারিত হচ্ছেন৷

প্রতিনিয়ত তো পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, এগুলো থেকে সাবধান৷ মানুষ যদি সচেতন থাকে তাহলে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ বা প্রতারণা থেকে দূরে থাকা সম্ভব৷