1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শস্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের প্রভাব

১ মে ২০১৭

বাংলাদেশ খাদ্য শস্য থেকে সবুজ জ্বালানি তৈরির পরিকল্পনা করছে৷ কিন্তু অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে, কেননা দেশের চাহিদা মেটাতে এখনও খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়৷

https://p.dw.com/p/2cBT3
Maiskolben
ভুট্টা থেকে ইথানল উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকারছবি: Getty Images/AFP/P. Huguen

জ্বালানি মন্ত্রণালয় এ বছরের শুরুতে সবুজ জ্বালানি উৎপাদন সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করে৷ সেখানে বলা হয় ভুট্টা, ভাঙা চাল বা গুড়ের সঙ্গে ৫ ভাগ অনুপাতে পেট্রোল মিশিয়ে ইথানল উৎপাদন করা হবে৷ কিন্তু পরিবেশবিদ, অর্থনীতিবিদ ও অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর ফলে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে৷ ফলে দরিদ্রদের জন্য গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে৷

বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প সহযোগিতা কমিটির মুখপাত্র মশিউর রহমান শস্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন৷ তাঁর মতে, ভুট্টা মুরগী ও গবাদি পশুদের প্রধান খাদ্য৷ কিন্তু বাংলাদেশে চাহিদার অর্ধেক ভুট্টা উৎপাদিত হয় এবং বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল থেকে আমদানি করতে হয়৷ মশিউর এক সেমিনারে বলেন, ‘‘ইথানল উৎপাদন শুরু হলে ভুট্টার দাম আরও বেড়ে যাবে৷ ফলে ডিম এবং মুরগির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে৷’’

খাদ্য থেকে জ্বালানি:

বাংলাদেশের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, বছরে ১ কোটি ৮০ লাখ লিটার ইথানল উৎপাদন করা সম্ভব৷ তবে এজন্য প্রতি বছর ৬০ হাজার টন চাল ভাঙতে হবে, যা দেশের মোট উৎপাদনের ৩.৫ ভাগ৷ চালের বিকল্প হিসেবে বছরে ভুট্টা লাগবে ৬২ হাজার টন, যা মোট উৎপাদনের ২.৮ ভাগ এবং গুড়ের ক্ষেত্রে ৯৭ হাজার টন, যা মোট উৎপাদনের সমান৷

সরকার পক্ষের বক্তব্য:

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ টেলিফোনে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের দিকে ঝোঁকা উচিত, দেশের যে পরিস্থিতি তাতে সবুজ জ্বালানির বিকল্প নেই এবং অন্যান্য দেশের মতো ভিন্ন ধরনের জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করা উচিত৷’’ জ্বালানি মন্ত্রণালয় যে ইথানল তৈরির পরিকল্পনা করছে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করেন তিনি৷ জানান, অনুমোদন পেলেই তারা বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা করবেন৷

বিশেষজ্ঞের মত:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্ত্রণালয় দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার কথা না ভেবেই খাদ্য শস্য পুড়িয়ে ইথানল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তারা বলছেন, গত বছর গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের অন্যতম ক্ষুধার্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ ২৫তম স্থানে ছিল৷ দেশের অনেক মানুষ এখনও প্রতিদিন দু’ বেলা পেট ভরে খেতে পায় না৷ এছাড়া দেশে খাদ্রদ্রব্যের দাম বেড়েই চলেছে৷ মানুষের আয়ের একটা বড় অংশ খরচ হয় খাদ্যে৷ ফেব্রুয়ারিতে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল রেকর্ড ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, গত বছর যা ছিল প্রায় এর অর্ধেক, ৩ দশমিক ৮ শতাংশ৷

খাদ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে চাহিদার চেয়ে বেশি ধান হয়৷ কিন্তু বাকি খাদ্য শস্যের চাহিদা পূরণে গত বছর ৪৫ লাখ টন গম রপ্তানি করা হয়েছে৷

ভুল সিদ্ধান্ত?

সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সুনিপুন অর্গানিক লিমিটেড, যারা ইথানল উৎপাদনের জন্য প্রথম আবেদন করেছে৷ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মো. আফতাব উদ্দীন জানালেন, ‘‘খাদ্যশস্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের ফলে তা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে না, কেননা, জ্বালানি উৎপাদনের পাশাপাশি যেসব উদ্বৃত্ত জিনিস থাকবে, তা পোলট্রি বা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হবে৷’’ অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা মো. মঈনুদ্দীন আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘‘ভুট্টা দিয়ে জ্বালানি তৈরির কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছি না, কেননা, এই ভুট্টা আমাদের আমদানি করতে হয়৷’’

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন আলোচক টিমের সদস্য মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘‘গবাদি পশুদের পুষ্টি নিয়ে আমাদের এখনই অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷ তাই ভুট্টা থেকে ইথানল উৎপাদন হলে এসব প্রাণি পুষ্টিহীনতায় ভুগবে৷ এটা একেবারেই একটা ভুল সিদ্ধান্ত৷’’

সেন্টার ফর পলেসি ডায়লগ এর গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে বলেন, ‘‘ইথানল উৎপাদন একবার শুরু হলে এর চাহিদা বাড়তেই থাকবে, জ্বালানির দামের পাশাপাশি এর দাম বাড়বে, ফলে আরও খাদ্যশস্যের প্রয়োজন হবে৷ ফলে পশু খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে৷’’

এপিবি/এসিবি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...