1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শহরে বসে গ্রামের স্বাদ

আজিজ হাসান
১৫ অক্টোবর ২০১৮

বাঁশের মাচায় গড়িয়েছে পুঁইয়ের ডগা, লাউয়ের কচি পাতায় সবুজের হাতছানি, ঝুলছে বাড়ন্ত লাউ, গাছে গাছে লেবু, দৃষ্টি সরালেই চোখ আটকায় রক্ত গোলাপে, পাশে রয়েছে নীলাভ, সাদা, হলুদসহ বাহারি রংয়ের মন মাতানো নানা ফুল৷

https://p.dw.com/p/36XD0
Bangladesch Dachgarten in Dhaka
ছবি: Camelia Mousumi

এই দৃশ্য আমাদের পরিচিত বড় পরিসরের কোনো বাগানের নয়, এটি ঢাকার একটি ছাদ বাগান৷ মিরপুর ১৪ নম্বরের সরকারি আবাসিক এলাকার একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদে ফুল, ফল, সবজি ও ঔষধি গাছের এই বাগান গড়ে তুলেছেন শাহানাজ মোস্তফা নামের একজন গৃহিণী৷ মনের সুখ মেটানোর এই সৌখিন প্রয়াসে তিনি পাশে পেয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী মো. গোলাম মোস্তফা খানকে৷  

ঢাকা শহরে ভেজাল খাবার, সার-ওষুধে ভরা শাক-সবজি নিয়ে প্রায়ই অনেককে খেদ প্রকাশ করতে দেখা যায়৷ ছোট শিশু সন্তানকে বিশুদ্ধ খাবার দিতে না পারার মনঃকষ্ট পোড়ায় আমাকেও৷ তবে খেদ নিয়ে বসে থাকেননি শাহানাজ৷ পঞ্চাশের কোটায় পা রাখা এই নারী তিন ছেলে-মেয়ে বড় হওয়ার পরই অবসরের সময়টা দিয়েছেন গাছের পেছনে৷ সন্তানতুল্য মমতায় তিনি তৈরি করেছেন একেকটি গাছ, যেগুলো এখন ভরে উঠেছে ফুলে-ফলে৷ বাগানের শাক-সবজিতেই চলে যায় সংসার৷ শহরবাসীর কাছে প্রিয় অ্যালোভেরার চারা বিক্রি করে তিনি পেয়ে যান বাগান খরচ৷

শাহানাজের এই বাগানের শুরু ২০১৪ সালে৷ নিজের এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের উপরের ছাদটিকে তিনি বেছে নেন৷ সৌন্দর্যপিপাসু মানুষটি লাগানো শুরু করেন ফুল ও পাতাবাহারের গাছ৷ কিছু চারা কিনে, কিছু অন্যের কাছ থেকে চেয়ে, কিছু কুড়িয়ে এনে তৈরি করেন গোলাপ, অপরাজিতা, নয়নতারা, চাঁপা, টাইমফুল, বেলী, ডালিয়া, জবা, ঘাসফুলসহ নাম না জানা অনেক ফুল ও পাতাবাহারের বহর!

Bangladesch Dachgarten in Dhaka
বাগানে কাজ করছেন শাহানাজ মোস্তফার স্বামী গোলাম মোস্তফা খান৷ছবি: Camelia Mousumi

তাঁর ছাদ যখন ফুলে ফুলে ভরে ওঠে, সেই সাফল্য তাকে টেনে নিয়ে যায় সামনের দিকে৷ ঘরের বাতিল প্লাস্টিকের কৌটা, তেলের ড্রাম, পানির ড্রাম, দইয়ের শানকিতে লাগানো শুরু করেন পুঁইশাক, আলুশাক ও কলমিশাক৷ একইসঙ্গে শাহানাজ মন দেন সবজি চাষে, ছোট ছোট বোতলে লাগান ঢেঁড়স, বেগুন, কাঁচামরিচের চারা৷ বড় ড্রামে দেন লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া গাছ৷ বাঁশের মাচা বানিয়ে লতাগুলোকে গড়িয়ে দেন সেগুলোর উপরে৷ জায়গার স্বল্পতার কারণে মাথার উপরে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে দেন শিম, ধুন্দল, ঝিঙে আর শশার কচি ডগা৷ মাথার উপর দিয়ে ঝুলে থাকে তাঁর শখের সবজিগুলো৷ সেখানে শোভা পায় বাগানবিলাস, কুঞ্জলতা ও অপরাজিতা ফুলও৷

ফুল যেখানে আছে, সেখানে ফল থাকবে না, তাই কি হয়? আম, লিচু, পেয়ারা, লেবু খেয়ে তার বীজ পুঁতে রাখতেন মাটিভরা বস্তায়, সেই থেকে জন্ম নেওয়া গাছের অনেকগুলোই এখন ফল দিচ্ছে৷ গাছ ভরতি হয়ে আছে দেশি পেয়ারা, পেঁপে, করমচা, আমলকি ও কামরাঙায়৷ তিনি এখন অপেক্ষায় আছেন আম, সফেদা, মাল্টা ও আঙুর ফলনের৷

বাগানের তিন-চারটি গাছে ধরেছে লেবু৷ তার পাশেই গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচামরিচ আর ক্যাপসিকাম৷ পেকে হলুদ রঙ নিয়েছে ক্যাপসিকামগুলো৷ বড় গাছের মাচার নীচটাও খালি নেই৷ বড় বড় বাঁশের ঝুড়িতে শোভা পাচ্ছে ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, থানকুনি পাতা৷

জমি নেই? ফসল ফলান ছাদে

ছাদবাগানে রয়েছে অসংখ্য অ্যালোভেরা গাছ৷ ঔষধি এই গাছের ফলনও খুব বেশি৷ নার্সারি মালিকরা এখান থেকে কিনে নিয়ে যান চারা৷ দাম দেন প্রতিটির ১০-১৫ টাকা৷ সেই টাকা দিয়েই নতুন নতুন ফুল-ফলের চারা কিনে আনেন তিনি৷ ছাদেই গাছে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শাহানাজের স্বামী মোস্তফা৷ পানির লাইনের পাশেই লাগানো হয়েছে কচু৷ দিনে দুইবার স্বামী-স্ত্রী মিলে পানি দেন গাছগুলোতে, করেন আগাছা পরিষ্কার৷

সার-ওষুধ এড়াতে প্রাকৃতিক নিয়মেই চলে তাদের ছাদকৃষি৷ গোবর শুকিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে গাছের জন্য মাটি প্রস্তুত করেন৷ ছাই, ডিমের খোসা দিয়ে কীটপতঙ্গ থেকে গাছ রক্ষা করেন তাঁরা৷ প্রতিদিনের রান্নার সবজির খোসা, ফলের খোসা, চাল, ডাল ধোয়া পানিই তাঁদের গাছের সার৷

আজিজ হাসান, ডয়চে ভেলে
আজিজ হাসান, ডয়চে ভেলেছবি: Privat

শাহানাজ-মোস্তফার এই ছাদকৃষি মন কেড়েছে প্রতিবেশীদের৷ প্রায়ই এই বাগান দেখতে আসেন তাঁরা৷ আসেন কৃষি কর্মকর্তারাও৷ ছবি তুলে নিয়ে যান৷ ডাকেন প্রশিক্ষণ দিতে, সম্মানিও দেন তাঁদের৷

শাহানাজের মতো ঢাকার বাসিন্দাদের আরো অনেকেই নিজের বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন এমন বাগান৷ যাঁদের ছাদ নেই, সেই সব সৌখিন মন ঘরের বারান্দায় গড়ে তোলেন নিজস্ব ভুবন৷ এক্ষেত্রে বনসাই গাছ বেছে নেন অনেকে৷ ফুল-ফলের গাছ লাগিয়ে মনের ক্ষুধা মেটান তাঁরা৷ 

ছাদের বাগানে সবজি, একতলায় মাছের চাষ

ইট-কাঠ আর দালানে ঠাসা ঢাকা শহরে সবুজের অভাব মেটাতে ছাদকৃষিকে বেছে নিতে পারেন অন্যরাও৷ অবসর সময়ের শ্রমে সবুজ আর ফুলের সৌন্দর্যে মনের চাহিদা মেটার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ হবে পরিবারের প্রিয়জনদের স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদাও৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য