1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শিল্পীরা সচেতন না বলেই প্রাপ্য সম্মানী বঞ্চিত হন’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৬ ডিসেম্বর ২০১৯

শিল্পীদের একসময় সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য, চিকিৎসার খরচের জন্য হাত পাততে হচ্ছে৷ সারা জীবন উপার্জনের পরও কেন এমন হচ্ছে? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম৷

https://p.dw.com/p/3UJ8d
প্রতীকী ছবিছবি: Colourbox/A. Dean

ডয়চে ভেলে : কপিরাইট আইনটা আসলে কি?

ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম : মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক যে কাজগুলো হয়, আমরা যেটাকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বলি, এর কয়েকটি ভাগ আছে৷ তার মধ্যে কপিরাইট একটি৷ এই কপিরাইট দ্বারা সাহিত্যকর্মে আইনের প্রোটেকশন দেওয়া হয়৷ কারো সাহিত্যকর্ম যেন অন্য কেউ চুরি করতে না পারে বা কপি করলে তার কপির জন্য যেন ফি দেওয়া হয়, সেটাকেই আমরা কপিরাইট বলছি৷

এই আইনটার কি সঠিক প্রয়োগ আছে?

বাংলাদেশে কোনো আইনেরই সঠিক প্রয়োগ নেই৷ কপিরাইটও এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম নয়৷ এখানে ২০ বছর আগে এই আইনটি করা হয়৷ কম্পিউটার সফটওয়্যারের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে এই আইনটি এখন ইরেলেভেন্ট হয়ে গেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য৷ এই আইনটি যে পরিমাণ প্রয়োগ হওয়া উচিৎ, সেটা হচ্ছে না বা কখনোই করা হয়নি৷ 

‘‘শিল্পীরা কপিরাইটের বিষয়ে সচেতন না’’

এই আইনের কারণে শিল্পীরা কি সঠিকভাবে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন?

শিল্পীরা সঠিক সুবিধা পাচ্ছেন, আমি বলবো না৷ কপিরাইটের অনেকগুলো ক্ষেত্র আছে৷ একজন উপন্যাসিক যখন একটা উপন্যাস লেখেন, সেটা কিন্তু কপিরাইট কর্ম৷ একইভাবে একজন শিল্পী যখন তার গান রেকর্ড করে বাজারে ছাড়েন, সেটিও কপিরাইট কর্ম৷ কেউ একটি মিউজিক যদি বাজারে ছাড়েন, সেখানেও কপিরাইটের ইস্যু আছে৷ ওই গানটার জন্য গীতিকার, সুরকার বা শিল্পী সবারই কপিরাইট আছে৷ এটা কিন্তু আমাদের আইনে স্বীকৃতি দেওয়া আছে৷ এদের কেউই কিন্তু কপিরাইটের প্রকৃত সম্মানী পান না৷ এখানে সুরকার বা গীতিকারকে নামমাত্র মূল্য দিয়ে এবং শিল্পীকে দিয়ে সাইন করিয়ে মিউজিক স্টুডিওগুলো কপিরাইট কিনে নেয়৷ পরে তারা এটা দিয়ে ব্যবসা করে৷ বিশেষ করে ইউটিউবের প্রচলন হওয়ার পর থেকে শিল্পীরা তাদের সচেতনতার অভাবে কপিরাইটের প্রাপ্য সম্মানী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷

কেন তারা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না?

অনেকগুলো কারণ আছে৷ একটা কারণ আমি বলি, আমাদের যেসব শিল্পী আছেন, তারা কপিরাইটের বিষয়ে সচেতন না৷ তারা কখনোই সংগঠিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কোনো পদক্ষেপ নেননি৷ সম্প্রতি আমরা দেখেছি, শিল্পীদের পক্ষে একটি সংগঠনের অনুমতি সরকার দিয়েছে, যারা শিল্পীদের পক্ষ থেকে কপিরাইটের বিষয়গুলো দেখবে৷ আইনেও সে সুযোগ তাদের রয়েছে৷ বাস্তবে তাদের কার্যক্রমে কোনো প্রতিফলন আছে বলে আমার মনে হয় না৷ থাকলে এখন আমাদের এটা নিয়ে আলোচনা করতে হতো না৷ শিল্পীরা যে প্রাপ্য সম্মানী পাচ্ছেন না তার এক নম্বর কারণ আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না৷ পাশাপাশি যে সংগঠন হয়েছে পারফরমিং আর্ট সোসাইটি, তাদের যে কাজগুলো করা দরকার, সেগুলো তারা করছে না৷

এই আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার?

এই আইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বিভিন্ন ধরনের মানুষের৷ যেমন ধরুন, একজন শিল্পী একটি গানের পর মিউজিক স্টুডিওর সঙ্গে যে চুক্তি করলো সেখানে তার কপিরাইট কতটুকু বাস্তবায়িত হলো সেটা তাকে দেখতে হবে৷ আবার এটা যখন ব্যাপকহারে পাইরেসি হয়, তখন এটা দেখার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর৷ পাশাপাশি কপিরাইট রেজিষ্ট্রেশন যে অথরিটি আছে, তাদেরও দেখার দায়িত্ব৷

কপিরাইট আইন বাস্তবায়নে কী করা প্রয়োজন?

এর যারা স্টেকহোল্ডার আছেন, তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে৷ পাশাপাশি আইনটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা যে সম্মিলিত সংস্থার কথা বলছি, সেই সংস্থার কাজকে বেগবান করতে হবে৷ শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মানী আদায়ের ব্যবস্থা করাও তাদের দায়িত্ব৷ একটা উদাহরণ দেই৷ রেডিও বা টিভিতে একজন শিল্পীর যে গান বাজছে, সেটা যদি ওই শিল্পীর অনুমতি না নিয়ে বাজানো হয়, তাহলে এটা কিন্তু কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন৷ এখন প্রত্যেক শিল্পীর পক্ষে তো এটা বের করা সম্ভব না, কোথায় তার গান বাজছে৷ এই কারণে ওই সংস্থার কথা বলছি, তারা সেটা দেখবে এবং শিল্পীকে প্রাপ্য সম্মানী আদায় করে এনে দেবে৷ 

শিল্পীদের সঙ্গে হওয়া এই অন্যায়ের প্রতিকার কিভাবে পাওয়া যেতে পারে?

এটার প্রতিকারে শিল্পীদেরই এগিয়ে আসতে হবে৷ আজ পর্যন্ত কোনো শিল্পীকে এসে বলতে দেখলাম না, আমার কপিরাইট এভাবে ভায়োলেশন হয়েছে, আমি এর প্রতিকার চাই৷ দু-একটা ঘটনা আমরা জানি, মাইলসের কয়েকজন শিল্পী গ্রামীণফোন ও রবির বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ ওই মামলাগুলো আবার এমনভাবে ফ্রেম করা হয়েছে, যাতে প্রকৃতপক্ষে স্ট্রাকচারিংটা হয়নি৷ শিল্পীদের নিজেদের উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থাটা নিতে হবে৷ তাদের কাজ অন্য কেউ করে দেবে না৷

আমরা প্রায়শই দেখি, নামি শিল্পীরাও শেষ জীবনে অর্থকষ্টে ভূগছেন৷ পরিত্রাণের পথ কী?

এর বিভিন্ন কারণ আছে৷ এক. একজন শিল্পী যখন গানের জন্য স্টুডিওর সঙ্গে চুক্তি করেন, তখন তারা এককালীন পেমেন্ট নিয়ে পুরো গানটাই দিয়ে দেন স্টুডিওকে৷ শিল্পীরা যদি আরেকটু বুদ্ধিমান হতেন, তাহলে তারা একবারে টাকা না নিয়ে প্রতিবার প্লে'র জন্য তার সম্মানী চাইতে পারতেন, যেটা পৃথীবির অন্যান্য দেশে হয়৷ ওইসব দেশে কিন্তু পারফর্মিং আর্ট সোসাইটটি স্টুডিওর সঙ্গে শিল্পীর নেগোসিয়েশনের কাজটা করে৷ আমি একটা উদাহরণ দিতে পারি৷ মাইকেল জ্যাকশন৷ তিনি তো মারা গেছেন৷ অথচ তার পরিবার এখনো তার গানের কপিরাইট রয়্যালিটি পাচ্ছেন, কারণ, উনি কিন্তু একবারে টাকা নেননি৷ উনি প্রতিবার প্লে'র জন্য সম্মানীর চুক্তি করে গেছেন৷ একবারে টাকা নিলে আজ তার পরিবার কোনো সম্মানী পেতো না৷ আমাদের দেশের শিল্পীরা এই বিষয়ে অবগত না৷ তাই তারা একবারেই স্টুডিওর কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন৷

তাছাড়া আমি বলব, শিল্পীরা মানি ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে খুবই অদক্ষ৷ শিল্পীরা শিল্পী থাকা অবস্থায় যে উপার্জন করে, সেটার প্রোপার ইউটিলাইজেশন করতে পারেন না দেখে ভবিষ্যতের জন্য কিছু সঞ্চয় রাখেন না৷ যখন ভালো আছেন, তখন প্রচুর উপার্জন করে খরচ করে ফেলছেন৷ আবার যখন আপনার ভালো কাজ নেই, তখন আপনার হাতেও কোনো টাকা নেই৷ অন্যান্য পেশায় কিন্তু এমন দেখা যায় না৷ এটাও যদি অ্যাভয়েড করতে হয়, তাহলে সম্মিলিত পদক্ষেপের বিকল্প নেই৷ তা না হলে যখন স্বর্ণযুগ থাকবে, তখন রাজারহালে থাকবেন, আর অবস্থা যখন পড়তির দিকে, তখন রোজগার কমতে কমতে একসময় মানুষের কাছে হাত পাততে হবে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷