1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুদের বাতরোগ

গুডরুন হাইসে/আরবি১৭ নভেম্বর ২০১২

বড়দের মতো শিশুরাও অনেক সময় বাতরোগে আক্রান্ত হয়৷ এই অসুখটি শনাক্ত করা সহজ নয়, চিকিৎসাও দুরূহ৷ আর ছোটদের বাত হলে ব্যাপারটা আরো জটিল হয়ে পড়ে৷

https://p.dw.com/p/16kpj
Rheuma bei Kindern HOCH
ছবি: Kinderklinik Garmisch-Partenkirchen

বাত বা জুভেনাইল ইডিওপেথিক আর্থরাইটিস হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে অস্থিসন্ধি বা হাড়ের সংযোগস্থল ফুলে যায় ও একটানা দীর্ঘ দিন ধরে ব্যথা চলে৷ সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে এই রোগ দেখা দিলেও ছোটরাও এই রোগটির হাত থেকে উদ্ধার পায় না অনেক সময়৷

বাচ্চারা সাহসী রোগী

‘‘বাচ্চারা খুব সাহসী রোগী৷ শুধু বাত নয়, অন্যান্য অসুখ হলেও এটা লক্ষ্য করা যায়৷ ছোটদের ছোট করে দেখা হয় প্রায়ই৷'' বলেন প্রফেসর ইওহানেস পেটার হাস৷ গার্মিশ পার্টেনকিয়র্শেন শহরে শিশু ও কিশোরদের বাতরোগ সংক্রান্ত ক্লিনিকের প্রধান তিনি৷ এই বিশেষ ক্লিনিকটি স্থাপিত হয় ৬০ বছর আগে৷ জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত বাতরোগের প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ক্লিনিক এটি৷ চিকিৎসার বিভিন্ন শাখার মধ্যে সমন্বয় করে থেরাপি দেয়া হয় এই ক্লিনিকে৷ বাতরোগ বিশেষজ্ঞ, ফিজিও থেরাপিস্ট, সমাজকর্মী, মনস্তত্ববিদ ও শিক্ষাবিদ, এরা সবাই মিলে ছোট রোগীদের চিকিত্সা ও দেখাশোনা করেন৷ জার্মানিতে প্রায় ৪০ হাজার শিশু ও কিশোর নানা ধরনের বাত রোগে ভুগছে৷ এদের অর্ধেকই অস্থিসন্ধির দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণে আক্রান্ত হয়৷

বাত রোগ সাধারণত হাঁটু, হাত ও পায়ের জোড়ায় দেখা দেয়৷ বাত রোগের উত্পত্তি কী ভাবে, তা সুস্পষ্ট জানা যায়নি৷ এটা একটা অটো ইমিউন রোগ, অর্থাৎ শরীরের প্রতিরোধ শক্তি নিজেই নিজেকে আক্রমণ করে বসে৷ প্রথমে অস্থিসন্ধির ওপরের ত্বক আক্রান্ত হয়, এরপর কার্টিলেজ বা উপাস্থি পরিশেষে আক্রান্ত হয় অস্থি৷ বলেন প্রফেসর হাস৷ অসুখটা যাতে এই অবস্থায় পৌঁছাতে না পারে, সেটাই থেরাপির মূল লক্ষ্য৷

Rheumatiker Fabio Wagner beim Angeln Bildunterschrift: Rheumakind Fabio Wagner Bildbeschreibung: Rheumakind Fabio Wagner beim Angeln Copyright: Frank Wagner, Hürth Rechte geklärt mit Gudrun Heise
ফাবিও ভাগনারছবি: Frank Wagner

আক্রান্ত হয় নানা অঙ্গপ্রতঙ্গ

কিছু বাচ্চার ক্ষেত্রে শরীরের বিভিন্ন স্থান আক্রান্ত হয়৷ সংখ্যাটা পাঁচের অধিক হলে বলা হয় পলিআর্থরাইটিস৷ পাঁচের কম হলে বলা হয় ওলিগোআর্থরাইটিস৷ অনেক সময় খুব অল্প বয়স থেকেই শুরু হয় বাত রোগ৷ এর ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চোখের স্নায়ু আক্রান্ত হয়ে অন্ধত্বের আশঙ্কাও দেখা দেয়৷ যেমনটি হয়েছে ফাবিওর ক্ষেত্রে৷ মাত্র তিন বছর বয়সে বাতরোগ শনাক্ত করা হয় তার দেহে৷ তখন বা হাঁটু ফুলে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল ফাবিওর৷ বাবা ফ্রাঙ্ক ভাগনার জানান, ‘‘মনে প্রশ্ন জাগে, কেন ওকে এবং এত অল্পবয়সে আক্রমণ করলো অসুখটি৷ রোগ নির্ণয়ের পর বিরাট এক আঘাত লাগে৷ ডাক্তারদের রোগটি শনাক্ত করতেও অনেকদিন লেগে গিয়েছিল৷''

কাঁধ, পা, হাতের কব্জি ও চোয়ালে বাত দেখা দেয়৷ হাঁটুর দুই দিক এবং নিতম্বও আক্রান্ত হয়েছে৷ ফাবিওর বয়স আজ ১৫ বছর৷ সে প্রযুক্তিবিদ হতে চায়৷ সমবয়সীদের মতই সে তার রোগ, হাসপাতাল, ইনজেকশন, থেরাপি ইত্যাদি সম্পর্কে এমনভাবে কথা বলে যেন সর্দিকাশি হয়েছে৷

চলাফেরায় অসুবিধা

সংক্রমণের ফলে হাড়ের সংযোগস্থল ফুলে গিয়ে গরম হয়ে যায়৷ এতে আবার চলাফেরায় বাধার সৃষ্টি হয়৷ এই মুহূর্তে ফাবিওকে হাঁটতে হয় ক্র্যাচে ভর দিয়ে৷ কেন না অল্প কিছুদিন আগে তার হাঁটুতে অপারেশন করা হয়েছে৷ তিন মাস তার খেলাধুলা করা নিষেধ৷ সাইকেল চালানো ও সাঁতারে বাধা নেই৷ কারণ এতে হাঁটুর ওপর তেমন চাপ সৃষ্টি হয় না৷ ফুটবল ও বাস্কেট বল খেলার দিকে ঝোঁক রয়েছে ফাবিওর৷ অবশ্য অসুখের জন্য এই সব খেলা তার পক্ষে সম্ভব নয়৷

বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় বলে স্কুলেও নিয়মিত যাওয়া হয় না ফাবিওর৷ আগে সহপাঠীরা হাসি ঠাট্টা করতো তাকে নিয়ে৷ অবশেষে বাবা এক সমাজকর্মীকে নিয়ে ছেলের অসুখের ব্যাপারে এক ধরনের তথ্যপ্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন৷ এরপর বন্ধুবান্ধদের একটা ধারণা হয় ফাবিও'র রোগটা সম্পর্কে৷

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা

বাচ্চাদের বাত হলে ব্যথা কমানোটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ বলেন প্রফেসর হাস৷ এছাড়া ফিজিওথেরাপির ওপর বিশেষ জোর দিতে হয়, তা নাহলে বাতের চিকিৎসা ঠিক মত হলেও চলাফেরায় অসুবিধা থেকে যায়৷ ওলিগোআর্থারাইটিসে আক্রান্ত হলে বয়ঃসন্ধিকালে তা সম্পূর্ণ ভালও হয়ে যেতে পারে৷ পরবর্তীকালে এই রোগটা আর টানতে হয় না বাচ্চাদের৷

শিশুদের বাতরোগের ক্লিনিকে সমবয়সীদের সঙ্গে মিলিত হতে পারে ছোট রোগীরা৷ সবারই একই ধরনের সমস্যা৷ এর ফলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় তাদের৷ নিজেদের আর একা বা অবহেলিত বলে মনে করে না তারা৷ এই অসুখটি এমন এক সময় আক্রমণ করে, যখন বাচ্চাদের শারীরিক বর্ধনের সময়৷ শিশু রোগীদের মনোবল চাঙা রাখার দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়৷ বলেন প্রফেসর হাস৷ তাঁর ভাষায়, আমাদের এখানে বিরাট এক ‘ক্লাইম্বিং ওয়াল' রয়েছে৷ অনেকে প্রশ্ন করেন, বাতের ক্লিনিকে এটা দিয়ে কী হবে? কিন্তু দুই সপ্তাহ থেরাপির পর, ছয় মিটার উঁচু খাড়া প্রাচীরটি বেয়ে একেবারে ওপরে উঠে যেতে পারলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় শিশু রোগীদের৷ তাই তো কেউ কেউ বলে ওঠে, ‘‘আমার বাত আছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি অনেক কিছু পারি৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য